Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

অরবিন্দ পুরকাইতের মুক্তভাবনা

পিলসুজ ও আলো




পিলসুজ। দীপাধার। দীপের প্রায় নিত্য তোয়াজ, দীপাধারের নয়। দীপ আলো দান
করে, সেই আলোটি পাওয়ার জন্যে তার সলতে পাকানো থেকে তৈলদান। সলতে উসকে
দেওয়া। সর্বোপরি দীপটির পরিপাটি যত্ন। কেন-না লোকে আলো চায় এবং তার পর
দেখে কোথা থেকে আলোটা আসছে। কার মাথায় বসে সে আধার আলো দিচ্ছে তা নিয়ে
কার আর মাথাব্যথা! তাই দীপাধার অর্থাৎ পিলসুজের দিকে তেমন করে নজর পড়ে
না, দরকার হয় না নিয়মিত পরিচর্যারও। তার গায়ে লেগে অনেক অবহেলার ধুলো।
তার গায়ে জড়িয়ে থাকে গড়িয়ে-পড়া পোড়া তেলের ক্লেদ। সভ্যতার ময়লা গায়ে
মেখে, সভ্যতার আলোদানকারী দীপের তাপ এবং চাপ সহ্য করে ধরে থাকে সে
সভ্যতার আলো। আমরা ঘরকে আলোকিত দেখি, খোদ পিলসুজেই সচরাচর সরাসরি পৌঁছায়
না সে আলো। আলো-মাথায়-করে দাঁড়িয়ে থাকে সে আবছা-আবছা দৃশ্যমানতা নিয়ে,
সামান্য আলোর আভাসমাত্র গায়ে মেখে। কখনও মায়াবি, কখনও ভূতুড়ে এক সত্তায়।
কোনও বিশেষ দু-এক দিনে, আরাধ্য দেবদেবী কিংবা মান্য অতিথি-অভ্যাগতদের
সন্তোষবিধানে এবং সেইসঙ্গে নিখুঁত আয়োজনের শিরোপা পেতে, তার দিকে একটু
নজর। অযত্নের স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম সেই দু-একটি দিন। ব্যতিক্রমই।
আলো-ঝলমল সুসজ্জিত অনুষ্ঠানগৃহ। কেতাদুরস্ত পোশাকের মান্য অতিথিবর্গ।
পরিচয়ে উঠে আসে বাঘা বাঘা সব বিভাগ, পেশার নাম! স্ত্রী বা স্বামী,
ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব। কে কোন পদে। আপনি? উনি? তিনি?
আচ্ছা-আচ্ছা, তা বেশ। আর...আর...তারপর আগ্রহ হয়ে আসে ক্ষীণ, কণ্ঠ
উত্তেজনাহীন। আর জিজ্ঞাসা করার খুব একটা প্রয়োজন দেখা যায় না। অথবা,
নেহাত জিজ্ঞাসা না করলে নয়, তাই...। আসলে ওরা যে রয়ে গেছে! সবাই বুঝে
যায়, আর এগোবার দরকার মনে হয় না কারও। ব্যস্ত হয় পড়ে অন্যদেরকে বা অন্য
কিছু নিয়ে। আসলে ওরা পিলসুজ। আলোকিত ঘরে দু-একটি ঠিক থেকে যায়! বড়
অস্বস্তিতে ফেলে! একটা ভদ্রস্থ পেশা নেই, চলনবলন-বেশে পালিশ তো দূরের কথা
নেই সামান্য আপডেটটুকুও! অথচ এড়ানোও তো যায় না সহজে! লতায়পাতায় সম্পর্ক
হলেও সহ্য তো করতে হয় কিছু দূর অবধি! তাছাড়া প্রয়োজন বা সামাজিকতার
দিকটাও তো ফেলনা নয়। কখনও কখনও জড়িয়ে থাকে কম-বেশি আবেগও। তবে ওদের বা
ওদেরই গোত্রধারীদের – যাদের কেউ কেউ হয়তো নিজেদেরকে আর একটু মানানসই করে
তুলে হাজির হয়েছে এখানে – তাদের গায়ের কাদা-মাটি, তেল-কালির কল্যাণেই
গঠিত উৎসবগৃহে আগত প্রতিটি তনু; এমনকি এই উৎসবগৃহ এবং তার এই সুসজ্জিত
হয়ে ওঠা, পুনরায় নতুন কারও জন্যে তার সুসজ্জিত ব্যবহারযোগ্যতায় পৌঁছে
যাওয়াতেও অবদান মূলত তাদেরই।
একটা মিছিল আসছে। দীর্ঘ মিছিল। তাদের অনেক বঞ্চনাবোধ, অনেক ক্ষোভ,
অভিমান। তা তারা প্রকাশ করতে চায় বুঝদার, আলোকিত বলে পরিচিত নগরে, বিশেষত
যেখানে কিনা বাস করে তাদের পাঠানো প্রতিনিধিরা। তারা ঠিক করল নাগরিক
জীবনের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাবে না। দিনাবসানে যাত্রা শুরু করল তারা
নগরাভিমুখী পথে। ক্লান্তিকে যাদের জীবনে বারবার জোর করে বলতে হয় 'আমায়
ক্ষমা করো প্রভু', বয়সের ভার, শারীরিক রুগ্নতা ইত্যাদি অগ্রাহ্য করে
পথশ্রমের শ্রান্তিকে হঠিয়ে পথ চলল তারা আলো-আঁধারিতে। নগরের পথে। চটি
ছিঁড়ল। ক্ষতবিক্ষত হল পা! সে দৃশ্যের সাক্ষী হতে দাঁড়িয়ে পড়ল পথের মানুষ,
বাড়ির ছাদ-আলসে-দরজা-জানালা-বারান্দায় হাজির হল জোড়া জোড়া চোখ! তেমনই
জোড়া জোড়া চোখের কেউ কেউ ব্যবস্থা করে দানাপানির। অন্তরে অনুরণিত
ব্যতিক্রমী উচ্চারণ, তোমরা আমাদের সারা বছর খাওয়াও – আমরা তোমাদের একদিন
খাওয়াব। কটাক্ষ-কটূক্তির বাইরে এসে কারা করতে পারল এমন ব্যতিক্রমী
ব্যবস্থা? তারা সবাই কি পুরুষানুক্রমে বসবাসকারী গর্বিত নাগরিক? না কী
তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল দূর বা অনতিদূর অতীতে ওই পিলসুজ-সমাজেরই
প্রতিনিধি! অর্থ-বিদ্যা-ব্যাবসা ইত্যাদিতে উন্নতি করে বা নিতান্ত পেটের
দায়ে বাসা বেঁধেছে যারা নগর বা নগর-উপকণ্ঠে। যাদের শিকড়বাকড় এখনও রয়ে
গেছে অনতিদূরের মফস্বল বা অজ পাড়া-গাঁয়ে! অথবা বাস্তবে সে শিকড়বাকড় ক্ষীণ
হয়ে এলেও, রয়ে গেছে মনের আনাচে-কানাচে! মাত্র কয়েক পুরুষ পেছিয়ে গেলে,
ক'জনই বা আর নগর-সন্তান!
আমরা তোমার মাথায় বসে-থাকা দীপের আলোকে দেখেছি, ভালো করে তোমাকে দেখিনি!
তোমার অমার্জিত চেহারা দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, নিস্তরঙ্গ আর
প্রায়-স্থবির তোমার জীবন ধরে নিয়ে করেছি কটাক্ষ। প্রকৃতির রোষের
বিরুদ্ধে, লোভী কিংবা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে তোমার
প্রতিদিনের লড়াইয়ে বেঁচে থাকাকে কুর্নিস জানাইনি। কঠোর পরিশ্রমে তুমি
জুগিয়েছ আমার মুখের অন্ন, গড়ে দিয়েছ মাথা গোঁজার ঠাই, তৈরি করে দিয়েছ
সেরেস্তা-কাছারি-সেবায়তন এমনকি সেখানে পৌঁছানোর পথ। বিনিময়ে আমরা দিয়েছি
বরাদ্দ অর্থ বা দেখিয়েছি করুণা। কখনও শুকনো সৌজন্য। ঠকাইনিও কম। আবার
নিজেদের জাতি-গোত্র বোঝাতে মুখ্যু, অমার্জিত, অভদ্র, অসভ্য, চাষা,
জনমজুর, আনকালচার্‌ড, রাবিস ইত্যাদি একের পর এক নিতান্ত জলভাত-শব্দ তোমার
সম্বন্ধে প্রয়োগ করতে দ্বিধান্বিত হওয়ার দরকার বোধ করিনি তেমন। তোমাকে
সাজিয়ে-গুছিয়ে দেখিয়েছি উন্নয়নের পরিচয় দিতে, মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত
দেখাতে; তোমাকে একদিন বুকে জড়িয়ে ধরেছি বা তোমার বাড়িতে একদিন পাত পেড়ে
পাতা-আসনে বসে খেয়েছি কিংবা কাটিয়েছি একটি রাত - অভেদ বোঝাতে। আর যেদিকে
ঘাড় কাত করতে বলেছি সেদিকে না করলে, স্বাধিকার দাবি করলে বা বিশেষত নিজের
লেজে পা তুলে দিলে যা-সব 'অ্যাক্‌শন' নিয়েছি বা যে-সব শব্দ প্রয়োগ করেছি,
কতবার তাতে বেরিয়ে পড়েছে খোল-নলচে!
আলোকমুগ্ধ আমরা পিলসুজদের দিকে বাড়িয়ে দিইনি আমাদের যত্নের হাত! ফল তো
পেয়ে যাচ্ছি, ফল পর্যন্ত পৌঁছানোর পথে আমাদের আর কী প্রয়োজন যদি ভাবি তবে
সেটা আত্মঘাতী হবে না কি! সোনালি গন্তব্যে পৌঁছে গেছি ভেবে অবহেলাভরে যদি
রুদ্ধ করে দেওয়া হয় গন্তব্যগামী সমস্ত পথ, রসদ পৌঁছাবে তো? উৎসকে বিস্মৃত
হলে, আলোর ধারককে ভুলে গেলে বাঁচব তো আমরা! বাঁচবে তো সভ্যতা!

=======00000=======














অরবিন্দ পুরকাইত
গ্রাম ও ডাক – গোকর্ণী,
থানা – মগরা হাট,
জেলা – দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