google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re শর্মিষ্ঠা বিশ্বাসের অণুগল্প - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাসের অণুগল্প

 শনিবার 
  ********  

 শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস


 প্রতিটা শনিবার আমার কাছে মহার্ঘ,এটুকু বলতেই আমি রিমিকে বললাম- বুঝেছি।পল্টু আসে তো? কবে থেকে পল্টু রিমি'র ছেলে হয়ে উঠেছে, একথা আমার জানা। সেই সেবার, যেবার আমরা উত্তরণ সেবা সোসাইটি থেকে ব্যাসপুর গ্রামে হেল্থ ক্যাম্প করতে গিয়েছিলাম! আর ক্যাম্প চলাকালীনই ওই গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্যা সুমিত্রা রজক একটি হাড়জিরজিরে ছেলেকে ক্যাম্পে এনে হাজির করেছিলেন। 
         সুমিত্রার শেষ কথাটা এতদিন হলেও ভুলিনি। সুমিত্রা-- ওর দু' বার জন্ডিস হয়ে গেছে।কি বলবো বলুন, বিড়ি শ্রমিকদের পরিবারে এমন ঘটনা আখছার! ওর বাবা গত হওয়ার পর  ওর মা'ই কষ্ট করে চার ভাইবোনের সংসার চালান। ছেলেটি মেধাবী। ক্লাস নাইন পর্যন্তই! এরপর জন্ডিস! একটা কিছু ব্যাবস্থা করুন আপনারা। নইলে চোখের সামনে...

       এরপরই রিমির সেই দ্বার্থহীন কথা-- তোমার জামাকাপড় নিয়ে এসো। আমার সাথে যেতে হবে তো তোমাকে! তবুও ও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমি কনুই দিয়ে রিমিকে গুতো দিয়ে বলেছিলাম- নেই! 
              
                 বহুদিন বাদে একটা কথা মনে পড়ে গেল আমার।আমাদের গাড়িটা চলতে শুরু করলে জানালার পাশে বসা ছেলেটি কিন্তু ওর ছেড়ে চলে আসা গ্রামের প্রতিটি গাছপালা,পশুপাখিদের কে বিদায়সুলভ টা টা জানাতে জানাতে চলেছে,আর মুখে যেন বিড়বিড় করে কি বলছে..

            এরপর আমিও চাকরিসুত্রে সারাদেশই প্রায় ঘুরে নিজের জেলায় যখন ফিরে এসেছিলাম,তখন প্রথমেই রিমির বাড়িতে যাই। এটা ওটা গল্পআড্ডার মাঝে জানতে চাই পল্টুর কথা। প্রথমেই উচ্ছসিত রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে, জানিস ব্যাসপুর এখন আদর্শ গ্রাম! আর তা সবটাই সম্ভব হয়েছে পল্টুর জন্য! রিমির কাছে আরও জানতে পারি, পল্টু এখন  রাজ্য সরকারের ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের ডবলিউ বিসিএস অফিসার।উত্তরদিনাজপুরের রায়গঞ্জে পোস্টিং। প্রতি শনিবার করে আসে ওর রিমিমা'র কাছে। তিন বোনেরই শুধু নয়, রিমির একমাত্র মেয়ে সুকন্যার বিয়েতে পল্টুর ফিপটি পার্সেন্টের ওপরে দায়িত্ব নেওয়ার কথাও জেনেছি রিমির মুখে।

                 আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত দশটা পাড় হয়ে গিয়েছে,বুঝিনি। তবে দিনটা শনিবার বলে মনেমনে একটু ইচ্ছেও ছিল,যদি দেখতে পাই ছেলেটিকে...

                 গাড়ির শব্দ শুনেই রিমি দৌড়োলো দরজা খুলতে। এক সুপুরুষ, সুঠাম যুবক,যেন প্রথম দর্শনেই আমাকে কুড়ি বছর পেছনে নিয়ে গেল।সেই টুকরো টুকরো সংলাপ-- বিড়ি শ্রমিকের ছেলে.. জন্ডিস...

                    চিনতে পারছিস ওনাকে? প্রণীতা আন্টি! ব্যাস, ঢিপ করে প্রণাম ঠুকে বললো, ভালো আছেন তো? বললাম- তা এরপরের প্ল্যানিং কি? ও বললো- আমার মা গত হয়েছে,হয়তো শুনেছেন। এদিকে আঙ্কেলের মৃত্যুর পর রিমিমাও একা। খুব শিঘ্রীই হয়তো বদলির অর্ডার এসে যাবে। তাই এ সপ্তাহে কিছু গোছগাছ সেরে নেবো। রিমি মাকে আর একা রাখা যাবে না..

              আসার সময় ওর মাথায় হাত রাখলাম, আর রাস্তায় নেমে আমাকে একটাই ভাবনা তাড়না দিচ্ছিলো, সঠিক সময়ে এদেশের অনেক পল্টু'র (গাছের)গোঁড়াতে জল ও নিড়ানি দিলে এমন করেই দেশ সবুজে ভরে যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন