Featured Post
রণেশ রায়ের গল্প
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
একাল থেকে সেকাল
রাতে ঘুম আসে না। আধমরা হয়ে পরে থাকি । মাথায় নানা চিন্তা কিলবিল করে। ঘুম জানে স্নায়ুতন্ত্র এত ভিড়ের মধ্যে তাকে জায়গা দিতে পারে না। সে সরে যায়। ভিড় কমলে সে আবার আসে। তখন সাদরে আশ্রয় পায়। তবে সেটা অল্প সময়ের জন্য। সকালে অনেক বেলায় বিছানা ছাড়ি । বাইরে মেঘ আর কুয়াশা তার সঙ্গে রাস্তা থেকে ভেসে আসা ধুলো।
পোড়া পেট্রল ডিজেল রোদের পথ আগলে রাখে। তাই ছুটির দিন না হলে রোদের দেখা নেই। ছুটির দিন আকাশ পরিস্কার থাকলে একচিলতে রোদ বারান্দার এক কোনে এসে হাসি তামাসায় গড়াগড়ি খায় । ছুটি বলে পেট্রল ডিজেল-এর দৌরাত্ব না থাকায় রোদ চেষ্টা করে ঘরে ঢুকতে। কিন্তু পারে না। দরজা বন্ধ থাকে।তাকে আজকাল আর ঢুকতে দেওয়া হয় না। ভয়, তার সঙ্গে যদি চোর বাটপার ঢুকে পরে ! পরিবেশটা আমার মতই মুখ গোমরা করে থাকে।
সন্ধ্যের পর মনে হয় আকাশে কেউ কালো চাদর পেতে দিয়েছে। পূর্নিমার জোৎস্না আলোর চ্ছ্টা হয়ে বারান্দায় পৌছয় না। যেন রবিমামার সঙ্গে চাঁদ মামীর বিরহ। তাই মামী আঁধারের অন্ধকারে বিমর্ষ। অথচ এই সেদিনও রাতে দুই বারান্দায় আলোর চ্ছ্টা। মামীর পূর্ণ যৌবন।বহুতল বাড়িগুলো তখনও তৈরি হয়নি। দুষণে বাতাস এত ভারী হয়ে যায়নি।আলোর অবাধ আনাগোনা। বাচ্চারা সেই আলোয় খেলা করত।
ঘরে চেয়ারে বসে ঝিমিয়ে পড়া আমার মাথায় ভিড় করে কর্মোচ্ছল এই সেদিন। আমাকে আমার অতীত মনে করিয়ে দিয়ে সেখানে ফিরে যেতে উৎসাহ দেয়। কিন্তু আমার সামর্থ আমাকে সেখানে ঘেসতে দেয়না। আমি অতীত চারণা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি।
আমরা সেকাল থেকে একালে পৌছেছি।মনে হয় এই সেদিন, যেন সেবেলা। তাও প্রায় পঞ্চাশ বছর হয়ে গেছে। বাবা মা ভাই বোনেরা মিলে বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাড়িতে এত ঘর হয়নি। তা সত্ত্বেও জায়গার অভাব হত না । সবাই মিলেমিশে থাকতাম । খুব ভোরে না হলেও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতাম ।
দক্ষিন আর পুবের বারান্দা সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠত। সেখানে দাড়ালে দুরের প্রশস্ত রাস্তাটা দেখা যেত। সে আকাশচুম্বী বাড়ির আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখত না। সেগুলো তখনও গড়ে উঠে তাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়নি। দুদিকে বেশ কয়েকটা খোলা মাঠ। আম কাঠাল নারকেল তাল সফেদা গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে অসুবিধে হত না। বকুল শিউলি ফুলের গন্দ্ধে ভরা বাতাস মৌ মৌ করত ।
দুধার ধরে কৃষ্ণ চূড়া গাছ তার ফুলের ডালা নিয়ে হাজির । লাল রঙ-এ রাঙ্গাতে চায় সব্বাইকে। বই ধরে তাদের কেউ চিনিয়ে দিত না। বাবার সঙ্গে হাত ধরে হাটতে হাটতেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যেত সেই ছোটবেলায়। আর কেউ তাদের চিনতে ভুল করত না । ছেলে মেয়েরা সকালে মাঠে একপ্রস্ত দৌরাত্ব করার পর ঘরে ফিরে স্কুলের তাড়া বোধ করত। কাছেই পাড়ার স্কুল। তাই সময়মত পৌছতে দেরী হত না। এর জন্য বাবা মায়ের রক্ত চক্ষু দেখতে হত না। তাদের সময় কোথায়? একজনের অফিসের তাগিদ, আরেকজন রান্নাঘরে।
পাড়ায় একটু দূরে দূরে ছড়িয়ে থাকা দোকান। কোনটা পাকা বাড়ির নিচে একটা ছোট্ট ঘরে, কোনটা একটা গ্যারেজে আবার কোনটা রাস্তার ধারে বেড়া বেঁধে। এরই মধ্যে কেউ সেগুলো পাকা করে নিয়েছে।চায়ের দোকান, মনোহারি দোকান, মুদির দোকান। চায়ের দোকানে দুবেলা আড্ডা বসে। জানা যায় পাড়ায় কোন বৃদ্ধ বৃদ্ধা মারা গেলেন, কে অসুস্থ। পাড়ার কোন ছেলে কোন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে সে খবরও পৌছে যায় যথাসময়ে। তাছাড়া খেলার খবর রাজনীতি অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা থেকে তর্ক এমনকি হাতাহাতিও হয়।
তাতে সম্পর্ক খারাপ হয় না। বরং আড্ডার বাঁধনটা আরও শক্ত হয়। পরের দিন আসার আগ্রহটা বাড়ে।এরই মধ্যে যে যার অফিস করে, যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তারা তাদের কাজ ঠিক করে নেয়। আবার এই দোকানগুলো পাড়ার বাড়ি পাহারার কাজ করে। আলাদা করে নিরাপত্তার লোক রাখতে হয় না।দিনে দুপুরে কেন রাতেও কোন বাড়িতে আপদ বিপদ হলে সাহায্যের লোকের অভাব হয়নি।
বাড়িতে যেন চাঁদের হাট। কলেজের পাড়ার বন্ধুবান্ধবের অবাধ আসাযাওয়া। মায়ের ওপর অত্যাচার। মাকেও দেখা যেত অবলিলায় সব মেনে নিতে । শুধু নিজের বাড়ির লোকজনের জন্য নয়, বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন যে যখন আসত সবার জন্য চা তার সঙ্গে মুড়ি বা কিছু। পৌষ মাসে পিঠে।কোথা থেকে দিন কেটে যেত।আমরাও সময়ের সিড়ি বেয়ে পৌছেছি যৌবনে। বাবা অবসর নিয়েছেন।
বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। এক এক করে সংসার পেতেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কখন যেন আমরা আমি হয়েছি। আমি মানে নিজে আর আমার স্ত্রী কন্যা পুত্র। তাও বাবার আমলের ধাঁচ-টা বজায় আছে। বন্ধুবান্ধবরা আসে। তাসের আড্ডা বা গান বাজনা হয়। দোকান থেকে মুড়ি তেলে ভাজা। বাজারে ফাস্ট ফুড চালু হয়েছে। পয়সার যোগার থাকলে মাঝে মধ্যে আসে। তাতে আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকে কিন্তু মুড়ি তেলেভাজার মত জমে না। তবে মায়ের মত স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করতে ভরসা পাই না। অবশ্য চায়ের নির্দেশটা বিরামহীন।
আমাদের ছেলেমেয়েদের মুড়ি তেলেভাজার দিকে আকর্ষণ কম। তাদের কাছে প্রিয় পিজা বা রোলের মত ফাস্ট ফুড। ওরা মিষ্টি খেতে ভালবাসে না, নোন্তাই ওদের প্রিয়। মেয়েদের মধ্যে শাড়ির চল কমেছে। সালোয়ার কামিজ চালু হয়েছে। এতে অনেকের আপত্তি।আমার অবশ্য যুক্তিটা আলাদা।
মেয়েরা এখন অনেক বেশি কাজে বেরোয়। সালোয়ার কামিজে তাতে সুবিধে। কিন্তু পোশাক যে দিন দিন স্বল্পাবাসে পরিনত হতে চলেছে ! এর পর কি নির্বাস? তাতে আমার আপত্তি। তবে নিজে নিজেকে বুঝিনা। আপত্তিটা কথায় ? শালীনতার কারণে। না একটা গড়ে ওঠা সংস্কার বশত।বোধহয় দুটো-ই। ছেলেদের ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্ত লক্ষনীয়। তারা কসমেটিক ব্যবহার করছে।কানে দুল পড়ছে। অর্থাৎ চলন বলনে লিঙ্গ পার্থক্য কমছে।একটা সমলিঙ্গীয় প্রবণতা।
ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সরকার সরকারী আর সরকারী সাহায্য পাওয়া স্কুলে প্রাথমিক বিভাগ থেকে ইংরেজি পড়ানো তুলে দিয়েছে। তাতে পাড়ায় পাড়ায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের রমরমা।আমরা সরকারের যুক্তির সঙ্গে একমত নই।তাই ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেই পড়াতে হয়।তবে যে সে স্কুল নয়, প্রথম করার স্কুল। যত দুরে হোক না কেন।মা সঙ্গে যাবেন ।
লেগে থাকবেন যেন দ্বিতীয় নয় প্রথম হয়। অযথা সময় নষ্ট নয়। স্কুল থেকে একেবারে কোচিং-এ। আমাদের সময় যা হয়েছে হয়েছে কিন্তু এখন কি আর সেটা চলে ! কম্পুটারের যুগ। তার ভাষা ইংরেজি।এখনত সরকারও সেটা বুঝছে। তবে অনেক মূল্য দিয়ে। ছেলে মেয়েদের যোগ্য করে তোলায় আমরাও পুরোহিত। প্রতিযোগিতার যজ্ঞে তাদের আহুতি দিতে হয়। প্রত্যেককেই প্রথম হবার শপথ নেওয়ানো হয়। ভর্তি থেকে পরীক্ষা স্কুল কলেজ পর্যন্ত চলে এক দৌড়।
মা-বাবারা ছেলেমেয়েদের থেকে এই দৌড়ে এগিয়ে। সাদ্ধি না থাকলেও দ্বিতীয় নয় প্রথম হতে হয়।কেন মঞ্জু অঞ্জু থেকে এক নম্বর কম পাবে ! কলেজে পড়াশেষে ম্যানেজমেন্ট। টাকা যোগার করার প্রতিযোগিতা। ব্যাংক দিলে ভালো, নয়তো ধার। দশ লাখ বারো লাখ। কই বাত নেহি । পাশের পাড়ার তোলাবাজের ছেলে আগেই ভর্তি হয়ে গেছে, আমি বাদ !
সহকর্মী প্রচুর টিউশন করে টাকার ব্যবস্থা করে রেখেছে। কমল বোকা।আগে বোঝেনি। নীতি ধরে রেখে সেটা করতে পারেনি।মেয়ে ভালো হওয়া সত্ত্বেও এই বুঝি ফসকে গেল। এখনো টাকার যোগান হয়নি। আঙ্গুল কামরাচ্ছে। স্ত্রীর গঞ্জনা আর মেয়ের হতাশা।। সব দেখে কমলের আত্মহত্মা করতে ইচ্ছে করে।
দেশ এগোচ্ছে আমরা তার পেছনে পেছনে ছুটছি। রাস্তায় দৌড়চ্ছে হরেক রকমের গাড়ি। ওপাড়ার মুর্খ প্রোমোটার পাখির বন্ধু গারু একটা বিদেশী গাড়িতে চেপে দৌড়ে এগিয়ে গেছে। আর পাখির একটা ন্যানো-ও জুটল না ! তাকে অটো করেই দৌড়তে হচ্ছে। সে কি পারে!। ছেলে ত একদিন বলেই বসলো 'তোমার দ্বারা কিসসু হবে না।তুমি একটা স্কুল মাস্টার, বুদ্ধু ।'
কমল পাখি এরা সবাই একালের ছেলে। যখন সেকাল ছিল তখনকার আমার ছাত্র। সন্তানের মত।আমি এবেলা আর সেবেলার মধ্যে বার বেলার মানুষ। ছেলে মেয়ে পুরোপুরি একেলে হয়ে যায়নি। তাই বাঁচোয়া। তারা আমাকে বুদ্ধু বলেনি। তবে সেকাল থেকে একালে পৌছেছে পাখি অলোকরা আমাদেরই হাত ধরে । অর্ধেক মানুষ করেছি। না ঘরকা না ঘাটকা। তাই তারা বুদ্ধু । পুরো মানুষ হলে হয়তো বুদ্ধু নয় সেয়ানে হত ।
