Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

রণেশ রায়ের প্রবন্ধ

প্রাচুর্যের অভিশাপ ---- একটা স্ববিরোধিতা

(সম্প্রতি প্রকাশিত বিক্ষুব্ধ এ ভারতের অংশবিশেষ)



প্রকৃতির নীলাভ উদাস আকাশ থেকে বিজন জঙ্গলে সুউচ্চ বৃক্ষের মিনারের
ফাঁক দিয়ে আলোর চ্ছ্বটা বর্ষিত হয়। উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে জঙ্গল আলো আঁধারের
লুকোচুরি খেলায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোন এক শিল্পীর তুলির টানে প্রকৃতি
সেজে ওঠে। প্রকৃতির অপ্রতিহত ক্ষমতার নিদর্শন প্রতিফলিত হয় মুক্ত
বাতাসের স্পর্শে, জলের অবিরাম কলকল প্রবাহে, জঙ্গলের আশ্রয়ে, পাহাড়ের
প্রত্যয়ে। প্রকৃতির নিয়ম রক্ষা করে মানুষের সঙ্গে তার এক মেলবন্ধন গড়ে
উঠেছে এই প্রকৃতির জগতে যেখানে আধুনিক 'সভ্যতা'র আলো বর্ষিত হয় না। মানব
গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে সমুদ্র তটে পাহাড়ের কোলে জঙ্গলের আশ্রয়ে। নাগরিক সভ্য
সমাজের বন্ধন না মেনে এরা যারা এক বন্ধনহীন জীবন যাপন করে চলেছে তারা হল
আদিবাসী। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানব সম্পদ। পৃথিবীতে অসংখ্য এই মানব
গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয়েছে মানব সমাজ। অসংখ্য মানব গোষ্ঠীর অন্যতম হলো
বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী। তাদের দুর্ভাগ্য তারা জানত না যে প্রকৃতির
অকৃপণ দান বর্ষিত হয়েছে তাদের ওপর। তারা শুয়ে থাকে প্রকৃতির এই দান
সাগরের ওপর। তাদের নিচে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত খনিজ সম্পদ যার সন্ধান করে
চলেছে 'সভ্য' শিল্প সমাজ আর তার মালিকরা। সন্ধান পেলেই তারা অস্ত্র হাতে
ঝাঁপিয়ে পরে। উৎখাত হতে হয় আদিবাসী সমাজকে। কৃষি জমি থেকে উৎখাত হয়ে তারা
আশ্রয় পেয়েছে এই প্রত্যন্ত জঙ্গলে। এখন এখান থেকে আবার উৎখাত হয়ে আশ্রয়
হারা হয়ে জীবিকা হারা হয়ে তারা কোথায় যাবে জানে না। বন্দুক হাতে রাষ্ট্র
তাদের উৎখাত করে। সম্পদের প্রাচুর্য তাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাদের বাঁচার তাগিদে হাতে তুলে নিতে হয় বন্দুক।

বিক্ষুব্ধ এই ভারতে :


লোভের সন্ত্রাস দূষণ ছড়ায়

রক্তের কোষে কাঁপন ধরায়,

তুফানের ঘূর্ণিবর্তা বাতাসে বাতাসে

সমুদ্রের গর্জন ঢেউয়ে ঢেউয়ে,

পর্বত চোখ রাঙায়

জঙ্গলের ক্রন্দন শোনা যায়,

ভীত সন্ত্রস্ত লুন্ঠিতা মা আমার,

ভয়ে পালায় কন্যা তার

অস্ত্রহাতে বাস্তুহারা রুখে দাঁড়ায় ।




আদিবাসী সমাজের কাছে উপরোক্ত বাস্তবতাটা নির্মম সত্য বলে আজ প্রতিভাত
হচ্ছে। এ যাবৎকাল তারা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবন যাপন করতো।
প্রকৃতি তাদের আশ্রয় দিত। তারা খাদ্য সংগ্রহ করতো প্রকৃতি থেকে। জলের
কলকল শব্দ বাতাসের মর্মর ধ্বনি পাখির গান তাদের জীবনকে মুখর করে রাখতো।
জীবনে অভাব ছিল, অভাব অপুষ্টি নিরক্ষরতা নিত্য সঙ্গী। কিন্তু ছিল না
`সভ্যতা`র ক্রন্দন । দাসত্বের শৃঙ্খল। প্রকৃতি উদার হস্তে তাদের দিয়েছে।
তারাও তার প্রতিদান দিয়ে গেছে। প্রকৃতিকে সভ্যতার গর্ভে বিলীন হতে দেয়নি।
তাকে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু আজ প্রকৃতির সঙ্গে তারাও উচ্ছেদের মুখে,
ধ্বংসের মুখে। তাই নিজেদের জীবন জীবিকার লড়াই একই সঙ্গে প্রকৃতিকে টিকিয়ে
রাখার লড়াই। এই লড়াইয়ের কথা বলার আগে আমরা সেই সব লড়াইয়ের অঞ্চলের সঙ্গে
একটু পরিচিত হয়ে নিতে পারি। দেখে নিতে পারি প্রাচুর্য আর অভাবের
স্ববিরোধিতার ভয়ঙ্কর ধরণটা। আর এর থেকেই উদ্ভব ঘটে আজ এই লড়াইয়ের
বাস্তবতা যা পঞ্চাশ বছর আগের নকশালবাড়ির বহমানতা। সেই স্ফুলিঙ্গ থেকে
উদ্ভূত দাবানল।


এটা ধরে নেওয়া হয় যে কয়লা লোহা বক্সাইট ম্যাঙ্গানিজ-এর মত গুরুত্বপূর্ণ
খনিজ সম্পদ আর তার সঙ্গে দেশের অফুরন্ত মানব সম্পদ একটা দেশের উন্নয়নের
গতিকে ত্বরান্বিত করে। সেদিক থেকে ভারতের খনিজ সমৃদ্ধ দন্ডকারণ্য অঞ্চলকে
উন্নয়নের খনি বলে ভাবা যেতে পারে। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যের বিষয় হল এই
প্রাচুর্য্য আজ এখানকার মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই
অঞ্চলগুলো দখলে রেখে নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলার এক বাধ্যবাধকতা দেখা দিয়েছে
কর্পোরেট দুনিয়ার কাছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, ছত্তিসগড়,
মহারাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল ধরে দন্ডকারণ্যের বিস্তৃত অঞ্চলকে আজ
শাসক সম্প্রদায় লাল অলিন্দ বা রেড করিডোর নাম দিয়েছে কারণ মাওবাদীদের
নেতৃত্বে আদিবাসী মানুষের অভ্যূত্থ্যান ঘটেছে এই অঞ্চলে। কিন্তু কার্যত
এই অঞ্চলগুলো নিয়ে ভারতে এক খনিজ অলিন্দ তৈরী হয়েছে যে পথ ধরে লুঠ হয়ে
চলেছে আমাদের মাতৃভূমি। এখানকার প্রতিটি বিদ্রোহী মানুষই রাষ্ট্রের চোখে
দেশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী কারণ কর্পোরেট দুনিয়ার লুঠ আর দখলদারির বিরুদ্ধে
এরা অস্ত্র ধরেছে। অবাধ সম্পদ লুঠের পথে এরা কাঁটা। এই অঞ্চলগুলোর বিশেষ
বৈশিষ্ট্যগুলো ধরে আমরা আমাদের আলোচনায় প্রবেশ করতে পারি। এই আলোচনাই
আমাদের অনুমানের (hypothesis) সত্যতা যাচাই করবে। আর আমাদের সমর্থনে আমরা
প্রধানত সরকারি পরিসংখ্যানই ব্যবহার করব যাতে অনুমানটিকে মনগড়া বলে কেউ
উপেক্ষা করতে না পারে।


জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত বিস্তীর্ন দন্ডকারণ্য অঞ্চলে মানুষ ও
প্রকৃতির মধ্যে এক সহজাত পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
প্রকৃতি সেখানকার বসবাসকারী মানুষকে যেমন খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসার
উপাদান যোগায় তেমনি সেখানকার মানুষ প্রকৃতি রক্ষার কাজে নিজেদের নিয়োজিত
করে পরম শ্রদ্ধা আর যত্নের সঙ্গে। যেহেতু সেখানকার মানুষের জীবনজীবিকার
সঙ্গে প্রকৃতি গভীর এক বন্ধনে আবদ্ধ তাই প্রকৃতিকে রক্ষা করার শিল্প
তাদের কাছে সহজাত। দেশের জনবন্টনের মানচিত্র থেকে জানা যায় যে ভারতের
কেন্দ্র ও পূর্বাঞ্চলে সাতটি প্রদেশ তথা মধ্য প্রদেশ, অন্ধ্র, ওড়িষ্যা,
ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চল, গুজরাট ধারণ করে
দেশের দুইতৃতীয়াংশ আদিবাসী মানুষকে। বিশেষ করে জঙ্গলে ঘেরা এই
প্রদেশগুলির গ্রামাঞ্চলে কেন্দ্রীভবন ঘটে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। ২০১১ সালের
জনগণনা অনুযায়ী ভারতের মোট ১০.৪ কোটি আদিবাসী উপজাতির মধ্যে ৯.৩ কোটি বাস
করে গ্রামাঞ্চলে। বাকি মাত্র ১.১ কোটি বাস করে শহরে। ২০০১ থেকে ২০১১
সালের মধ্যে গ্রামীণ আদিবাসীর সংখ্যা ১০.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১.৩
শতাংশ যেখানে শহরে আদিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২.৪ শতাংশ থেকে ২.৮
শতাংশ। এর থেকে প্রমান হয় গ্রাম থেকে শহরে আদিবাসীদের স্থানান্তর
একেবারেই ন্যূনতম। জনবন্টনের এই বৈশিষ্ট্য ধরে আমরা আমাদের আলোচনা
সীমাবব্ধ রাখবো প্রধানত ছত্তিশগড় ওড়িষ্যা ঝাড়খন্ড মহারাষ্ট্রের
দন্ডকারণ্য অঞ্চলে আজ যেখানে কর্পোরেট দুনিয়ার আক্রমণের মুখে আদিবাসী
জনগন রুখে দাঁড়িয়েছে।


আমাদের আলোচনার অঞ্চলগুলোতে আদিবাসী জনগনের উচ্চমাত্রায় কেন্দ্রীভবন
লক্ষ্য করা যায়। ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়ারা প্রদেশে মোট জনসংখ্যার ৮২.৪% হ`ল
আদিবাসী। বস্তার ও যশপুর জেলায় এই সংখ্যা হ`ল যথাক্রমে ৭১.৬০% ও ৬৪.৫০%।
গ্রামাঞ্চলে জঙ্গলে ঢাকা অঞ্চল ৪০%-এর বেশি। ঝাড়গ্রামের গুমলা জেলায়
৬৮.৯% আদিবাসী মানুষের কেন্দ্রীভবন দেখা যায়। লোহারডাঙ্গায় ৫৬.৯%।
উড়িষ্যার মালকানগিরি ও ময়ূরভঞ্জ জেলায এই কেন্দ্রীভবন যথাক্রমে ৬০.৮% ও
৫৯.৫১%। রায়ডাগা কোরাপুট ও নবরংপুরে ৬২.৭৯%,৫৬.৪৬% ও ৫৭.৭৮%। জঙ্গলঘেরা
আদিবাসী এই অঞ্চলগুলিতেই অবস্থিত অফুরন্ত সম্পদশালী খনি---- লোহার খনি
বক্সাইড খনি কয়লা খনি ম্যাঙ্গানিজ আরো কত কি। আর এর ওপরই আজ কর্পোরেট
দুনিয়ার শকুনের দৃষ্টি, উন্নয়নের নামে লুঠ। দেশি বিদেশি কর্পোরেট বিভাগের
বিনিয়োগ বর্ষিত হয় এখানে। আর এই বিনিয়োগের আক্রমনে ঘটে চলেছে আদিবাসী
উৎখাত। জীবন জীবিকা থেকে তাদের উচ্ছেদ। এক ধরন বা অন্য ধরনের
বিচ্ছিন্নকরণ যাকে ইংরেজিতে alienation বলা হয়। প্রকৃতি থেকে মানুষের
বিচ্ছিন্নতা, জীবনজীবিকা থেকে মানুষের বিচ্ছিন্নতা, সৃষ্টি থেকে স্রষ্টার
বিচ্ছিন্নতা। শিল্পায়ন তথা সভ্যায়ন । শহরায়ণ। শহরে জায়গা করে নিচ্ছে অন্য
রাজ্য থেকে আসা সভ্য সম্প্রদায়। প্রান্তিকরণ ঘটে চলেছে আদিবাসী
জনগোষ্ঠীর। শিক্ষা পুষ্টি আশ্রয় সবই তাদের জন্য অনিশ্চিত। প্রাচুর্য বেড়ে
চলেছে শহরে জায়গা পাওয়া তথাকথিত শিক্ষিত উচ্চ বর্গের `সভ্য` সম্প্রদায়ের।
আমরা যদি এই অঞ্চলগুলিকে আবার উপজেলায় ভাগ করে বিশ্লেষণ করি তবে এই ভয়াভয়
বিচ্ছিন্নতার চেহারাটা আরো প্রকটভাবে ফুটে উঠবে। আমরা দেখব এই
বিচ্ছিন্নতাই শর্ত তৈরী করছে নকশালবাড়ির দাবানল ছড়িয়ে পরার। আজ ওরা
এসেছে শিল্পায়ন আর উন্নয়নের নামে লোহার হাতকড়া হাতে। বন্দুক ঘাড়ে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার `আফ্রিকা` নামক কবিতায় সে কথাই বলে গেছেন :


হায় ছায়াবৃতা,

কালো ঘোমটার নীচে

অপচরিত ছিল তোমার মানবরূপ

উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।

এল ওরা হাতকড়া নিয়ে,

নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,

এল ওরা মানুষ ধরার দল

গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।

সভ্যের বর্বর লোভ

নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা

তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে

পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে,

দস্যু পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়

বীভৎস কাদার পিন্ড

চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাস।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার রক্তকরবিতে যে বার্তা রেখে গেছেন তার সারবস্তু হল :


আমরা জানি, "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়"। তাও আমাদের ভাবায় আজ সমরবাদ
ভোগবাদ প্রকৃতি নিধনের এই যুগে কি প্রাচুর্য্যের জগতে দুনিয়া কাব্যময়?
না, তাও তো নয়। ক্ষুধার জগতে প্রাচুর্য্যের দ্বীপ। প্রাচুর্য্যের দ্বীপে
মধ্যগগনের দহন জ্বালা। সকালের সূর্যের নরম স্পর্শ, সন্ধ্যার স্নিগ্ধতা,
রাতের সুখস্বপ্ন কোথায়? সন্ধ্যায় অমাবস্যার অন্ধকার, রাতে বিবরের গহ্বর।
মাতৃগর্ভে আগমনির পদধ্বনি শোনা যায় না। পৌরুষের আকাশে প্রকৃতির রোষ। এই
`সভ্যতা`র মধ্যগগনে প্রাচুর্যের দ্বীপে অতিপুষ্ট সবাই বিচ্ছিন্ন। শৈশব
লুঠ, যৌবন বীর্যহীন, বার্ধক্য কেঁদে ফেরে। প্রেম সঙ্গিহীন। সেখানে ফোটে
না রক্তকরবী। শাসক নিজেও শৃঙ্খলিত। এর মধ্যেই রঞ্জন নতুনের বার্তা বয় ।
নন্দিনী বিদ্রোহিনী। 'সভ্যতা'র রথে রঞ্জন নন্দিনী পিষ্ট। তাদের প্রেমের
সরোবরে রক্তকরবীর প্রস্ফুটন। বেঁচে থাকে সে প্রেম। রক্তের কোষে সে
প্রাণচঞ্চল । আগামীর বার্তা। অপেক্ষা, ক্ষুধার রাজ্য কবে জাগে।


বিক্ষুব্ধ এ ভারত সেদিনও, সেদিন আর এদিনের বিক্ষুব্ধ ভারতের পরিচয় আমরা
পাই বিপ্লবী কবি প্রয়াত সুকান্ত যখন লেখেন


অবাক পৃথিবী ! অবাক করলে তুমি !

জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ এ স্বদেশভূমি !

অবাক পৃথিবী ! আমরা যে পরাধীন

অবাক, কি দ্রুত জমে ক্রোধ দিন দিন ;



জেলা বিভাজন ও প্রাচুর্যের স্ববিরোধিতা :


সারা পৃথিবী ধরেই দেখা যায় প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চলগুলোর ওপর
নিরবিচ্ছিন্নভাবে সাম্রাজ্যবাদের আক্রমন নেমে এসেছে। কর্পোরেট সাম্রাজ্য
লুঠ করে এই সব দেশের সম্পদ। আফ্রিকা এশিয়া লাতিন আমেরিকা ধরে চলেছে এই
ধারাবাহিক লুঠের রাজত্ব। পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর সাম্রাজ্যবাদে পৌঁছবার
কাল থেকেই এই আগ্রাসন পুঁজিবাদী সভ্যতার নগ্নরূপটাকে উদ্ঘাটিত করে চলেছে।
ভারত এর ব্যতিক্রম নয়। সম্পদের প্রাচুর্যের এই অভিশাপ জঙ্গল ঘেরা
বনাঞ্চলগুলিতে কি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে চলেছে তার বিস্তারিত একটা চিত্র
তুলে ধরেন সঞ্চিতা বক্সী, পূর্বতন পরিকল্পনা কমিশনের এক সদস্যা, অরুণীশ
চাওলা, অর্থমন্ত্রণালয়ের যৌথ সম্পাদক, সমাজ প্রগতি সহগের সম্পাদক ও
পূর্বতন পরিকল্পনা কমিশনের সভ্য মিহির শাহ তাদের একটি সাম্প্রতিক
অনুসন্ধ্যানে। এর জন্য জেলাগুলোকে উপজেলায় ভাগ করে বিশ্লেষণ করেছেন
তাঁরা। এই গবেষণামূলক কাজে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আলোচিত
অঞ্চলগুলোর জেলাগুলোকে উপজেলায় ভাগ করলে ধরা পরে বিত্তহীন আর
বিত্তবানদের মধ্যে ভয়ঙ্কর মাত্রায় বিভাজনটি বর্তমান। দেশের অভ্যন্তরিন
উৎপাদনে উচ্চমাত্রায় অবদান রাখলেও আদিবাসী অধ্যুষিত বনজ অঞ্চলগুলো
দারিদ্র নিপীড়িত, অপুষ্ট ও নিরক্ষর। এখানকার প্রান্তিক মানুষেরা চিকিৎসার
সুযোগ থেকে বঞ্চিত, আশ্রয়হীন। প্রকৃতিই এদের আশ্রয়। জীবন জীবিকা সম্পূর্ণ
ভাবে প্রকৃতি নির্ভর। সভ্য সমাজ এতদিন এদের খবর রাখত না। আজ সম্পদের খোঁজ
পেয়ে এরা রাষ্ট্রের সমর্থনে এখানে বন্দুক হাতে উপস্থিত। উদ্দেশ্য অঞ্চল
`সাফ` করে সেখান থেকে বসবাসকারী মানুষকে `উচ্ছেদ` করে `উন্নয়ন` ঘটানো।
উন্নয়ন মানে সেখানকার জল জমি খনিজ সম্পদের ওপর দখল নেওয়া। বিদেশী
বহুজাতিক সংস্থা ও তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধা দেশীয় বহুজাতিক সংস্থার হাতে
তা তুলে দেওয়া। লুঠের রাজত্ব কায়েম করা। তথাকথিত এই উন্নয়নের অভিযানকে
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কলম্বাসের পর সবচেয়ে সবচেয়ে বড় মাত্রায়
জমি দখলের, উচ্ছেদের অভিযান বলে চিহ্নিত করে। একইসঙ্গে অঞ্চলগুলোর
শহরগুলিতে বিত্তশালী একটা সস্প্রদায় গড়ে ওঠে যারা উচ্চবর্গের মানুষ,
দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যারা আসে। আমাদের আলোচিত অঞ্চলগুলো খনিজ
সম্পদে ভরপুর হওয়ায় এই অবস্থার উদ্ভব ঘটে। সম্পদ প্রাচুর্য গরিব মানুষের
কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যেই নিহিত আছে লুঠের রাজনীতির বীজ। গরিব
মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। আক্রমণকারী আর প্রতিরোধকারীদের মধ্যে এক
যুদ্ধ ঘোষিত হয়।


১৯৯১ সালে নতুন আর্থিক নীতি চালু হওয়ার পর থেকে অঞ্চলগুলির মধ্যে বিভাজন
প্রকট থেকে প্রকটর হতে থাকে। খনিজ সম্পদের স্বর্ণ লঙ্কায় যে প্রবণতা দেখা
যায় তা সরকারি পরিসংখ্যান সমর্থন করে। ৫০-টি প্রধান খনিজ উৎপাদনকারী
জেলাগুলির মধ্যে ৬০% জেলা দেশের সব থেকে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির
অন্তর্ভুক্ত। দেশের ২৫টি সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্থ জেলাগুলোর ২টি ওড়িশায়,
ঝাড়খন্ড ও ছত্তিশগড়ে ১টি করে অবস্থিত। উড়িষ্যার কেওনঝর জেলায় শিশু
মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। দান্তেওয়ারা লোহা সম্পদে ভরপুর হওয়ায় আজ এই
অন্যতম সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে বিনিয়োগের আকর্ষণ সবচেয়ে তীব্র। এই
জেলা ১৫০টি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলার মধ্যে তলা থেকে সপ্তম। এই সম্পদধনী
অঞ্চলে মাত্র ৫৩% শতাংশ মানুষের পানের উপযুক্ত পানীয় জলের ওপর অধিকার
আছে। কর্ণাটকের বেলারি আর গুলবার্গের মত অঞ্চল এর অন্যতম যেখানে রাজ্যের
৮৪% লোহা পাওয়া যায়। চুনা পাথর উৎপাদনে গুলবার্গ সবচেয়ে অগ্রণী। কিন্তু
গুলবার্গ মানব উন্নয়নসূচকের মাপকাঠিতে সব থেকে পিছিয়ে পড়া কুড়িটি জেলার
মধ্যে উনিশতম আর বেলারি সতেরোতম। বেলারিতে ৪৫% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে
অবস্থান করে। দেশের সমস্ত খনিজ অঞ্চলের অবস্থা একই। ছত্তিশগড়ের লাগোয়া
মহারাষ্ট্রের ইয়াবতমল ও চন্দ্রপুর হল দুটি প্রান্তিক জেলা যেখানে
মহারাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কয়লা আর চুনাপাথর উৎপাদিত হয়। অথচ এই
অঞ্চলগুলো সবচেয়ে দারিদ্র পীড়িত। মহারাষ্ট্রের অন্যত্র বিশেষ করে উন্নত
জেলাগুলোতে তেমন খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় না। এই রাজ্যের ৩৫টি জেলার মধ্যে
এই পিছিয়ে পড়া দুটি জেলার অবস্থান যথাক্রমে চৌত্রিশতম ও ছাব্বিশতম।
চন্দ্রপুরে ৪৭% মানুষ দারিদ্র রেখার নিচে অবস্থান করে। ইয়াবন্তমলে ৪৪%
মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে।


এবার দেখা যাক পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোকে উপজেলায় ভাগ করে আলোচনা করলে
সঞ্চিতা বক্সীদের গবেষণা আমাদের কি জানান দেয়। সাম্প্ৰতিক কালে মোট
অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে খনিজ উৎপাদনের অবদান বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক ভাবে
পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলা যায়। কিন্তু একটি
পশ্চাদপদ জেলাকে উপজেলায় ভাগ করলে দেখা যায় জেলার উন্নত অঞ্চলগুলোতে
দ্রুতহারে শহরীকরন ঘটেছে। উন্নত উপজেলায় আদিবাসীদের অংশ কমেছে। সেখানে
অন্য রাজ্য থেকে আসা উচ্চবর্গের বিত্তশালীদের একধরণের কেন্দ্রীভবন
বেড়েছে। পুষ্টি শিক্ষা স্বাস্থ্য সবরকম সুবিধা বেড়েছে। অপরদিকে পিছিয়ে
পড়া জঙ্গলে ঘেরা গ্রামাঞ্চলে আদিবাসীদের কেন্দ্রীভবন কমে নি। তাদের জীবন
জীবিকায় উন্নতি হয়নি। উপরোক্ত গবেষণা অনুযায়ী :


Typically tribal areas are mineral and forest rich and the extraction
of these resources tends to be a one way street with little benefit
flowing to the tribal people.

(Ref: Enclaves of Backwardness, Political and Economic Weekly, 1st Jan 2015)


আলোচনাধীন বিভিন্ন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই
উন্নয়ন শিল্পায়ন ও শহরীকরণের ফলশ্রুতিতে উচ্ছেদ ও বিচ্ছিন্নতায় ছেদ
পড়েনি, অনাদিবাসী উচ্চবর্গের মানুষের ভিড় বেড়েছে শহরগুলিতে। পশ্চাদপদ
উপজেলাগুলি রয়ে গেছে আদিবাসী অধ্যুষিত। উন্নয়নের ও সম্প্রসারণের
কেন্দ্রগুলি ঘেরাও রয়ে গেছে গরিবি অপুষ্টি ও শিক্ষার অভাবে ভরপুল
গ্রামাঞ্চলের দ্বারা। অভাবের সমুদ্রে গড়ে উঠেছে শহরকেন্দ্রিক প্রাচুর্যের
দ্বীপ। এই গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে :


the most advanced sub-districts are flanked by the most underdeveloped
tribal sub-districts in Korba and Raigarh of Chhattisgarh, Valsad of
Gujrat, PaschimSingbhum, PurbiSingbhum of Jharkhand and Keonjhar,
Koraput and Mayurbhanj districts of Odisha


দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ভূমি সংক্রান্ত আলোচনায় স্বীকার করা
হয়েছে যে গত ষাট বছরে ছয় কোটি মানুষ উচ্ছেদ ও বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়েছে।
পৃথিবীতে সাম্প্রতিক কালের সর্ববৃহৎ উচ্ছেদ হলো এটা যাকে সরকার নিযুক্ত
একটা কমিটি কলম্বাসের পর সর্ববৃহৎ উচ্ছেদ বলে উল্লেখ করেছে। এদের মধ্যে
এক তৃতীযাংশের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের সম্পর্কে তেমন কিছু
জানা যায় না। উচ্ছেদ হওয়া মানুষের ৪০% আদিবাসী আর ২০% দলিত। উল্লেখযোগ্য
যে ৯০% কয়লা আর ৫০% অন্যান্য খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় এই আদিবাসী অধ্যুষিত
জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলগুলিতে যেখানে দারিদ্র আর অপুষ্টি মানুষের নিত্যসঙ্গী
(দ্রষ্টব্য : Planning Commission,2013 Vol-1)


উপরোক্ত গবেষণা চালানো হয় ৬৪০টি জেলা ও ৫,৯৫৫টি উপ-জেলাকে কেন্দ্র করে।
সঠিকভাবেই বলা হয় যে গভীর এবং নির্ভুল বিশ্লেষণের স্বার্থে আলোচনাকে
জেলার গন্ডি পেরিয়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যেতে হয় কারন একটি
জেলা একাধিক বিভাজিত উপজেলায় আজ বিভক্ত। তথাকথিত উন্নয়নকে কেন্দ্র করে এই
বিভাজন গড়ে উঠেছে। এই বিভাজন হলো শহর গ্রামের মধ্যে বিভাজন ধনী দরিদ্রের
মধ্যে বিভাজন উচ্চ বর্গের সঙ্গে নিম্ন বর্গের বিভাজন। অর্থিনীতি রাজনীতি
সাংস্কৃতিক বিভাজন। এ এক সর্বাত্মক বিভাজন। উপবিভাজনের ভিত্তিতে এই
বিশ্লেষণ দেখিয়ে দেয় যে আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গল ঘেরা খনিজ অঞ্চলগুলো
আভ্যন্তরীন জাতীয় আয়ে অধিকতর অবদান রেখে চলেছে কিন্তু এইসব অঞ্চলগুলিতেই
আদিবাসীদের কেন্দ্রীভবন বেশি বেশি করে দেখা দিচ্ছে। এখানেই দারিদ্র ও
অপুষ্টি বাসা বাঁধে। শিক্ষার আলো এখানে পৌঁছায় না। চিকিৎসার সুযোগ নেই
বললেই চলে।


পরিসংখ্যানের সাহায্যে এই গবেষণায় কি বলা হয়েছে তা দেখে নেওয়া যাক। এই
গবেষণায় দেখা যায় যে ২৭টি জেলা আছে যার উপজেলার ১০% সর্বোচ্চ ও ১০%
সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করে। ৯২টি জেলার অন্তর্ভুক্ত উপজেলাগুলোর ২০%
সর্বোচ্চ স্তরে এবং ২০% এর স্থান সর্বনিম্নে। ১০৬টি জেলার ৩০% সর্বোচ্চ ও
৩০% সর্বনিম্ন স্তরের উপজেলা বলে বিবেচিত। এই জেলাগুলি এমনভাবে উপজেলায়
বিভাজিত যে কয়েকটি শহরকেন্দ্রিক উন্নত উপজেলা প্রধানত উচ্চবিত্তদের
বাসস্থান। উন্নয়নের সুবিধা এরা ভোগ করে। কিন্তু এইগুলোকে ঘিরে থাকে
দারিদ্র নিপীড়িত আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গলঘেরা খনিসম্পদে ভরপুর গ্রামাঞ্চল।
এই বিভাজিত পিছিয়ে পড়া উপজেলাগুলি হলো খনিজ সম্পদ স্বর্গ। আদিবাসী
মানুষের কেন্দ্রীভবন ঘটে এইসব পিছিয়ে পড়া উপজেলায়। জাতীয় উৎপাদনে খনিজ
সম্পদে এই অঞ্চলগুলির অবদান বেশি হলেও দারিদ্র অপুষ্টি অশিক্ষার অন্ধকার
এই অঞ্চলগুলোকেই তমসাচ্ছন্ন করে রাখে। মানব উন্নয়নের যে কোন মাপকাঠিতেই
এই অঞ্চলগুলো সবথেকে পিছিয়ে পড়া। একই সঙ্গে উন্নয়ন ও শহরায়ণের দৌলতে
বিভাজিত শহুরে উপজেলাগুলো দেশের উন্নত অঞ্চলগুলোর সমতুল যেখানে আদিবাসীরা
সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। দখলদারি পেয়েছে উচ্চবিত্তরা। এই কেন্দ্রগুলি
কর্পোরেট সংস্থাগুলির ব্যবসা কেন্দ্র। শিক্ষা চিকিৎসা সব কিছুতেই এগিয়ে
থাকা। অন্যভাবে বলা চলে এইসব জেলাগুলো অভাবে ঘিরে থাকা প্রাচুর্যের
দ্বীপ। আর এখানেই নিহিত আছে প্রাচুর্যের অভিশাপের চাবিকাঠি।


উপরের আলোচনা ধরে বলা যায় যে বিশ্বায়নের নমুনায় শিল্পায়নের আশীর্বাদ
বর্ষিত হয় অনাদিবাসী উচ্চবিত্ত জনগনের মাথায়। আমাদের আলোচিত অঞ্চলগুলোতে
উন্নয়নের হার সর্বভারতীয় মানে যথেষ্ট বেশি। শেষ হিসেবে জানা যায় যে
ছত্তিশগড় ঝাড়খন্ড উড়িষ্যায় উন্নয়নের হার যথাক্রমে ৮.৪৪,৭.২৭ ও ৮.২৩ শতাংশ
যা ভারতের উন্নয়নের গড় হার থেকে বেশি। লক্ষণীয় যে গড় উন্নয়নের হার বেশি
হলেও এই অঞ্চলগুলো মানবউন্নয়নের সূচকে সবথেকে পিছিয়ে থাকা যা আমরা আগে
দেখেছি। আরও লক্ষণীয় যে এই জেলাগুলোতে মানব উন্নয়নহার কিছুটা বেড়েছে
শহরগুলোর উন্নয়নের ফলে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলগুলো যেই তিমিরে সেই তিমিরেই
আছে। আর আজ গ্রামাঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে আদিবাসীদের
অভ্যুথ্যান। কারন তারাই আজ সবথেকে তীব্রভাবে শোষিত। আর সাম্রাজ্যবাদের
আক্রমনের ফল-ই এই শোষণ। সুতরাং শোষিত মানুষের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে
অস্ত্রধারণ-ই বলে দেয় আজ ভারতীয় সমাজে লড়াইয়ের অভিমুখ কোনদিকে কিভাবে
এগিয়েছে। প্রধান দ্বন্দ্ব কোনটা। নকশালবাড়ির আন্দোলন আমাদের প্রধান
দ্বন্দ্বকে চিনতে শিখিয়েছিলো। আর সাহায্য করেছিল এই দ্বন্দ্বের চরিত্র
বুঝতে। লড়াইয়ের নীতি ও কৌশল নির্ধারণে এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জনযুদ্ধের গতিশীলতার এটাই চরিত্র। বাস্তব অবস্থার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নীতি
ও কৌশলে বদল আসে। কিন্তু শত্রুতামূলক দ্বন্দ্বের সমাধান করতে গেলে
সশস্ত্র লড়াইটা অনিবার্য। সংসদীয় পথে এর সমাধান সম্ভব নয় কারন শোষণ বজায়
রাখতে রাষ্ট্র সবসময়-ই অস্ত্রহাতে উপস্থিত। ঘোষিত বা অঘোষিত যুদ্ধ জনগনের
ওপর চেপে বসে থাকে। এমনকি ভোটের রাজনীতিতেও অস্ত্র কথা বলে, পয়সা
ভোটযুদ্ধকে পরিচালিত করে। শান্তির ললিত বাণী শোনায় ব্যর্থ পরিহাস।
===========000=========

(সমস্ত তথ্য ও বক্তব্যের দায় ও কপিরাইট লেখকের। আমরা প্রকাশক মাত্র।)














রণেশ রায়
পি৫৮৭ পর্ণশ্রী পল্লী কলকাতা ৭০০০৬০

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