Featured Post

প্রবন্ধ ।। সহজ পাঠের সহজ কথা ।। অমৃত দে




 সহজ পাঠের সহজ কথা

                        অমৃত দে


প্রথম ভাগ
★★★★★★★

ইন্টারনেটের বিশ্বায়নে সাহিত‍্য যে "সোনার তরী" --এ কথার প্রমান চাইলে প্রথমেই বলবো সহজ পাঠের সহজ কথা ।নন্দলালের অনুপম তুলির টান আর কবিগুরু-র লেখনী তে প্রত‍্যেকে যেন নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে আর খুঁজে পায় দৈনন্দিন জীবনের আটপৌরে বাঙালিয়ানার এক আশ্চর্য স্পর্শ ।

                  এবার আমরা সহজ কথাগুলির অন্তরঙ্গ বিশ্লেষনে প্রয়াসী হতে পারি_____
"ছোটো খোকা বলে অ আ / শেখেনি সে কথা কওয়া"--এ তো প্রতিটি বাড়ির সহজ সরল শিশুটির আধো আধো বুলির ভঙ্গিমায় নাটকীয়তা । " চ ছ জ ঝ দলে দলে / বোঝা নিয়ে হাটে চলে "--এ যে আমার গ্রাম বাংলার বর্ণময় শোভাচিত্র ।যেখানে ভাব, ভাবনা বিনিময় হয়;দর কষাকষি হয়; সব মিলিয়ে প্রাণবন্ত চিত্র ।"ত থ দ ধ বলে ভাই/আম পাড়ি চলো যাই"--অসাধারন লেখনীর দীপ্তিতে শিশুমনের ক্রিয়াকান্ড ফ্রেমে বন্দী হয়ে ধরা দিয়েছে ; আর দেবে না-ই বা কেন? সাহিত‍্য যে সমাজের দর্পন ।"প ফ ব ভ যায় মাঠে/সারা দিন ধান কাটে"--এ তো পল্লীবাংলার নবান্নের প্রস্তুতি । যেখানে গ্রাম‍্যবধূদের মাঙ্গলিক শাঁখের আওয়াজে কাক-পক্ষীরা-ও নবান্নের নূতন চালের সুধারস পান করতে আসে ।এতো নির্মল আনন্দ সহজপাঠ ছাড়া আর কোথায় পাওয়া যায় ? "বনে থাকে বাঘ" --শিশুর কৌতুহল শিশুপাঠ‍্য কাহিনিতে মুখ ঢেকে থাকে না, তা এক লহমায় স্তব্ধ হয়ে যায়।"হরিহর বাঁধে ঘর"--বাংলার আটপৌরে পল্লীসংস্কৃতি কে নতুন মাত্রা দান করে ।মাটির দেওয়াল খড়ের ছাউনি...স্নিগ্ধ সমীরণ জীবন জুড়ায় ।অবার " রাম বনে ফুল পাড়ে------তার বাড়ি আজ পূজা----" জীবনের এক শান্ত চিত্র ।এই চিত্র আমরা অন্তরের শ্রদ্ধা আর ভক্তি দিয়ে জগৎজননীর জন‍্য যে নৈবিদ‍্য সাজায় সেই সরলতার কাছে পৌঁছে দেয় ।"পুব দিকে ঘুম - ভাঙা/হাসে উষা চোখ রাঙা "----পূর্ব দিগন্তে উষার অরুণোদয়ে যেমন কালোরাত ঘুচে যায় এবং সমগ্র পৃথিবী আলোয় আলোময় হয় সেইসঙ্গে শুরু হয় "বনে বনে পাখি জাগে /জলে জলে ঢেউ ওঠে/ডালে ডালে ফুল ফোটে "--প্রকৃতির নানান পট পরিবর্তন_____এ দৃশ‍্য সাধারন চর্মচক্ষুতে প্রত‍্যক্ষ করতে কজন- ই বা পারে ? একমাত্র কবি রবি-ই প্রত‍্যক্ষ করেছেন"হাসে উষা চোখ রাঙা" ।"কোথাও বা ধানখেত জলে আধো ডোবা/ তারি পরে রোদ পড়ে,কিবা তার শোভা "--এ তো গ্রাম বাংলার নকশীকাঁথা মাঠের ছবি ।আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ধানের চারা রোপণের পর ধানখেত "জলে আধো ডোবা" থাকে আর তার উপর সূর্যের হাসি বর্ষিত হয়ে মনোরম শোভা বিস্তার করে ।এ থেকে আমাদের কি একবার ও মনে হয় না কবিগুরু শুধু কল্পনা বা আবেগের স্বর্গে বিচরণ করতেন না ; বাস্তবের কঠিন মাটিতে ও ঘুরে বেড়াতেন এবং সংগ্রহ করতেন মণি-মুক্তা ।আর এসব কিছু আমাদের উপহার দিতেন সাহিত‍্যের ডালিতে ।তবু ও কবির আক্ষেপ-----------------"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শিষের উপরে/একটি শিশির বিন্দু " । "বামি ঐ ঘটি নিয়ে যায় । সে মাটি দিয়ে নিজে ঘটি মাজে "----পাড়াগ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের অতিতুচ্ছ ঘটনাগুলি ও কবির দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি । "বাঁকা এক সরু গলি বেয়ে/জল নিতে আসে যত মেয়ে " অথবা "বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে "----এ ছবি তারাশঙ্করের রাঢ়বঙ্গের ।পাড়াগ্রামের কূলবধূরা সকালে গোবরছড়া দিত ,বিকেলে পুকুর থেকে জল আনতো,সন্ধ‍্যার সময় সন্ধ‍্যা দিত ,শাঁখ বাজাতো,মধ‍্যাহ্নে ভোজনের জন‍্য কবিকে আমন্ত্রন জানাতো ।পাড়া গ্রামের এই ছবি কবির ভাষায় স্পষ্ট ভাবে দেখা দিত-------
       "বঙ্গের বধূ বুক ভরা মধু
                জল লয়ে যায় ঘরে
         মা বলিতে প্রাণ করে আনচান
                 চোখে আসে জল ভরে"
"ঢেঁকি পেতে ধান ভানে বুড়ি/খোলা পেতে ভাজে খই মুড়ি"---অবশ‍্য এই ছবি আজ দুর্লভ সম্পদের মতো পবিত্র----অতি পবিত্র ।"কিছু মুড়ি নেব আর নুন । চড়িভাতি হবে "---স্বীকার্য সত‍্য যে আজকের শিশুরা সহজপাঠ ব‍্যাতিরেকে চড়িভাতি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত লাভ করতে পারে না । "তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাহিবার কালে /গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে "---যেন পরিপূর্ণ জীবনের অনাবিল আনন্দের ছবি ।সহজ পাঠের এই চিত্র আমাদেরকে বাল‍্যকালে পৌঁছে দেয় ঠিকই ; কিন্তু এখন সহজপাঠের কথার সঙ্গে শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিমণ্ডলে অনেক পরিবর্তন ।তবে এমন একটা সময় ছিল সেখানে সহজপাঠে শিশুদের জন‍্য লেখা কথা ও শিশুমনের ক্রিয়াকাণ্ড একাত্ম হয়ে যেত ।"কাল ছিল ডাল খালি/আজ ফুলে যায় ভরে /বল্ দেখি তুই মালী /হয় সে কেমন করে "---এ পঙক্তি নিছক ছন্দমিল যুক্ত শিশুপাঠ‍্য নয় ! এই প্রশ্নে শিশু মালী যেমন ভাবতে শেখে তেমনি আমি ও শিখি [প্রসঙ্গত উল্লেখ‍্য বয়স এর উল্লেখ না থাকলে ও মালী কিন্তু শিশু, কেননা শিশুদের জন‍্য এই লেখা ] "গৌর, জান ওটা কী পাখি ?ও তো বৌ কথা কও "---শিশুদের পাখি চিনিয়েছেন ; তবে এখানেই কবি ক্ষান্ত হন নি----"নদীর ঘাটের কাছে/নৌকো বাঁধা আছে, /নাইতে যখন যাই দেখি সে/জলের ঢেউয়ে নাচে "----এই চিত্র কবি ধার করেন নি । এখানে আমি ও বন্দী আপনিও , আর শিশুরা তো অবশ‍্যই । সবশেষে "আমি ভাবি ঘোড়া হয়ে মাঠ হব পার / কভু ভাবি মাছ হয়ে কাটিব সাঁতার / কভু ভাবি পাখি হয়ে উড়িব গগনে / কখনো হবে না সে কি ভাবি যাহা মনে " ----এই আক্ষেপ নিয়ে সহজ পাঠ প্রথম ভাগের সমাপ্তী ।আর এটাই বর্তমান শিশুদের কাছে প্রকট হয়ে উঠেছে , কেননা কেরিয়ার নামক মায়ামৃগের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে শিশুরা ক্লান্ত ।কেরিয়ার সর্বস্ব শিক্ষা কেড়ে নিচ্ছে শিশুদের আবেগ । তাই তারা আজ যান্ত্রিক -----নিঃসঙ্গ । একঘেয়েমি ক্লাস , পরীক্ষা , মূল‍্যায়নের খোলস থেকে তারা বেড়িয়ে আসতে পারছে না ।যেখানে শতাব্দীপ্রাচীন একঘেয়েমি শিক্ষার রুলবুক থেকে কবি বেরিয়ে এসে প্রকৃতির পাঠশালায় পাঠ নিয়েছিলেন , লাভ করেছিলেন মনের শান্তি , প্রাণের আনন্দ , আত্মার আরাম । কিন্তু আজকের শিশুরা বঞ্চিত-------অসম্পূর্ণ ।

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী