শ্রম, শস্য, অনাহার
এক।
একটা জলহই -এর লেকেন ঢুকে যাছি
ই'দেয়াল থেকে উ'দেয়াল
দেয়াল কি জানে — সে গাঁ-গঞ্জ আর নাই
মেয়েরা টুকটুকে লাল ঠোঁটে ভোরের লেডিস স্পেশাল
ঘরে ফেরে দুপুরবেলা — রাঁধে, বাড়ে, খায়
বাচ্চারা ইংলিশ মিডিয়ামে আলফাবেট শেখে
স্বামীও সচল পয়সা — সোহাগে খেলে চাঁদ
পাশাপাশি বসে টিভি সিরিয়াল
কতকিছু শেখে চুল, ত্বক, নখের আরাম
বিজ্ঞাপনে যেমন দেখায় উঁচু বুক, শূন্য ফিগার
তুলসীতলায় জ্বলে মোমবাতি
ফুঁ দিয়ে নয় মোবাইলে বাজে শঙ্খনাদ
অমনি অমনি একদিন ঢুকে যায় গর্ভে
পরকীয়া শীতের আরাম
দুই।
মাটির দেয়ালে ঝুলছে মেডেল
আটা প্যাকেটের পলিথিনে
ঘুমিয়ে আছে শান্ত শংসাপত্র
নীচে মাননীয়'র উজ্জ্বল সহি
পায়ে আর বশ নাই খুড়া
গণেশ, কার্ত্তিক, কিরাতের মহড়া পিঁধে
আগলা-পিছলা উলফা
আসরে ধুম লাচ
যুয়ান মরদ তখন — লাচ দেখাইয়ে পিরিত
বিহা, ছেলে-পুলান
দু'চুখে দেদার খুয়াব
পেটে ভুক তবু মহড়া পিঁধলে এখনু নিজেকে রাজাই লাগে
লাচ ছাড়িস না ব্যাটা, ভুখ তো ভুখ, দিন ফুরালে
নুন মাড়েই সোয়াদ
পিতলের ঘটিতে কনকনে জল এই কিরাতভূমে
তিন।
ঘাটের চাতালে বসে গা ঘষছে মধ্যদুপুর
স্নান এই দৃশ্য দেখে অতিশয় সুস্বাদু লাল টুকটুকে আপেল
যার শুকনো পাতায় লেগে আছে
প্রজাপতির গাঢ় হলুদ আলো — কামিনী ও কাঞ্চন
সাবানের ফেনায় ফুটে উঠছে রঙিন জলযোগ
পুরোহিত তার নতুন গামছায় মুছে নিচ্ছেন
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, ঘাম
খেটে খাওয়া মানুষের অহংকার
ঘাটের চাতালে বসে বাজারদর
নবীন ফড়ে
কাঁচা পসা ছড়িয়ে কেনাবেচা শ্রম, শস্য, অনাহার
---------০০০----------
বিশ্বজিৎ লায়েক
বাঁশগড়, বলরামপুর, পুরুলিয়া
(বর্তমান ঠিকানাঃ কলকাতা)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন