Featured Post
প্রবন্ধ: রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ভাবানুসারে তথা অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে কিছু কথা
বেশ কয়েকটা ইংরেজি কবিতার ভাবানুসারে লেখা কবিতা আমি ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছি। তার মধ্যে যেমন অনুবাদ কবিতা আছে তেমনি ভাবন্তরিত কবিতা আছে সেগুলো নিয়ে কিছু কথা বলার তাগিদ অনুভব করছি।
আমার লেখা ইংরেজি কবিতা ও তার ভাবানুসারে লেখা কবিতাগুলোর অনেকগুলো কালাতির্ন, ধ্রুপদী। স্কুল থেকে কলেজস্তরে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরেও এগুলোর পাঠকপাঠিকার সংখ্যা অগুনতি। অথচ দেখা যায় মূল কবিতাগুলো বিদেশি ভাষায় পাঠক পাঠিকাদের কাছে অনেক সময় সহজে বোধগম্য হয় না । ইংরেজি শব্দগুলোর সঠিক প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না। অনেক শব্দ কবিতায় চলতি অর্থে ব্যবহৃত হয় না। পুরো লেখাটা ধরে তার অর্থ বুঝে নিতে হয়। আমরা যারা অনুবাদ করি তারা শব্দ ধরে করি না । ভাবটা ধরে অনুবাদ করতে হয় । ভাবটাকে ধরে রাখার জন্য সঠিক শব্দ চয়ন জরুরি । শিক্ষাথীরা তাই মাতৃভাষায় ভাবানুসারে লেখা কবিতাটা যদি পড়ে নেয় তবে মূল কবিতাটা সহজে বুঝতে পারে। কবিতা বুঝতে হয় তার ভাব দিয়ে। শব্দের আভিধানিক অর্থ দিয়ে সেটাকে উপলব্ধির স্তরে নিয়ে যাওয়া যায় না। সেই অর্থে বাংলায় লেখা এই কবিতাগুলো ঠিক অনুবাদ কবিতা নয় ভাবটা বজায় রেখে যে কবিতা লেখা হয় তাতে লেখকের সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়। আর এই আত্মস্ত করার প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ হয় মাতৃ ভাষায়। তাই মাতৃভাষায় পড়ে পরে ইংরেজিটা সহজে পড়ে নেওয়া যায় কারণ কবিতার ভাবটা মাতৃভাষায় আমাদের শয়নে স্বপনে খেলা করে । তাই আমরা বলি বিদেশী ভাষা শিখতে গেলে তার রস পেতে গেলে মাতৃভাষার চর্চা করতে হয় ।
ভাষান্তরিত তথা অনুবাদ সাহিত্যের একটা বৃহত্তর দিক আছে যেটা নিয়ে দুচারটে কথা বলে নেওয়া যেতে পারে। আমি সাহিত্যের লোক নই। কোন বিদেশি ভাষায় পন্ডিত নই। তাও যেটা ভাবি সেটা বলার স্পর্ধা দেখাচ্ছি। এছাড়াও নিজে কিছু কবিতার ভাবান্তরের চেষ্টা করেছি। সেগুলো পরিবেশন করার আগে নিজের কয়েকটা কথা নিজে বলে নিচ্ছি।
কোন কবিতার ভাষান্তর করা হলেও যিনি এটা করেন তাঁর ভাবনাটা নিজের অজান্তে হলেও জুড়ে যায় ভাষান্তরিত কবিতাটিতে কবির ভাবের সঙ্গে। কবিতাটি অন্য মাত্রা পায়। স্বাদটা বদলায়। এখানে যিনি ভাষান্তরিত করেন তাঁর স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটা আরও ভালো হতে পারে আবার কারও ভালো নাও লাগতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় সাহিত্য সৃষ্টিতে দুটো সংস্কৃতির মধ্যে বিরোধ ও মিলনের মধ্যে দিয়ে এক নতুন সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। এক ভাষাভাষীর মানুষ অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সঙ্গে মননের দিক থেকে একাত্ম হয়। মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুভাষ মুখোপধ্যায়ের অনুবাদ ধর্মী তথা ভাষান্তরিত কবিতায় সেটা আমরা পাই। বোধ হয় এটাকেই সংস্কৃতায়ন বলা হয়। ইংরেজিতে একে সিন্থেসিস বলা চলে। রবীন্দ্রনাথের ‘দুঃসময়’ এমনি একটা অসাধারন কবিতা যেটাতে ইংরেজ কবি কিটসের ‘Ode To A Nightangle’ কবিতার ভাবটি রবীন্দ্রনাথের স্বকীয়তায় প্রস্ফুটিত। মধুসূদনের কবিতার ভান্ডারও এই স্বকীয়তায় সমৃদ্ধ। নজরুলের কবিতায় উর্দু ভাষার অসাধারণ সমন্বয় ধরা পড়ে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘জেলখানার চিঠি’ তুরস্ক কবি নাজিম হিকমতের কবিতার অসাধারণ ভাষান্তর। আমরা যারা রাজনৈতিক কারণে জেলে ছিলাম তাদের এই কবিতাটা হৃদয় স্পর্শ করে যায়। মনে হয় আলিপুর প্রেসিডেন্সি বা বহরমপুরের কোন জেলে বসে আমাদের কোন কমরেড এই কবিতা লিখে গেছেন। এখানেই অনুবাদ কবিতার তাৎপর্য, সার্থকতা। সাহিত্যের আন্তর্জাতিকরণের মাধ্যম হলো এই ধরণের কবিতা। আন্তর্জাতিকতাবাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি এটা। একে নেহাৎ অনুবাদ কবিতা বলে নকল বলে উপেক্ষা করার একটা প্রবণতা অনেক উন্নাসিক ব্যক্তির মধ্যে আছে। তাঁরা এর মধ্যে লেখকের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব দেখেন না। সাহিত্যকে মানবতার মহাসাগরের মোহনায় মিলতে দেখেন না। এটা খুব দুর্ভাগ্যের। এক ধরনের অহং এর পেছনে কাজ করে।
কোন কোন কবিতার ক্ষেত্রে আমি মূল কবিতার ভাবে পরিবর্তন করেছি তবে কবিতার ধরণটা গ্রহণ করেছি। এখানে শুধু ভাষান্তর নয় ভাবান্তরও ঘটেছে। যেমন Composed upon Westminster Bridge (September 3, 1802),নামক William Wordsworth এর কবিতাটা ।
William Wordworth এর ‘Composed Upon West Minister Bridge’ কবিতায় কবি লন্ডন শহরকে এক অবিশ্বাস্য সুন্দর নগর বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর আমলে লন্ডনকে আধুনিক সভ্যতার প্রতীক বলে মনে করা হত। আমি আজ বিপরীতটাই আধুনিক নগর সভ্যতা সম্পর্কে মনে করি। তাই এ ব্যাপারে যে ভাবনাটা আমার ভাবান্তরিত কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে তা কবির ভাবনার অনুরূপ নয় বরং বিপরীত বলা চলে। বিশেষ করে ভারত সহ এশিয়া আফ্রিকার নগর সভ্যতা সম্পর্কে। তাই ভাবনার দিক থেকে মিল পাওয়া যাবে না। তবে ওনার কবিতাটা পড়ে আমি এই কবিতাটা লেখায় উৎসাহ পাই। উনার কবিতার ভাষা ও ধরণটাকে অনুসরণ করে তাই এটাকে উনার লেখার অবলম্বনে বলে উল্লেখ করেছি ঋণ স্বীকারের দায়টা থাকে বলে। একে ঠিক অনুবাদ কবিতা বা ভাব অবলম্বনে কবিতা বলা চলে না। বরং ভাবান্তরিত কবিতা বলে এটাকে উল্লেখ করা যায়। তবে চিন্তা ভাবনার ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে সাহিত্যের এগিয়ে যাওয়ার দিকটা প্রতিফলিত হয় যে বিষয়টা আমরা আগে আলোচনায় বলেছি।
যে কবিতাগুলো অনুবাদ করেছি তা ইউরোপের সাহিত্যের ইতিহাসে তিনটে সময়কালকে বেষ্টন করে আছে। কিছু কবিতা শিল্পবিপ্লবের আগে রোমান্টিক কবিতার যুগে লেখা। কিছু কবিতা শিল্পবিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে লেখা। শিল্প বিপ্লবের পরের সময়কালকে আধুনিক যুগ বলা হয়।
