তরুনার্ক লাহার অণুগল্প - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, May 16, 2018

তরুনার্ক লাহার অণুগল্প

   হরগৌরি

-----------+-----------


সবাই বলে হরগৌরির সংসার ।সুখের সংসারে দুটি প্রাণী ।খোকন আর শিউলি ।শিউলি  খুব ভোরে ওঠে।উঠতে হয়।সংসারের যাবতীয়  কাজকর্ম  সেরে মাটির  উনুনে ভাত বসায়।দুটো আলু ফেলে দেয় ফুটন্ত  জলে।খোকন ঘুম থেকে উঠেই তোড়জোড় শুরু  করে সাজগোজের।বসে যায় ভাঙা চওড়া  আয়নার সামনে।শিব সাজতে হবে।পাঁচ  বছর ধরে এই কাজটাই করে আসছে।এটাই  এখন তার পেশা।এক ঘন্টার মধ্যে  সাজা শেষ ।শিউলিকে ডাক দেয়--কই গো,তাড়াতাড়ি করো।আজ যে গাজন!
  শিউলি  উনুনে দরদর জ্বাল দেয়।এক্ষুনি ভাতটা হয়ে গেলে বেশ হয়।গাজন পরব এলেই মনটা খুশীতে ভরে যায়।এই গাজনেই হরগৌরি সাজলে হরগৌরির মর্যাদা  থাকে।লোকে ভক্তি ভরে প্রণাম টনাম করে আর যার যা হাতে উঠে দান করে।রোজগারটা মন্দ হয় না।
উনানে জ্বাল দিতে দিতে আগের অনেক কথা মনে পড়ে যায়।এই গাজনেই দেখা হয়েছিল খোকনের সাথে।সেদিনের ঘটনা  মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ।একাই গিয়েছিল গাজন দেখতে ।ফিরতে  সন্ধ্যা  হয়ে যায়।পথে দুটো লোক তাকে আটকায়।ওদের মতলব বুঝতে  পারে।কিছু ভাবার আগেই ওকে জাপটে ধরে।শিউলি  বাবা শিবকে ডাকতে থাকে।হঠাৎ  ত্রিশূল  হাতে শিবের আবির্ভাব ।ত্রিশূলের খোঁচাতে লোক দুটো চমকে উঠে।এভাবে  কোনো দেবতা কোনো মেয়েকে উদ্ধার  করতে আসবে ভাবতেই পারে নি।ভয়ে শিউলিকে ছেড়ে দৌড়ে পালায়।
শিউলিও প্রথমে বুঝতে  পারে নি। খোকন বলে---ভয় নেই।আমি শিব নই।আমি খোকন।গাজনে আমি শিব সেজেছিলাম।
সেদিন থেকেই ওদের মধ্যে  একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।তৈরি  হয় হরগৌরি জুটি।কিছুদিন পর শিউলি  ঘরের অমতেই খোকনের হাত ধরে বেরিয়ে আসে।
   শিউলিকে গৌরি সাজলে বেশ লাগে। গায়ের রংটা একটু দাবা।তবে মুখশ্রী বেশ সুন্দর।
আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে হরগৌরি বেরিয়ে পড়ে।গাজনতলায় বুড়ো বটের তলায় দুজনে বসে।গ্রামের মানুষ  আসে ,প্রণাম  করে আর যে যেমন পারে প্রণামি দেয়।
সেদিন রাতে ওরা গাজনতলায় থাকে।খোকন মাঝে মধ্যে  আড়ালে গিয়ে বিড়িতে টান দেয়।যাক শান্তি ।
   দুদিন পরেই একটা বিয়ে বাড়ি ধরা আছে।এখন মানুষ  বিয়ে বাড়িতে রিসেপ্সনে বিভিন্ন  দেবদেবী  সাজিয়ে  রাখছে।নতুন  ফ্যাশন  আর কি!
বিয়ে বাড়িতে সন্ধ্যা  থেকেই  খোকন আর শিউলি  হরগৌরি সেজে দাঁড়িয়ে  থাকে। নড়াচড়া খুব একটা করা চলে না।তাদের দেখতে বেশ ভিড় হয়।বয়স্ক মানুষেরা প্রণাম  করে।দুএকজন তো হাত দিয়ে দেখে এরা জীবন্ত  না পুতুল। কিছু দুষ্টু ছেলে তো খোকনকে কাতুকুতু দেয়।দম আটকে দাঁড়িয়ে  থাকে।একবার বদনাম হয়ে গেলে বিয়ে বাড়িতে ডাক পাওয়া  বেশ মুশকিল  হবে।
বিয়ে বাড়ি শেষে  পাওনা গন্ডা বুঝে নিয়ে ভোর রাতে নিজেদের ছোট্ট  ঘরে ফিরে আসে।চোখ জ্বালা করে।সাজগোজ খুলে দুজনে শুয়ে পড়ে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে খোকন বলে---আমাদের  ছেলেমেয়েদের এ লাইনে কিছুতেই আসতে দেব না।ওদের লেখাপড়া শিখিয়ে  অনেক বড়ো করব।
শিউলি  মজা করে বল--- তাহলে কি চাও,গনেশ  কার্তিক  নাকি লক্ষ্মী  সরস্বতী ?
খোকন শিউলিকে আদর করে বলে---একসাথে  চারজনকেই।
---ওরে বাবা,তবে তো মরেই যাব।
খোকন শিউলির মুখে চাপা দিয়ে বলে---আমার গৌরিকে আমি হারাতে চাই না।
ছোট্ট  ঘরটিতে তখন অনেক স্বপ্ন ঘোরাফেরা করতে থাকে।

*******************






তরুনার্ক লাহা
গ্রাম +পোষ্ট- বেলিয়াতোড়
জেলা বাঁকুড়া


No comments:

Post a Comment