বিজনে নিজের সঙ্গে
(সাহিত্যদেব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য)
'অর্ধেক জীবন' কাটতে না কাটতেই চোখে পড়েছিল 'প্রথম আলো'। তবে 'সেই সময়' একপলক তাকিয়ে ছিলাম 'পূব পশ্চিম'-এ। দেখি আমার 'সরস্বতীর পায়ের কাছে' বসে আছে এক অসামান্য নারী যাকে দেখেই মনে হয়েছিল এ কি সেই নারী যাকে 'স্বপ্নে দেখেছি বহুক্ষণ তবে বাস্তবে তিনমিনিট'। যা হয় আর কি। 'জীবন যে রকম'। একপলক দেখা সেই নারীকে আকুল কন্ঠে ডেকে উঠেছিলাম 'নীরা' নামে। বলেছিলাম নীরা দেখে যাও আমি 'কী রকম ভাবে বেঁচে আছি'।
জানি না একদিন এই নীরার স্বপ্নের টানে নাকি 'শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা' ফিরে পেতে 'মার্গারেট'কে ফেলে ফিরেছিলাম এই কলকাতায়। তবে কলকাতার পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আমি তারপর, কতবার ছুটে গিয়েছি 'অরণ্যের দিনরাত্রি' দেখতে। ফিরেও এসেছি। 'হঠাৎ নীরার জন্য' মন কেমন করে উঠতো বলে।
এভাবেই কেটেছে 'নীললোহিত', 'সনাতন পাঠক', 'নীল উপাধ্যায়' আর 'কৃত্তিবাস'কে সঙ্গে নিয়ে। তারপর হঠাৎ একদিন খবর পেলাম 'মার্গারেট ফুল হয়ে ফুটে আছে'। এদিকে 'নীরার অসুখ'! ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব? আসলে এ এমন এক 'সোনালী দুঃখ' যা 'অন্য জীবনের স্বাদ' এনে দেয়। এ আমার 'ভালোবাসা, প্রেম নয়'। সেই ভালোবাসার টানে আমি 'সংসারে এক সন্যাসী' হয়ে খুঁজেছি 'মনের মানুষ'। যার সন্ধানে আমি 'কালোরাস্তা সাদা বাড়ি' ফেলে রেখে দাঁড়িয়েছি 'এলোকেশী আশ্রম'-এর সামনে। কিন্তু কোথায় সেই 'মনের মানুষ'? 'কোথায় আলো'? এই সন্ধান আমার 'স্বপ্নের নেশা' নয়, 'স্বপ্নসম্ভব' করব বলেই 'শিখর থেকে শিখরে' 'এখানে ওখানে সেখানে' 'সমুদ্রের সামনে' ছুটে গিয়েছি। কিন্তু 'দর্পনে কার মুখ'! 'রূপালী মানবী'কে দেখে শুধিয়েছি 'তুমি কে?' 'মেঘ বৃষ্টি আলো' মেখে 'বুকের পাথর' সরিয়ে রেখে 'মায়া কাননের ফুল' আমার হাতে দিয়ে সেই 'কনকলতা' বলেছিল সেই 'সরল সত্য'। ও নাকি 'স্বর্গের নীচে মানুষ'। শুনেই মনে হয়েছিল, ও আর আমি সেই 'অমৃতের পুত্র কন্যা'। যার কাছে আমার 'স্বপ্ন লজ্জাহীন'। 'কেউ জানে না' ও 'কয়েকটি মুহুর্ত' আমার সামনে দাঁড়িয়েই 'বুকের মধ্যে আগুন' জ্বেলে দিয়েছিল। সেই আগুনের 'আলপনা আর শিখা' ছুঁয়ে বলেছিলাম আমি 'ভালো হতে চাই'। কিন্তু যতবার 'দুজনে মুখোমুখি' হয়েছি ততবার ও বলেছে 'কেউ কথা রাখে না'। এভাবেই আমার 'বেঁচে থাকা' 'বিজনে নিজের সঙ্গে'।
বি.দ্র.- ইনভাইটেড কমার মধ্যে ব্যবহৃত শব্দবন্ধ সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত বিভিন্ন গ্রন্থের নাম।