প্রথম পর্যায়ে শিল্প বিপ্লবকে আধুনিক সভ্যতার জনক বলে দেখিয়ে সেই সময়কালকে প্রগতির সময় বলে কবিতায় তুলে ধরার প্রবণতা দেখা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের সময়কালে সভ্যতার সংকটটা ধরা পরে বিভিন্ন কবির কবিতায়। এছাড়া আছে বর্তমানের আধুনিক কবিতার কালের লেখা কবিতা যাকে অনেকে আধুনিকোত্তর যুগ বলেন। কবিতাগুলো পড়লে তার ধরণ ও বিষয়বস্তুর এই সময়কালের মধ্যে যে বিবর্তন ঘটেছে তা ধরা পড়ে। টেনিসন, বায়রন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী প্রমুখ প্রথম দুটো যুগের কোন একটার প্রতিনিধিত্ব করেন। এই দুই যুগের কবিতাকে ক্লাসিকাল যুগের কবিতা বলা হয়। এছাড়া আছে কিছু বর্তমানের আধুনিক যুগের কবিতা যাকে আধুনিকোত্তর যুগের কবিতা বলা হয়। যেমন নিকিতা গিল। আর কিছু আছে শিল্প বিপ্লবের পর ও বর্তমান আধুনিক যুগের যুগসন্ধিকালের যুগের কবির কবিতা।
প্রথম পর্যায়ে শিল্প বিপ্লবকে আধুনিক সভ্যতার জনক বলে দেখিয়ে সেই সময়কালকে প্রগতির সময় বলে কবিতায় তুলে ধরার প্রবণতা দেখা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের সময়কালে সভ্যতার সংকটটা ধরা পরে বিভিন্ন কবির কবিতায়। এছাড়া আছে বর্তমানের আধুনিক কবিতার কালের লেখা কবিতা যাকে অনেকে আধুনিকোত্তর যুগ বলেন। কবিতাগুলো পড়লে তার ধরণ ও বিষয়বস্তুর এই সময়কালের মধ্যে যে বিবর্তন ঘটেছে তা ধরা পড়ে। টেনিসন, বায়রন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী প্রমুখ প্রথম দুটো যুগের কোন একটার প্রতিনিধিত্ব করেন। এই দুই যুগের কবিতাকে ক্লাসিকাল যুগের কবিতা বলা হয়। এছাড়া আছে কিছু বর্তমানের আধুনিক যুগের কবিতা যাকে আধুনিকোত্তর যুগের কবিতা বলা হয়। যেমন নিকিতা গিল। আর কিছু আছে শিল্প বিপ্লবের পর ও বর্তমান আধুনিক যুগের যুগসন্ধিকালের যুগের কবির কবিতা।
ওপরের বক্তব্যের সমর্থনে আমি নিজের দুটো তিনটে কবিতা যা ইংরেজি কবিতার ভাবান্তর তুলে ধরলাম।
ভাবানুবাদ
Ode to the West Wind
BY PERCY BYSSHE SHELLEY
বিখ্যাত ইংরেজ কবি শেলীর লেখা Ode to the West Wind নামক কবিতাটা অবলম্বনে নীচে কবিতাটা লেখা যেটাকে ভাব বজায় রেখে ভাষান্তর বলা চলে। মূল কবিতার ভাবটা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন পুরোনোর আবির্ভাব তিরভাবে জন্মমৃত্যুর সম্পর্কটা কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে। এটা প্রকৃতির জীবনে যেমন মানব সমাজে তেমন শ্বাশ্বত সত্য। ক্ষয় ও লয়ের সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্কটা কবি তুলে ধরেছেন। প্রকৃতির দুর্দমনীয় শক্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে এই ক্ষয় লয় ও সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অসাধারণ কাব্যিক মহিমায়। পশ্চিমা বাতাসকে শক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
পশ্চিমা বাতাস উৎসর্গ তোমায়
১
হে উন্মাদ পশ্চিমা বাতাস!
তুমি শরতের নিঃশ্বাস,
দেখা দেও না,
বয়ে চল অবিরাম,
তবু তোমার অশরীরি উপস্থিতি
শিহরণ জাগায় স্নায়ু জগতে আমার।
শীতের প্রাদুর্ভাব, তোমার প্রবাহে
তরু হতে ঝরে পড়ে
বিবর্ণ নিষ্প্রাণ পত্ররাশি
মরণোন্মুখ পাতা বাহার,
পক্ষাঘাতে জীর্ণ
পীত কালচে ফেকাসে লাল,
কোন জাদুকরের জাদুবলে
পলায়ন তার!