সংস্কার হয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক সংস্কার, সান্স্কৃতিক সংস্কার আর নিজেদের সংস্কার।দেশ বিদেশের পুঁজি বিস্তর আসছে, প্রযুক্তি ঢুকছে ,ওভারব্রিজ ধরে গাড়ি ছুটছে, একের পর এক শহর হচ্ছে , বহুতল বাড়ি উঠছে, পিঠে ল্যাপটপ বেধে ছেলেমেয়ে চলছে আর গিন্নিরা মলে বাজার করছে।
একই সঙ্গে ধনিরা আরও ধনী হচ্ছে, কালো টাকায় ফুলছে আর গরিবরা মরছে — না খেয়ে মরছে, অপুষ্টিতে মরছে। আমরা সবাই দৌড়চ্ছি। মুখে ভেউ ভেউ ডাক । সামনে একাল। সে চেচাচ্ছে ' হাতি চলে বাজার, কুত্তা করে ফুকার ————-" এভাবেই আমি সেকাল থেকে একালে পৌছেছি। ক্লান্ত, শ্রান্ত, বিমর্ষ।
পাড়ার আড্ডাটার বয়স হয়েছে। সেও নুব্জ।সেখানে ভিড় কমেছে যেমন তেমনি তার আয়ু কমেছে। যাবার তেমন জায়গা নেই। বাড়ি থেকে কম বেড় হই। পাড়ার মোড়ে বাজারটারও সংস্কার হয়েছে। পুরোন বাজার আর তার পাশে ছোট ছোট দোকানগুলো ভেঙ্গে একটা বিরাট মল হয়েছে। তার সামনে দিয়ে গেলে মনে হয় সে আমায় ডাকছে। বলছে, ' আসুন চা খেয়ে যান।
এক কাপে দুকাপ।' আমার স্মৃতিতে তখন মুকুন্দদার চায়ের দোকান।সেই আড্ডা আলাপচারিতা। আমি অতীত সন্ধানী হয়ে উঠি। কিন্তু মানিয়ে নিই। ওরা বলছে ঠান্ডা ঘরে নরম পরিবেশে কেনার বাড়তি আনন্দ। বাড়তি পাওনা, মূল্য সংযোজন — ভ্যালু এডেড। এককাপ চা খাব। কিন্তু আমার দোকানে ঢোকা হয় না। পকেটে পাঁচ টাকা । মনে পরে যায় সেদিনের এক টাকার চায়ের চুমুক। আবার অতীত সন্ধানী হয়ে উঠি, খুজি মুকুন্দদার চায়ের দোকান।
মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। চেন্নাইয়ে থাকে। নাতি স্কুলে পড়ে।সারা বছর পড়াশুনোর চাপ। স্বামীর অফিসে ছুটি মেলা ভার। বছরে একবার ছুটি পেলে বেড়াতে যাওয়ার তাগিদ। তবে মধ্যে মধ্যে আসে। আমরাও কালেভদ্রে যাই। ছেলে মুম্বাই -এ। মোটা মাইনের চাকুরী। বিয়ে করেছে। দিল্লিতে শ্বশুর বাড়ি। তাই ছুটি ছাটায় স্ত্রীর দাবি মেনে সেখানেও যেতে হয়।ভাগের মা গঙ্গা পায়না। আমরা বুড়ো বুড়ি একা। থুড়ি একা নই, দোকা। বিছানা অনেকদিন হলো আলাদা হয়েছে। তাই একা বলি কি করে? তবে পৈত্রিক বাড়ি। ভাইয়েরা তাদের ভাগে থাকে।
একসঙ্গে থাকার দৌলতে যৌথ পরিবার। তবে হেসেল আলাদা। বাবা মা থাকতেই এই ভাগ। ভালই হয়েছে । এর ফলে সম্পর্কটা চলনসই। আমি একে সমবায় গোছের পরিবার বলি। তবে বাইরের লোক যৌথ পরিবার বলেই জানে। যৌথ পরিবার এখনও টিকে আছে দেখে সবাই তারিফ করে। আজকের ভাঙ্গনের মুখে আমরা অখন্ড। এতে এক আত্মতৃপ্তি বোধ করি বৈকি।
ভেতরে ভাঙ্গনটা বাইরে জানতে দিই না। এতে ভাইদের সবার স্বার্থ সিদ্ধ হয়। যেমন বছরে পুজোর চাঁদা একটা পরিবার থেকে দেওয়া হয় বলে মাথাপিছু কম দিতে হয়। তাছাড়া বিভিন্ন দৌরাত্বের তীব্রতা কম থাকে। চোর বাট পাররাও বোধ হয় একটু সামলে চলে। প্রমোটার দালাল পাঠাতে ভরসা পায় না । তাছাড়া আপদ বিপদে কিছুটা সাহস পাওয়া যায়। সুতরাং পাশের ফ্ল্যাট বাড়ির বারুজ্যে মুখুয্যেদের মত অনাথ নই।বারুজ্যেবাবুত একেবারেই অসহায়। স্ত্রী মারা গেছেন কিছুদিন হলো।একমাত্র ছেলে।
সে পড়াশুনায় খুব ভালো।বেন্গালুরে চাকুরিরত। নাতিটি-ও নাকি অসামান্য হয়েছে।সে এখন বিদেশে । একসময় খুব গর্ব করতেন নাতি অসামান্য বলে। অবশ্য গর্ব করারই বিষয়। মাধ্যমিকে তৃতীয় উচ্চমাধ্যমিকে চতুর্থ। তারপর মুম্বাই আইআইটি হয়ে আমেদাবাদের আইআইএম। নামী বহুজাতিক সংস্থায় বিরাট চাকুরিজীবি। অদূর ভবিষ্যতে সিইও নিশ্চয়ই। কোন দাদু গর্ব করবে না বলুন! তবে এখন আর বারুজ্যে বাবু নাতির অসাধারনত্ব নিয়ে তেমন কিছু বলেন না।
আমরা বললে তিনি চুপ করে থাকেন।বারুজ্যে বাবুর সঙ্গে প্রায়ই একটু দুরে রকে বসা ছেলেদের লাগে। বারুজ্যে বাবু মনে করেন ওরা সব বকে যাওয়া ছেলে। ওদের প্রশ্রয় দেওয়ার কোন মানে হয় না। আমার স্ত্রীর আবার ওদের সঙ্গে ভাব। ওরাও মাসীমা বলতে অজ্ঞান। আমার স্ত্রীর এই ব্যাপারটাকে আদিখ্যেপনা বলে মনে হয়।ওদের এত প্রশ্রয় দেওয়া কেন । অবশ্য আপদে বিপদে ওরাই সহায়ক হতে পারে। তাই বারুজ্জেবাবুর উন্নাসিকতা আর ওদের প্রতি এই বিরূপ মনোভাবও আমি পছন্দ করি না।
বারুজ্জেবাবুর ছেলে প্রায়ই আসে। ছেলেটি ভালো। আমার থেকে অনেকটাই ছোট। বেশ মিশুকে । খবরা খবর রাখে।কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়।ওর বাবা যখন প্রমোটরকে বাড়িটা দিয়ে দেন তখন ও আপত্তি করেছিল। এই নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়। আমার কাছে এসেছিল বাবাকে বুঝিয়ে বলার জন্য। আমি বারুজ্যে বাবুকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছি।তবে উনি যে যুক্তিটা দেখালেন তাও অস্বীকার করা যায় না।
উনি বললেন যে একা একা থাকেন। সব দিক দিয়ে একটা অনিশ্চয়তা। ছেলে ফিরলেও থাকার অসুবিধে হবেনা।ওর জন্য একটা ফ্লাটত আছেই। উনিই বা আর কতদিন। তখন ছেলেও একা হয়ে যাবে।বুঝবে কেন এটা করতে হয়। নিজের ঘাম রক্তে তৈরী বাড়ি কে ছেড়ে দিতে চায় ! আমি যাই মনে করিনা কেন উনার অবস্থার থেকে উনি কথাটা যে সবটা ভুল বলেছেন তা নয়।
আমরা ভাইরা একসঙ্গে থাকি বলে এই একাকিত্ব আর অনিশ্চয়াতাটা বুঝি না। লোভে বোধহয় সবাই প্রমোটর -এর কাছে বাড়ি দিয়ে দেয় না । সেটা সবটা সত্যি নয় । আজ পরিবারের যে ভাঙ্গন,পরিবার পরিকল্পনা সহ সমাজের যে বিবর্তন প্রক্রিয়া এটা তারই ফলশ্রুতি।
এর জন্য কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করা যায় না। আমি বারুজ্যে বাবুর ছেলেকে সেটা বুঝিয়ে বলি। ও বোঝে। তবে আমি জানি যে ওই ফ্লাট বাড়িতে কারও সঙ্গে কারও ভালো সম্পর্ক নেই। বারুজ্যে বাবুর যুক্তিটা কাজ করে না। তবে অবশ্য এখানেই এমন দুএকটা ফ্লাট আছে যেখানে সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। প্রত্যেকে সেই অর্থে নিশ্চয়তা পায়, তাদের একাকিত্ব দূর হয়।
একটু দুরে দাসবাবু থাকেন। আমার থেকে বয়সে কিছু ছোট। সাধারণ সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে এখন বাড়িতে। দুই ছেলে ছেলের বৌদের নিয়ে বেশ আছেন। বহুদিন ধরেই আমার সঙ্গে পরিচয়। এখনো শক্ত সামর্থ। আমাদের মত বুড়িয়ে যাননি। বাজারহাট সব নিজেই করেন। দুই নাতি সর্বক্ষণের সাথী।পাড়ারই একটা স্কুলে পড়ে।
দাস্ বাবু নিজেই ওদের পড়ান। ছেলেরা কেউ তেমন কিছু করে না। একজন ছোট একটা কোম্পানির কেরানি আরেকজন একটা খাবার দোকান চালায়। মা মারা গেছেন কিছুদিন আগে। এক দুরারোগ্য রোগে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন। তখন ছেলেদুটি পালা করে হাসপাতালে রাত জেগেছে। ছেলের বৌরা ঘর সামলেছে। দাস বাবুকে কিছু বুঝতেই দেয় নি। তিনি শুধু নাতি সামলেছেন।
দাসবাবুর প্রসঙ্গ উঠলে বারুজ্জেবাবু ওকে সেকালের লোক বলে টিপ্পনি কাটেন । নাতি দুটোকে পাড়ার বাঙ্গলা মাধ্যম স্কুলে পড়ান বলে ওকে বড় হিসেবী বলে মনে করেন। আমি যদি বলি যে ওদের আর্থিক অবস্থা তো ভাবতে হয়।
উনি বলেন আজকাল বাড়ির কাজের লোকেরাও ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ায় । আসলে ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব। আমিও ভাবি বোধহয় তাই। আমাকেও তো বাড়িতে সকলে বলে যে ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব বলেই আমি মেয়েকে বাঙ্গলা মাধ্যমে পড়িয়েছি।ছেলের ক্ষেত্রে ভুলটা শুধরে নিয়েছি। বারুজ্যে বাবুর বাড়ি এখানে হলেও এ পাড়ায় বিশেষ পরিচিতি নেই ।
উনি এখানে এসেছেন বছর পঁচিশেক আগে। থাকতেন বালিগঞ্জে এক অভিজাত পাড়ায়। সেখানকার সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলতেন। এ পাড়ার লোকজনদের তেমন চেনেন না। তাই বোধ হয় একেলে হয়েছেন আগেই। জানলাম যে বারুজ্যে বাবু কালই মুম্বাই যাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় ছলে মারাত্বক জখম। হাসপাতালে ভর্তি। একা, আমার মতই ঝিমোনো মানুষ। দৌড়তে হবে। সঙ্গে কেউ নেই।আমার ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে । তবে কি আর করা যাবে। ঠিক আছে, প্লেনে যাবেন আসবেন। তেমন সমস্যা হবে না। আমি ভাবি।
বেশ কিছুদিন পর বারুজ্যেবাবু ছেলেকে নিয়ে ফিরে এসেছেন। ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি। একটা পা এখনো অচল। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে হয়। খবর পেয়ে আমি গেলাম ছেলেকে দেখতে। আমার ওর প্রতি একটা দুর্বলতা তো আছে। ছেলেটা সহজ সরল বিনয়ী ভদ্র। গিয়ে ওর পাশে বসি। কথা প্রসঙ্গে জানলাম যে ওর ছেলে আসতে পারেনি।
কোন রাখঠাক না করেই ছেলের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে সে বলে যে আসতে পারেনি বললে ভুল বলা হয়, আসেনি। ও আরও বলে যে বোধহয় ছেলে অসাধারণ না হলেই ভালো হত। আমি বুঝি বারুজ্জেবাবু কেন আজকাল নাতির অসাধারনত্ব নিয়ে আর তেমন গর্ব করেন না। তবে ছেলে এসব বলল বলে তিনি যে ক্ষুন্ন হয়েছেন সেটা বুঝলাম। আমি ফিরে আসি।
আসতে আসতে ভাবি দাসবাবুর এ সমস্যাটা নেই। আবার মনে হয় আমরাইতো ছেলেমেয়েদেরকে অসাধারণ করার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলাম। এখন কি নিজেদের স্বার্থে ওদের ওপর দোষ চাপাচ্ছি ? আমাদের হাত ধরেই সেকাল একালে পৌঁছেছে।
এভাবেই দিন চলে। তরঙ্গহীন একঘেয়ে। মাঝেমধ্যে এখানে ওখানে বেরই। না হলে ঘরেই বন্দী। একদিন বারুজ্জেবাবু সকালের দিকে হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত। ভীষণ নার্ভাস। কথাই বলতে পারছেন না। একটু বসে নিয়ে জানালেন যে উনার পাশের ফ্লাটে মন্ডল বাবু হার্ট এটাকে মারা গেছেন রাতে কোনো এক সময়। মন্ডল বাবু তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। স্ত্রী একেবারে শয্যাসায়ী।
তার তদারকি করতেন মন্ডল বাবু নিজেই। ওদের সন্তান নেই। মন্ডল বাবু খুব আত্মনির্ভর হওয়ায় ওদের চলে যাচ্ছিল। সব শুনে আমার স্ত্রীর যেটা প্রথমেই মনে হলো সেটা হলো : এখন মন্ডল বাবুর স্ত্রীর কি হবে ! দেখাশুনো কে করবে ? মন্ডল বাবুর টাকাপয়সার অভাব নেই ঠিকই। কিন্তু সেটাইতো সব নয়। সেই চিন্তাতে যখন আমার স্ত্রী ব্যস্ত তখন বারুজ্জেবাবু ভাবছেন এখন কি ভাবে কি করা যায়।
কাকেই বা খবর দেবেন বা দাহ করার ব্যবস্থাই বা কি হবে । যাই হোক আমি বারুজ্যে বাবুকে নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি বারুজ্যে বাবুর 'বকাটে ছেলেরা' হাজির। ওদের দেখে বারুজ্যে বাবু বললেন এরা আবার এখানে কেন? বোধ হয় কোনো ধান্দা আছে। আমার সঙ্গে ওদের ভাব আছে। স্ত্রীর কল্যানে। ওরা জানালো যে ওদের মাসিমা ওদের খবরটা জানিয়েছে।
এর পর ওদের দায়িত্ব দেখে বারুজ্যে বাবুতো অবাক। ওরা একজন ডাক্তার আনিয়ে তার থেকে ডেথ সার্টিফিকেট যোগার করেছে। এ কাজটা তেমন সহজ নয়। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে । মন্ডল বাবু এ পাড়ায় নতুন। অচেনা লোককে ডাক্তার সার্টিফিকেট দিতে চান না। সেটা এরা করিয়েছে যা আমাদের মাথায় ছিল না। এরপর ফুল আনা থেকে শব নেওয়ার গাড়ি সব ব্যবস্থা করে। যাবার সময় সঙ্গে কেউ যাবে কিনা জানতে চায়।
দেখলাম ফ্লাটের একজন অল্প বয়েসী লোক এগিয়ে এলো। আর কেউ নয়। সবাই কোন না কোন কাজ আছে বলে কেটে পরেন। আমি লজ্জায় পড়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করি। ছেলেরা আমার বয়স আর শরীর বিবেচনা করে আমাকে নিষেধ করে।
কিন্তু আমি তখন ওদের সঙ্গে অনেক স্বাচ্ছন্দ আর নিশ্চিত বোধ করে গাড়িতে উঠি। গাড়িতে চলতে চলতে বারুজ্জেবাবুর ছেলের কথা মনে পড়ল—- 'ও এত অসাধারণ না হলেই বোধ হয় ভালো হত'। বারুজ্জেবাবুও বোধহয় ঘরে বসে ভাবছেন নিজেকে পাড়ায় এত অনিশ্চিত ভাবার কারণ নেই। বকাটেগুলো তো আছে।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে