মামন : প্রাণপণ যুদ্ধকাল
অতৃপ্তি থেকে পরিচয় হীন কতকগুলো দিন ঝাপট খায় ঝর ঝর শব্দে । বক উড়ে চললেও কবিতার শিথিল মুহূর্তে শরীর গুলি গ্রীষ্মে উড়ে। কোনো গাছের পাতা নড়লেও তাকে আমি বট পাতা বলেই জানি । সে কারনেই একরোখা মামনকে মনে পড়ে হঠাৎ হঠাৎই । যদিও এই দরকারি সময়ে তাকে মনে পড়ার কোনো কারন খোঁজা বৃথা । তবুও কবিতা আক্রান্ত কিছু গাছ ও কিছু কবিতার মোড় গুলি অক্লান্ত পরিশ্রম করছে , সুঠাম দেহ লতায় সুন্দরী করে তোলার জন্য । কিছু বালি সিমেন্টের দোকান গড়ে ওঠছে ঠিকই। কিন্তু বাড়ি তৈরি করতে পারছে না তেমন ভাবে কেউই । নতুন পুরোনো মিলিয়ে কাঁটাখালি থেকে যেদিকে যাই না কেন শরীরের বাহান্ন টুকরোর নেশায় সেই নদী টাই আসে । সে আমার কেলেঘাই । কিন্তু মামনকে মনে পড়ার কারণটাও তাই - তাই কি , নাকি ওই বাহান্ন টুকরো গুলোর মধ্যে কোনো অস্থির সময় কাজ করে । সকাল থেকে যে খালটা বয়ে গেছে দুপুর পেরিয়ে তার পাশে নোনা জল নেই আর । কেবল মোরাম রঙের সময় আবহমান । তাতেই হরেক মাল দশ টাকার মতো হরেক পথ দশ লাখ টাকায় মেদো মাতালদের পকেটে । আমরা দুপুরের ভাত থেকেই বিকেলের চা পর্যন্ত এক ধরনের নেশায় টো টো' র খোঁজ করতে থাকি । বাউণ্ডুলে হওয়া বৃক্ষগুলি আলো আঁধারের সাথে পাল্টে যেতে থাকে ডালপালার দোলনে ।
একদিন কেটে গেলেই একটি শ্বাস নেওয়া শরীরের পরিবর্তন হতে বাধ্য । তার দৈর্ঘ্য বাড়ে , প্রস্থ বাড়ে , তেমনি বেড়ে যায় তার বুকও । এই বেড়ে ওঠার ধরনটা কী রকম । গর্ভাশয়ে শুয়ে শুয়ে অভিমন্যু যেভাবেই শিখে ফেলেছিল সাত শত্রু সাথে লড়াই করার সুত্র , সেভাবেই একান্ত নিঃশব্দেই চলে চোরা জোয়ার । বিষে অমৃতে দ্বিতীয়ার চাঁদের দিকে তাকিয়ে গভীর হতে থাকে । বেড়ে যায় আনাড়ি কিছু স্বাধীনতা , চিন্তার নৈরাজ্য । সেদিকে তাকাতেই বাজামুথা ঘাসের শিকড়ের মতোই সুবাসে অভিভূত হতে পারেন আপনি । অনেক দিনের জমানো মনের কথা শীতলা মণ্ডপের বৃদ্ধ বট গাছের ক্ষয়ে যাওয়া শিকড়ে বাসা বাঁধা উই পোকার মতো বেরিয়ে আসতে পারে সন্ধ্যার করুণ আকুতি । সে সবের গুরুত্ব আপনাকে দিতেই হবে । না হলে তো ফুল কুড়ানো যাবে না কোনো দিন । কিন্তু আপনি ফুল কুড়িয়েছেন , কিংবা ঝরে যাওয়া ফুলের কাছে আনমনা হয়েছেন কয়েক সেকেণ্ড , সে আপনি যতই রাবণ টাবণ হোন না কেন । এ কথা যে কেউ হলফ করে বলতে পারে । এর ভিতরে অস্থিরতা কাজ করেই , নড়েচড়ে দেখুন সারা গায়ে প্লাটিনাম আর কোমরে কোমরে ফাটাফাটি হোমের আগুন , আহুতির মন্ত্র আছাড় খায় তিন ভাগ ঢেউয়ে - তাই নানান্ শব্দ কানে আসে , এ অবধি স্রোতড়ড় গিয়েছে সেই প্রবাদে - নিরিবিলি হয়ে যাওয়ার রাতেরা কাওকে কিছু না বলে একা একা খুঁজে ফেরে সেই মূল রোমের বিশ্বাস। ভেবেছেন অনেকেই , এর জন্য তো কোনো তরঙ্গ দেখি না , মন স্থাপনের সেই ফেলে আসা দুঃখ কথায় আবরণ খুলে দ্যায় না খিদে নিয়ে । তেমনি হয়েছে চিলের ডানা প্রেম আর প্রাণান্তকর রামধনুর মূর্ছনা । সে একাকার করে দ্যায় সমার্থক বটের ঝুরি আর প্রাচীনতা ।
গাঁয়ের মাটিতে আর মোচড় খায় না পতিত বৃক্ষমূল , ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাঝে পীড়নের রৌদ্র ঝড় ; জলকুমির খেলায় কোনো ভবিষ্যৎ নেই আর । মাটির লগ্নে ডুবে থাকা স্তর ডু্বন্ত শরীরের শেষ ধাপে । কিন্তু পরের মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ তো বাঁচে না । তার জন্য চাই আলো বাতাস জল । যেমন বেঁচে থাকে বর্ষার মা' র ভেজা উনুন ; শীত গ্রীষ্ম বর্ষায় কিছু না কিছু তো পুড়িয়েই থাকে , সেই জ্বালানি যোগাড় করতে হয় বর্ষা' র মা কেই সাহায্য করার মতো কেউ নেই তার । নেই বললে ভুল হবে - সকলেই আছে , তার পুকুর আগুন উঠোন কাঁদাল এবং ফুট খানিক চওড়া পায়ে চলা পথ - যা চলে গেছে বাজারের দিকে । এই পথ দিয়েই দেবর নন্দাই খুড় শ্বশুর ইত্যাদি ইত্যাদি - সবাই নাড়ি নক্ষত্র হাড় মাস বুক কোমর পুড়িয়ে খাক করে দিতে চায় । মাঝে মাঝে মনে হয় মা কালী'র চেড়ীর মতো সকলের হৃৎপিণ্ড গুলো ছিঁড়ে খায় সে । শিবের থানে ঘোরে স্বপ্নহীন স্থবির অমানিশা , তবু দূর কোনো জলা'র সাধনায় তার স্থবিরতার কাছে মানত করে নয়নজুলির জলের মতে । লিঙ্গটিও কেমন ক্ষয় হতে হতে হয়ে যায় কালো পাথর । এই জীবন বোধ , এই ভালবাসা, এ এক অদ্ভুত প্রাণ দায়ী ফসল তোলার কথা । কী আশ্চর্য , আমি ভাবি বর্ষার মা কে আমি চিনি - কিন্তু পথ দীর্ঘ হতে হতে সেখানে এতো মানুষের ছায়া পড়ে যে আমাকে ঘনিষ্ঠ ব্যভিচারী হতে বাধা দেয় । তার হিজল গাছে পাইকার লাগে , বাঁশ ঝাড়ে রোদ সব রাত নষ্ট করে ঝরা পালক কুড়িয়ে নেয় । এই ভাবে সব জটিলতার অন্দরে বইতে থাকে হাওয়া ।
যা নিলে নয় তাই নিলাম । প্রতি মুহূর্তের ব্যথা ভরা বুকের আকাশটা চলে যায় কাঁপা কাঁপা বৃষ্টির ভিতর। কোনো বাড়ি ফেরা নেই , কেবল তলপেট ভর্তি জল নিয়ে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার একটা জীবন কেটে যায় স্থির । কাকের ডানা থেকে নিরাসক্ত পালক ঝরে পড়লেই আমি হেঁটে যাই আমারই অতীত যুদ্ধ কাল নিয়ে।