বন প্রাঙ্গনে যেন মহামারী,
আকাল আজ জঙ্গল অঙ্গনে।
বায়ু রাজ পশ্চিমা বাতাস,
তুমি তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যাও
হিম প্রবাহে
কোন এক অন্ধকার শৈত্য শয্যায়।
খোসা বীজ আশ্রয় নেয়
কুণ্ডুলি পাকিয়ে কোন এক
অন্ধকার কবরে হিমেল গহ্বরে।
তোমার সোহাগিনী বসন্ত ভগিনী,
তার বাঁশির সুর বেজে ওঠে
অদূরে স্বপ্নপুরী এ পৃথ্বীতে,
সে বেণুর সুরে প্রাণসঞ্চার,
রাখাল বালকের মত
তাড়িয়ে নিয়ে চলে ভ্রুনেরে,
বাতাসে নিঃশ্বাস তাদের
জেগে ওঠে সবে কলকল রবে।
হে উন্মাদ পশ্চিমা বাতাস,
তুমি অশরীরি, শোন তুমি,
তুমি ধ্বংস তুমি সৃষ্টি
রক্ষাকর্তা তুমি।
২
হে পশ্চিমা বাতাস, তোমার আঘাতে
টুকরো টুকরো মেঘ আকাশে ভাসে,
জীর্ণ পাতার মত ঝরতে থাকে,
বাতাস তুফান হয়ে ওঠে
সংঘর্ষ তুফানে মেঘে,
জোট বাঁধে মেঘেরা
কেঁপে ওঠে আকাশ বাতাস,
বাতাসে তুফান আকাশে বজ্রপাত,
বিদ্যুৎ চমকায়,
বর্ষের বিদায় লগ্নে রাতের শেষ বেলায়
তুমি ভয়ঙ্করী, ভেঙে কর সব চুরমার,
তুমি আগমনী গান গাও
নতুনের বার্তা বও,
জানান দাও তুমি,
মেঘ স্বর্গদূত হয়ে নামবে
বর্ষা হয়ে ঝরবে
আকাশ নেমে আসবে দিগন্তে,
সে মিলবে এসে পৃথ্বীর আলিঙ্গনে,
সমুদ্র উত্তাল ঢেউয়ে ঢেউয়ে,
জল সিঞ্চন বৃষ্টি প্রপাতে,
পোহাতি মাটি উর্বর হয়ে উঠবে,
প্রাণ সঞ্চার সবুজে সবুজে
অঙ্কুর মাথা তুলবে আকাশে।
৩
হে উন্মাদ পশ্চিমা বাতাস!
তুমি জাগাও তারে,
নিটেল স্বচ্ছ ভূমধ্যসাগর
গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে
নিদ্রামগ্ন সমুদ্র বক্ষে,
স্বপ্নে বিভোর সে এক স্বপ্নপুরি মাঝে,
শান্ত উদাসীন সে ঘুমায়
জাগিয়ে তোল তুমি তাকে;
তারই পাশে বাওয়াস উপসাগরে
নির্বাসিত সেই প্রস্তর দ্বীপ,
নিদর্শন ফেলে আসা সে অতীত,
স্বপ্নে দেখে সে
ভগ্নদশা অট্টালিকা গম্বুজ যত
নির্বাসিত তারা সমুদ্র গভীরে
কেঁপে ওঠে ঢেউয়ের তীব্র কম্পনে।
সমুদ্র তলে নীলাভ শৈবাল
মিষ্টি সুবাস ছড়ায় যত পুষ্পরাজ,
বয়সে ভারাক্রান্ত তারা,
তাদের বিদায় বেলা আজ।
হে শক্তিমান পশ্চিমা বাতাস
আটলান্টিকের পথ ধরে তুমি নেচে চল,
তোমায় পথ করে দিতে
আটলান্টিক দ্বিখণ্ডিত হয়
সমুদ্র গহ্বরে ফাটল ধরে,
সে পথে তুমি বাধাহীন দুর্নিবার,
তোমার দুর্বার গতিতে নতজানু সবে।
শেওলায় আচ্ছাদিত
সমুদ্রগর্ভে যত বৃক্ষরাজি
বিবর্ণ জরাজীর্ণ পত্ররাশি তার,
তোমার পরিচিত কন্ঠস্বর
ভয়ঙ্কর বার্তা বয়ে বেড়ায়
ভয়ে কুঁকড়ে মরে তারা,
ধূসর বিবর্ণ তাদের মুখ
আশ্রয় খোঁজে তারা।
হে বন্ধনহীন পশ্চিমী বাতাস
তোমার তান্ডব বার্তা শোনা যায়
ধ্বংসের মাঝে তোমার সৃষ্টি
তুমি শোন আগামীর পদধ্বনি।
৪
যদি আমি বিবর্ণ পাতা
ও: সর্বশক্তিমান পশ্চিমা বাতাস!
বয়ে নিয়ে চল আমায় আমার অন্তে
হলে আমি ত্বরিতগতি মেঘ
ভেসে চলি তোমার ডানায় ডানায়,
যদি আমি সমুদ্রের ঢেউ
দেখ আমার প্রলয় নাচন,
তোমার অঙ্গে অঙ্গে
তোমার হাত ধরে
ভাসি আমি তরঙ্গে তরঙ্গে।
হে বন্ধন হারা মুক্ত বাতাস
তোমার শক্তি শিহরণ জাগায়,
দাও আমায় ক্ষমতা তোমার।
আমি যদি শৈশব ফিরে পাই
তোমার বন্ধু আমি,
তোমার ক্ষমতার ভাগিদার,
তোমার সাথে বিচরণ আকাশে বাতাসে,
পাল্লা দিয়ে চলি গতিকে তোমার।
কিন্তু হায়! জীবনের এই দিনান্তে
অক্ষম আমি, তাই নিবেদন আমার,
হে উন্মাদ বাতাস! তুমি বন্ধু আমার,
সাহস জোগাও, আমাকে জাগাও,
সাঁতার কাটি ঢেউয়ে ঢেউয়ে;
এ নব বসন্তে পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায়
নতুন পাতায় নব জন্ম আমার
ভেসে চলি মেঘের ডানায় ডানায়।
জীবনের কণ্টক শয্যায় শুয়ে রই,
আঘাতে আঘাতে আমি বিদীর্ণ
আমি রক্তাক্ত, রক্ত ঝরে আমার,
তাও ডরি না আমি ভয়ে।
কিন্তু হায়!
এ জীবন সায়াহ্নে
সময় বয়ে নিয়ে যায় আমাকে
সময়ের ভারে আমি ভারাক্রান্ত,
শৃংখলিত আমি, আমি ন্যুব্জ আজ,
আমি বিবর্ণ ঝরা পাতা;
তবু জেনো আজও অদম্য আমি
আমি তোমায় ভালোবাসি,
হে উন্মাদ বাতাস,
অশরীরী শক্তি তুমি,
তোমার গতি তোমার উদ্যম
অহং আমার, তুমি বন্ধু আমার।
৫
বিদায় ঘণ্টা বাজে শোন ওই,
বাজে ওই শরতের বিদায়ের গান,
শীতের আগমনে আমি ঝরা পাতা
তাই বধ আমায় আজ,
আমি তোমার নিবেদিত প্রাণ
ঝরা পাতার মত আমিও ঝরে যাই।
বিষণ্ণ মধুর বিদায়ের সুর শোনা যায়,
ও আমার অশরীরী নির্মম শক্তি!
আমাকে নিয়ে যাও
বিদায় দাও আমায় আজ।
তোমার অদম্য শক্তি বলে
এই মহাবিশ্বের ওপ্রান্তে
আমার জীর্ণ মৃত ভাবনা,
ঝরা পাতা, উড়িয়ে নাও
ভাসিয়ে নিয়ে যাও তাকে
তোমার গতির শক্তিতে,
বিদায় দাও আমাকে
ত্বরান্বিত হোক নতুনের আগমন,
নতুন তোমায় স্বাগতম।
অগ্নিকুন্ড থেকে ভেসে আসা
ছিন্নভিন্ন অনির্বাপিত ভষ্মরাশি
আমার কথামালা হয়ে
ছড়িয়ে যায় মানুষের মাঝে
বিচ্ছুরিত হয় আমার ওষ্ঠ থেকে
নিদ্রা মগ্ন এ পৃথ্বীতে।
হে বন্ধু, উন্মাদ পশ্চিমা বাতাস!
আমার এ বিদীর্ণ বক্ষে
ভাবনা জাগাও নব জাগরণের
জেগে উঠুক ঘুমন্ত এ ধরা
ভবিষৎ দ্রষ্টার বার্তা শোনা যায়,
‘শীত আসলে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে,
তার আর আসতে বিলম্ব কোথায়’?
ভাবানুবাদ
Robert Herrick, To Daffodils
সুন্দরী ড্যাফোডিল
রণেশ রায়
সুন্দরী ড্যাফোডিল, ক্ষণজীবী তুমি
ঝরে পড় সময় না হতে
ক্ষণকাল দেখা দিয়ে কাঁদাও আমাদের,
এখনও প্রভাত সূর্য উদয়ের পথে
যৌবন তার এখনও বাকি ঢের-----
অপেক্ষা করো, এখনই যেও না চলে
গোধূলি বেলায় সূর্য যাবে অস্তাচলে
প্রার্থনা ঘন্টা বাজবে তখন
সন্ধ্যাদীপ জ্বলবে যখন,
প্রার্থনা সভায় মিলব মোরা সবে
সভা শেষে সবে যেতে হবে,
এসেছি জীবনে স্বল্পকাল তরে
বসন্ত আসে সময় ধরে
জীবনের বসন্ত শেষে
চলে যেতে হয় অবশেষে।
আমরা বেড়ে উঠি অল্প সময়ে
মিলি এসে সে অন্তিমে
তখন চলে যেতে হয় সবে
ক্ষয় আর লয়ের পথ ধরে,
যেমন দেখি গ্রীষ্মের বৃষ্টি
বা ভোরের শিশির মুক্ত ঝরায়
সে কি অনাবিল সৃষ্টি!
এসে চলে যায়
দেখা যায় না এ জীবনে আর
অপেক্ষায় থাকি
নতুন কলি ফোটে কবে আবার।
কে বসে একা নিরালায়
William Wordsworth এর The Solitary Reaper (1807) কবিতা অবলম্বনে
কে বসে একা, কাকে দেখা যায়
মাঠের মাঝে নিরালায়,
কেউ নেই সাথে তার
সে যে শস্য কন্যা আমার!
সারাদিন পরিশ্রম মাঠে
ধান বোনে ধান কাটে
গান গেয়ে চলে আপন মনে
একলা বসে সে প্রান্তরে বিজনে,
সে গান ভেসে আসে আমার কানে
করুন বিষাদের সুর বেজে ওঠে গানে।
কোকিলও গাইতে পারে না এর চেয়ে মিষ্টি
এমন ভৈরবী কেউ শোনে নি আগে
আরব মরুতে যেন ঝরে সুধাবৃষ্টি,
পথিককে স্বাগত জানায় সে মধুর গানে
কোকিলের গলায় পাবে না এ সুর বসন্তে,
এমন সুরেলা গান শুনেছ কি আগে?
সে সুর ভাসে বাতাসে স্তব্ধতা ভেদ করে
পৌঁছে যায় জনতার মাঝে দূর দুরান্তে।
কেউ বলেনি আমায় সে কি গান গায়
কানে বাজে সে গান বেদনার মূর্ছনায়,
অতীতের কান্না না পাওয়ার হতাশা
জীবন যুদ্ধের কত না কাহিনী
কত না আশা নিরাশা
বেজে ওঠে মধুর সংগীতে,
প্রাত্যহিক জীবনের বারোমাস্যা
ভাষা পায় তার গানের কলিতে,
রোজের সুখ দুঃখ আনন্দ নিরানন্দ
ফিরে আসে সে সংগীতে।
ভাবায় আমাকে, শস্য কন্যা সে যে,
কি ভাবনা বেজে ওঠে দুহিতার গানে
অন্তহীন সে গান বাজে আমার কানে,
আমি তাকে দেখি আমার মননে
কাজের মাঝে সে গেয়ে চলে
ধানের শিরীষে দোলা লাগে,
অচঞ্চল মুগ্ধ আমি গানের সুরে
শ্রবণে আমার সে গান খেলা করে।
পাহাড় ডিঙিয়ে আমি হেঁটে চলি,
সে গান বসে এসে হৃদয় জানালায়
আস্তে আস্তে সে গান বাতাসে মেলায়
সে সুর কোথায় যে হারায়
শুধু রেশটুকু থেকে যায় ভাবনায়,
বাজে না আর সে গান আমার কানে
পথিক আমি, হেঁটে চলি সে কোন অন্তে।
ওপরের কবিতা দুটো পড়লেই বোঝা যাবে কিভাবে লেখকের ভাবনা ভাবান্তরিত কবিটায় যুক্ত হয়েছে। শব্দ চয়ন দেখলে বোঝা যাবে ঠিক আভিধানিক অর্থে শব্দের ব্যবহার হয় নি। এখানে দুটি ভাষার মধ্যে একটা সমন্বয় ঘটার সুযোগ লেখক নিয়ে থাকেন যা ভাষার দিক থেকে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ ঘটায়। তবে প্রকৃতি ও মানবসমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সার্বজনিক কয়েকটা দিক তুলে ধরা হয়েছে কবিতা দুটোতে। প্রকৃতির আবির্ভাব ও তিরোভাবের অনিবার্যতার কথা বলা হয়েছে প্রথমটায় আর দ্বিতীয়টায় কৃষকপরিবারের একটি খেটে খাওয়া মেয়ের জীবন তুলে ধরা হয়েছে যা পশ্চিম ও পাশ্চাত্যের সব দেশেই শ্রমজীবী মানুষের ক্ষেত্রে একই রকম। দুই দেশের দুই কবির মননের মধ্যেও অমিল থেকে মিলটাই বেশি ধরা পড়ে।
এবার আসা যাক Composed upon Westminster Bridge, September 3, 1802,নামক William Wadsworth এর কবিতার ভাবান্তরিত কবিতা সম্পর্কে কয়েকটা কথায় ।
William Wordworth এর ‘Composed Upon West Minister Bridge’ কবিতা অবলম্বনে লেখা আমার এই কবিতা। কবি লন্ডন শহরকে এক অবিশ্বাস্য সুন্দর নগর বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর আমলে লন্ডনকে আধুনিক সভ্যতার প্রতীক বলে মনে করা হত। আমি আজ বিপরীতটাই আধুনিক নগর সভ্যতা সম্পর্কে মনে করি। তাই এ ব্যাপারে যে ভাবনাটা আমার কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে তা কবির ভাবনার অনুরূপ নয় বরং বিপরীত বলা চলে। বিশেষ করে ভারত সহ এশিয়া আফ্রিকার নগর সভ্যতা সম্পর্কে। তাই ভাবনার দিক থেকে মিল পাওয়া যাবে না। তবে ওনার কবিতাটা পড়ে আমি এই কবিতাটা লেখায় উৎসাহ পাই। তাই উনার লেখার অবলম্বনে বলে উল্লেখ করেছি ঋণ স্বীকারের দায়টা থাকে বলে। একে ঠিক অনুবাদ কবিতা বা ভাব অবলম্বনে কবিতা বলা চলে না। তবে চিন্তা ভাবনার ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে সাহিত্যের এগিয়ে যাওয়ার দিকটা প্রতিফলিত হয় যে বিষয়টা আমরা আগে আলোচনায় বলেছি।
হে নগর সভ্যতা
রণেশ রায়
হে নগর সভ্যতা! তুমি নিংড়ে নিয়েছ সব,
এ পৃথ্বীর যা কিছু সুন্দর, সৌন্দর্যরাশি,
ঝর্ণার কলকল পাখির কলরব;
বিবেককে দিয়ে বিসর্জন
তাকে করেছ সবহারা,
এ পৃথিবী হারিয়েছে যা ছিল তার,
নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার
কিছুই নেই তার আর।
নগর সভ্যতা সেজে এক কৃত্রিম সজ্জায়
সেই সদাহাস্যমান সূর্যালোক কোথায়?
কোথায় আলোকিত শান্তশুভ্র ভোরের সকাল!
শস্য ক্ষেতের বুক চিরে মাথা তুলে দাঁড়ায়,
আকাশপানে বোবা হয়ে তাকায়,
জাহাজ ইমারত অট্টালিকা,
সব দেখি মজে থাকে
চোখ ধাঁধানো জ্বলজ্বলে কৃত্রিমতায়।
দোলা হীন নীরব বাতাস,
উপত্যকা শিলাভূমি বা গিরি
জঙ্গল সমুদ্র আকাশ
হারিয়েছে বর্ণ গন্ধ রূপ,8
দেখিনি আগে সূর্যের এমন তির্যক দহন,
অনুভবে ছিল না
এমন ভয়ঙ্কর স্তব্ধ নীরবতা,
প্রকৃতির স্তব্ধতা, দহন যন্ত্রনা
নদনদী হারিয়েছে গতি তার
তাও সে বয়ে চলে নির্বিকার।
হে সর্বজ্ঞ সভ্যতা!
দেখ, এক কবর শয্যায়
এ নগরী যেন চির নিদ্রায়
নগরী জুড়ে সর্বত্র নীরবতা হাহাকার।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে