Featured Post
গল্পঃ সিদ্ধার্থ সিংহ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
চোর
তুমুল শোরগোলে ঘুম ভেঙে গেল কামিনীর, এত চিৎকার-চেঁচামেচি কীসের? যারাই করুক, পরে দেখা যাবে, আগে তো ওকে ডাকি। পাশেই শুয়েছিলেন তাঁর স্বামী বিবিধান। রিটায়ার হতে আর বেশি দেরি নেই। এক মেয়ে ছিল। তারও বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন মাসখানেক আগে। জামাইটাও খুব ভাল পেয়েছেন। যেমনি ভাল পরিবার। তেমনি দেখতে-শুনতে ভাল। তার উপর চাকরিও করে আরও ভাল। দমকলের চাকরি। বেশ ভাল টাকাই মাইনেপত্র পায়। ফলে এখন তাঁদের ঝাড়া হাত-পা। বিছানায় শুলেই তাঁর স্বামী নাক ডাকতে শুরু করে দেন। অথচ তাঁর চোখে ঘুম নেই। রাত দেড়টা-দুটো অবধি একটার পর একটা সিরিয়ালের পুনঃসম্প্রচার দেখেন। টিভি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুমোবার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই ঘুম এত পাতলা যে, পাশের বাড়ির কোনও বেড়াল একটু 'ম্যাঁও' করলেও তাঁর ঘুম চটকে যায়। আর সেই ঘুম একবার ভেঙে গেলে কিছুতেই দু'চোখের পাতা এক হতে চায় না।
এই দু'দিন ধরে সেটা আরও বেড়েছে। কারণ, তিন দিন হয়ে গেল মেয়েটা শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে। তার নাকি মায়ের জন্য মন কেমন করছিল। তাই... খুব ভাল কথা। কিন্তু আসার পর থেকে তার হাবভাব-চালচলন যেন কী রকম ঠেকছে। ও তো এ রকম ছিল না!
কিন্তু আজ কী হল! বাইরে এত হই-হট্টগোল কীসের! মনে হচ্ছে তাঁদের বাড়ির সামনেই হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে 'এই শুনছ, ওঠো না, বাইরে কী যেন হয়েছে, আরে উঠবে তো, কী কুম্ভকর্ণের ঘুম রে বাবা!' বলেও যখন গৃহকর্তার ঘুম ভাঙানো গেল না, তখন বাধ্য হয়েই জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ডেকে তুললেন। বললেন, বাইরে বোধহয় কিছু একটা হয়েছে। শুনতে পাচ্ছ?
তাঁরা থাকেন দোতলায়। নীচে একটা গোলমাল হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেটা যে কীসের, কে যে কী বলছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সবার কথা জড়িয়ে, তালগোল পাকিয়ে একটা হই-হট্টগোল ভেসে আসছে। তার মধ্যে থেকে শুধু একটা শব্দই কোনও রকমে উদ্ধার করতে পারলেন তিনি, আর সেই শব্দটা হল— চোর।
গণ্ডগোলটা যখন তাঁদের বাড়ির সামনেই হচ্ছে, তা হলে কি তাঁদের বাড়িতেই চোর ঢুকেছে! উনি উঠতে যাচ্ছিলেন, কামিনী তাঁকে প্রায় জোর করে শুইয়ে দিলেন। বললেন, তোমাকে উঠতে হবে না। ওদের কাছে কত রকমের কত কী থাকে, তুমি জানো? যদি কিছু নিতে চায় তো নিক। জিনিস আগে না প্রাণ আগে? আর তা ছাড়া, আমাদের বাড়ির সামনে চেঁচামেচি হচ্ছে মানেই যে আমাদের বাড়িতেই চোর ঢুকেছে, তা তো নয়; আশপাশের বা উল্টো দিকের সান্যালদের বাড়িতেও তো হতে পারে, নাকি।
সে পারে। কিন্তু...
কোনও কিন্তু না। চুপ করে শোও তো।
চুপ করে যখন শুতেই বলছ, তা হলে খামোকা আমার কাঁচা ঘুম ভাঙাতে গেলে কেন?
যাঃ বাব্বা... কথাটা মুখে বললেও মনে মনে বললেন, আমি মরছি আমার জ্বালায়। আর উনি আছেন... কী
যে বলব! আচ্ছা, সত্যিই চোর তো! নাকি... আবার ওই ছেলেটা না তো! মেয়েটা যে দিন এসেছে, সে দিনই তার মা তাঁর সঙ্গেই তাকে শুতে বলেছিলেন। কিন্তু বাধ সেধেছিল ও-ই। বলেছিল, না না, আমি যে ঘরে শুতাম সে ঘরেই শোব। না-হলে আমার ঘুম আসবে না।
বিয়ের আগে তাঁর মেয়ে ও-দিককার ঘরটাতেই শুত। ওই ঘরের লাগোয়া একটা ঝুলবারান্দা আছে। রাস্তার দিকে। উনি প্রায়ই রাতে গিয়ে দেখে আসতেন, ঝুলবারান্দার দরজাটা ও বন্ধ করেছে কি না। এবং বেশির ভাগ দিনই দেখতেন, সেটা হাট করে খোলা। ফলে উনি সেটা ভেজিয়ে ছিটকিনি তুলে দিতেন।
শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে সে দিনও ওই ঘরে শুয়েছে দেখে উনি ভেবেছিলেন, আগের মতো আজও হয়তো ভুল করে ও ঝুলবারান্দার দরজাটা আটকায়নি। তাই সেই দরজাটা আটকাবার জন্য মাঝরাতে ওর ঘরে ঢুকতে গিয়ে উনি দেখেন, ও যা কোনও দিনও করেনি, তা-ই করেছে। ওই ঘরে ঢোকার এ দিককার দরজাটা আটকে দিয়েছে। আটকানো মানে এমনি ভেজিয়ে রাখা নয়, রীতিমত ভেতর থেকে খিল বা ছিটকিনি তুলে দেওয়া। উনি ঠেলেই সেটা বুঝতে পেরেছেন। আর এ দিককার দরজা যখন দেওয়া, তা হলে ও কি আর ওই দিকের দরজাটা দেয়নি! নিশ্চয়ই দিয়েছে। এটা ভেবে উনি যখন ওই ঘরের দরজার সামনে থেকে ফিরে আসছেন, ঠিক তখনই হঠাৎ অত্যন্ত চাপাস্বরে একটা পুরুষ-কণ্ঠ শুনতে পেলেন তিনি। আর সেটা শুনেই চমকে উঠলেন, এ কী! তা হলে কি... আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, তাই! তাই তো বলি, সারাক্ষণ মোবাইলে কার সঙ্গে এত গুজগুজ-ফুসফুস করে। কাকে এত ম্যাসেজ করে! কাছে গেলেই চুপ হয়ে যায় কেন।
শ্বশুরবাড়িতে এ সব করতে অসুবিধে হয় বলেই কি ও এখানে এসে আছে! ও বাড়িতে যাওয়ার নাম করছে না! নাকি জামাই এটা আঁচ করেছে! করবে না! সে কি বোকা নাকি! আর সে জন্যই বোধহয় সদ্য-সদ্য বিয়ে হওয়া সত্বেও আজ তিন দিন হতে চলল, আসার নাম-গন্ধ করছে না। সামনেই তো অফিস, অফিস ছুটির পরেও তো একবার আসতে পারত, নাকি! আসেনি মানে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
কিন্তু সেটা কী? বিয়ের আগে সব মেয়েই একটু-আধটু প্রেম-ট্রেম করে বইকী! ও-ও করেছে। কানাঘুষোয় তার কিছু কিছু তিনি শুনেছেনও। কিন্তু কারও সঙ্গেই তেমন জোড়ালো কোনও সম্পর্ক নিশ্চয়ই সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই ওর বাবা আর উনি যখন তাকে বিয়ের কথা বলেছিলেন, প্রথম দিকে একটু গাঁইগুঁই করলেও শেষে বলেছিল, তোমরা যখন আমাকে বাড়ি থেকে তাড়াবেই ঠিক করেছ। তখন দ্যাখো, ছেলে দ্যাখো...
ওঁরা ছেলে দেখেছিলেন। এবং মেয়েরও খুব পছন্দ হয়েছিল তাকে। ফলে খুব ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মাত্র আড়াই মায়ের মাথায়।
মেয়ে-জামাই যখন অষ্টমঙ্গলার গিঁট খুলতে এসেছিল, তখন তাঁরা বুঝেছিলেন; তাঁদের মেয়ে খুব খুশি। খুব ভাল আছে ওরা। তাই কামিনী আর বিবিধান ঠিক করেছিলেন এত দিন তো শুধু চাকরি-বাকরি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। তেমন ভাবে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। রিটায়ার হতে আর তো মাত্র বছর দেড়েক। দেখতে দেখতে কেটে যাবে। তার পর দু'জনে মিলে বেরিয়ে পড়বেন। সিমলা-কুলু-মানালি-অমৃতসর দিয়ে শুরু করবেন। তার পর পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্র। কিছুই বাদ দেবেন না।
কিন্তু এ যে নতুন ফ্যাচাং শুরু হল। তা হলে কি তার মেয়ের বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি! হলে কি স্বামী থাকতে কোনও মেয়ে আবার পর পুরুষের দিকে ঢলে! অষ্টমঙ্গলার গিঁট খুলতে এসে ও যেটা আমাদের সামনে তুলে ধরেছিল। বুঝিয়েছিল, ওর সঙ্গে ওর স্বামীর দারুণ সম্পর্ক। তা হলে কি সেটা শুধু আমাদের দেখানোর জন্যই ছিল? সবটাই ভান! আমরা যাতে কষ্ট না-পাই, সে জন্য?
না-হলে বিয়ের মাত্র দেড় মাসের মাথায় কোনও মেয়ে এ রকম করতে পারে! ছিঃ... নাকি বিয়ের আগে থেকেই এ সব ছিল! আমরা টের পাইনি! ছিল যখন বিয়ের আগে বলিসনি কেন? আমরা তো জিজ্ঞেস করেছিলাম। এর পর কি আমরা আর কাউকে মুখ দেখাতে পারব! ছিঃ...
কিন্তু কথা হচ্ছে, রাতদুপুরে ওর ঘরে যে-ই আসুক না কেন, তাঁদের দু'জনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে এল কী করে! ওই ঘরের মধ্যে ঢুকল কী করে! মেন গেটের চাবি তো তার কাছেই থাকে। তা হলে কি কোনও এক ফাঁকে ওই চাবিটা নিয়ে ও একটা ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে নিয়েছে! না। এখন আর কিছুই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
সে দিন মেয়ের ওই কীর্তি আঁচ করার পরে বহু বার কামিনী ভেবেছেন, ব্যাপারটা স্বামীকে জানাবেন। কিন্তু বারবার বলতে গিয়েও উনি আর শেষ পর্যন্ত বলে উঠতে পারেননি, মেয়ে এমন একটা কাজ করেছে... ছিঃ...
হঠাৎ ডোরবেলের শব্দে সচকিত হলেন তিনি। এত রাতে কে বেল বাজাচ্ছে! রাত-বাতির আলোয় দেয়াল-ঘড়ির দিকে তাকালেন। জ্বলজ্বল করতে থাকা ঘণ্টা আর মিনিটের কাঁটাগুলি দেখে তিনি বুঝতে পারলেন রাত একটা বারো।
এত রাতে কে বেল বাজাচ্ছে! তিনি ঠিক শুনেছেন তো! নাকি সবটাই মনের ভুল! ক'দিন ধরে মনের উপর দিয়ে যা যাচ্ছে... মনের আর কী দোষ! বোধহয় দশ সেকেন্ডও হয়নি। আবার ডোরবেল বেজে উঠল। হ্যাঁ, ওই তো, ওই তো ডোরবেল বাজল। তিনি ঠিকই শুনেছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর স্বামীও নিশ্চয়ই শুনেছেন। না-হলে তাঁর অমন ঘুম-কাতুরে স্বামী এ ভাবে বিছানার উপরে উঠে বসতেন না।
আবার ডোরবেল বেজে উঠল। এবং তার সঙ্গে তারস্বরে চিৎকার— ও বিধানবাবু, দরজাটা একটু খুলুন। আপনাদের বাড়িতে চোর ঢুকেছে। দরজাটা খুলুন।
স্বামীর নাম বিবিধান হলেও শুধু অফিসের সহকর্মীরাই নয়, পাড়ার লোকেরাও তাঁকে বিধান বলেই ডাকে। ফলে তাঁর স্বামীকেই যে ডাকছে, বেশ বুঝতে পারলেন তিনি। কিন্তু কামিনী জানেন, দরজা খুললেই সর্বনাশ। কারণ, তার বাড়িতে কেউ যদি এসে থাকে, তা হলে সে আর যে-ই হোক না কেন, না। চোর নয়। আর সে যে কে, তিনি তা বেশ ভাল করেই বুঝতে পারছেন। সে দিন রাতে তাঁর মেয়ের ঘরে তিনি যে ছেলেটাকে চাপাস্বরে কথা বলতে শুনেছিলেন, নিশ্চয়ই সে। আর সত্যিই যদি সে হয়, তা হলে একেবারে কেলেঙ্কারির একশেষ। এ পাড়ায় তাঁরা আর মুখ দেখাতে পারবেন না। রাতারাতি এ বাড়ি বেচে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। তাই তিনি তাঁর স্বামীকে বললেন, ডাকুক। তোমাকে যেতে হবে না...
স্বামী চোখ ডলতে-ডলতে বললেন, না গো, মনে হচ্ছে পাড়ার ছেলেরা...
হোক পাড়ার ছেলে। তোমাকে যেতে হবে না।
— কেন? ভয় পাচ্ছ কেন? আরে বাবা, ওদের কতাবার্তা শুনে আমরা যেমন বুঝতে পারছি, বাড়ির সামনে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। তেমনি, চোর যদি সত্যি-সত্যিই আমাদের বাড়িতে ঢুকে থাকে, তা হলে তো সে-ও টের পেয়েছে, পাড়ার লোকেরা আমাদের বাড়ি ঘিরে আছে, পালাবার আর কোনও রাস্তা নেই। তাই কোনও কিছু করার আগে সে অন্তত দু'বার ভাববে। বুঝেছ...
না। তোমাকে যেতে হবে না।
ছাড়ো না... তোমার চিন্তা নেই। আমি দেখছি। বলেই, উনি খাট থেকে নেমে গেলেন।
এখন কী করা উচিত কামিনী কিছুই বুঝতে পারলেন না। শুধু ভয়ঙ্কর এক সত্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে লাগলেন।
দু'মিনিটও হল না। পাড়ার কতকগুলো ছোকরা দুদ্দার করে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এল। তাদের মধ্যে থেকেই কে যেন উত্তেজিত গলায় জোরে জোরে বলতে লাগল, দ্যাখ দ্যাখ দ্যাখ, ভাল করে দ্যাখ। আমি নিজের চোখে দেখেছি, ছেলেটা পাইপ বেয়ে উঠেছে।
ওরা এ ঘরে ও ঘরে ছড়িয়ে পড়ল। কেউ খাটের তলা দেখছে। কেউ বাথরুম। কেউ ফ্রিজের দরজা খুলে দেখছে চোরটা ওখানে লুকিয়েছে কি না। ওদের মধ্যে থেকেই একজন বলে উঠল, মালটা আছে। এখানেই আছে। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। পালাবে কোথায়? একবার ধরতে পারলে দেখাচ্ছি মজা...
একজন ও দিকে গিয়ে ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখে চিৎকার করে উঠল, মালটা মনে হয় ভিতরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়েছে। তার কথা শুনে এ দিক থেকে আর একজন গলা চড়াল, ধাক্কা ধাক্কা, না-খুললে দরজা ভেঙে ফ্যাল। এত বড় সাহস, আমাদের পাড়ায় ঢুকেছে চুরি করতে? ভাঙ ভাঙ, ভেঙে ফ্যাল...
কে যেন সত্যি-সত্যিই ভাঙতে যাচ্ছিল। কামিনী বললেন, না না, ও ঘরে কী করে যাবে? ও ঘরে তো আমার মেয়ে দরজা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
— ঘুমিয়ে আছে! এত চিৎকার-চেঁচামেচিতেও ঘুম ভাঙেনি... তা হয় নাকি? নাকি চোরটা ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আপনার মেয়ের গলায় চাকু ধরে আছে? ডাকুন ডাকুন, ডাকুন তো...
কামিনী আর বিবিধান দরজার সামনে গিয়ে জোরে জোরে মেয়ের নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। সঙ্গে দরজাও ধাক্কাতে লাগলেন। কিন্তু ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। ছেলেগুলোকে শান্ত করার জন্য কামিনী বললেন, আসলে ও একবার ঘুমিয়ে পড়লে...
কে যেন বলল, তা বলে এ রকম ঘুম?
অন্য আর একজন বলল, আমার কেমন যেন লাগছে... আজকাল চার দিকে যা হচ্ছে... আবার অন্য কিছু ঘটেনি তো...
এ বার একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল, মাসিমা, আপনারা একটু সরুন তো। আমি দেখছি। বলেই, দরজায় দড়াম দড়াম করে লাথি মারতে লাগল। আর ঠিক তখনই ভিতর থেকে ভেসে এল মেয়ের গলা— আরে বাবা, এত চেঁচাচ্ছ কেন, বাড়িতে ডাকাত পড়েছে নাকি? দাঁড়াও দাঁড়াও, খুলছি...
মেয়ে দরজা খুলে সামনে দাঁড়াতেই দু'-তিন জন ছেলে তাকে প্রায় ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢুকে গেল। সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাউকে পেল না। একজন ও-দিককার দরজা খুলে ঝুলবারান্দায় গিয়ে এ পাশে ও পাশে তাকাতেই দেখল, একটা ছেলে পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করছে। সঙ্গে সঙ্গে সে চিৎকার করে উঠল, চোর চোর চোর... পাইপ বেয়ে নামছে, ধর ধর ধর...
যারা বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিল, তারা তো বটেই, যারা দোতলায় ছিল, তারাও পড়ি কি মড়ি করে তরতর করে নামতে লাগল। ওদের পিছু পিছু নামলেন বিবিধানও।
নীচে নেমে দেখেন চোরটাকে ওরা ধরে ফেলেছে। দু'-চার ঘা কষিয়েও দিয়েছে। বয়স্ক দু'জন তাকে আগলে পা়ড়ার ছেলেদের বলছে, না। একদম না। একদম গায়ে হাত দিবি না। আইন নিজের হাতে নিবি না। দরকার হলে থানায় ফোন কর। ওকে পুলিশের হাতে দেব... তবু না। কেউ ওর গায়ে হাত দিবি না।
খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে এ সব কাণ্ড দেখে বিবিধান অবাক। তাঁর আর্থিক অবস্থা তো তেমন নয়, তবু আশপাশে এত বড় বড় বাড়ি থাকতে তাঁর বাড়িতে চুরি করতে এসেছিল কে! দেখি তো... বিবিধান গুটিগুটি পা ফেলে কাছে গিয়ে দেখেন, যে ছেলেটাকে ওরা ধরেছে, জটলার মাঝখানে দাঁড়ানো যে ছেলেটাকে ঘিরে এত হইচই, সে আর কেউ নয়, তাঁর জামাই।
শ্বশুরমশাইকে দেখেই সে মাথা নিচু করে ফেলল। যেন মুখ লুকোতে পারলে বাঁচে।
বাড়িতে এনে যখন তাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তুমি তোমার শ্বশুরবাড়িতে আসবে, এ তো খুব ভাল কথা। তা বলে চোরের মতো পাইপ বেয়ে? তুমি হঠাৎ এ রকম করতে গেলে কেন?
একই প্রশ্ন বারংবার করতে করতে সবাই যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে, তখন সে নয়, মুখ খুলল তার বউ— আসলে ও ভীষণ লাজুক। আমি ওকে বলেছিলাম, আমি তো তোমার বউ। তুমি আমার কাছে আসবে, এতে লজ্জার কী?
ও তখন বলেছিল, না, তোমার বাবা-মা কী ভাববেন! ভাববেন, আমি খুব হ্যাংলা। তাঁদের মেয়েকে আমি একদিনও ছেড়ে থাকতে পারি না। তার চেয়ে বরং তোমার বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে একটা মিস কল দিয়ো, আমি ঠিক চুপিচুপি তোমার কাছে চলে আসব।
আমি বলেছিলাম, কিন্তু কী করে? মেন গেটের চাবি তো মায়ের কাছে থাকে।
ও বলেছিল, কোনও চিন্তা নেই। জানো না আমি কীসে কাজ করি? দমকলে। গাছের ঝুরি বেয়ে আমরা মগডালে উঠে যেতে পারি। এ কার্নিস ও কার্নিস ধরে একটা বাড়ি থেকে আর একটা বাড়ির ছাদে পৌঁছে যেতে পারি। আর আমি তোমার জন্য পাইপ বেয়ে সামান্য দোতলার ঝুলবারান্দায় উঠতে পারব না? কী যে বলো!
আমি বলেছিলাম, পাইপ? পাইপ কোথায়?
ও বলেছিল, অষ্টমঙ্গলার গিঁট খুলতে গিয়ে আমি তোমাদের বাড়ির চার পাশটা খুব ভাল করে দেখে এসেছি। দেখেছি, একটা পাইপ তোমাদের ঝুলবারান্দার পাশ দিয়ে সোজা উঠে গেছে।
আমি বলেছিলাম, তা বলে পাইপ বেয়ে?
ও বলেছিল, আরে বাবা, সামনের গেট দিয়ে তো স্বামীরা ঢোকে। আমি তো শুধু তোমার স্বামী নই, প্রেমিক। আমি প্রেমিক হয়েই তোমার কাছে বারবার যেতে চাই। আর জানোই তো, প্রেমিকার সঙ্গে লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখা করার ব্যাপারটাই আলাদা।
তখনই আমি বারবার করে ওকে বলেছিলাম, দেখবে, তুমি ঠিক একদিন ধরা পড়ে যাবে। কী? সেই ধরা পড়লে তো?
বউয়ের কথা শুনে লজ্জায় একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল জামাইয়ের। কিন্তু মেয়ের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার ছেলে থেকে প্রৌঢ় যে-ভাবে হেসে উঠল, বাদ গেলেন না শ্বশুর-শাশুড়িও, তাতে তাঁদের সঙ্গে সায় না-দিয়ে আর কোনও উপায় ছিল না। ও-ও হেসে উঠল। শ্বশুরমশাই বললেন, তোমাকে আর পাইপ বেয়ে আসতে হবে না। আমাদের সামনে দিয়ে আসতে যদি তোমার লজ্জা করে, তা হলে আমি কথা দিচ্ছি, মেয়ে যখন এখানে থাকবে, তখন সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের বাড়ির সদর দরজাটা তোমার জন্য খোলাই থাকবে... তাতে যদি সত্যি-সত্যিই চোর আসে, তো আসুক। যদি কিছু নিয়ে যায়, তো নিক। তবু...
সে কথা শুনে পাড়ার ছেলেদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল, আর একটা কথা, আপনার যদি পাইপ বেয়েই উঠতে ইচ্ছে করে, তো উঠবেন। আমরা তো অনেক রাত অবধি পাড়ার মুখে বসেই আড্ডা মারি, ওঠার আগে শুধু আমাদের যে কোনও একজনকে বলে যাবেন, আপনি পাইপে উঠতে যাচ্ছেন, তা হলেই হবে... বলেই, শুধু সে নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও আরও একবার হো হো করে হেসে উঠল।
=====================================
সিদ্ধার্থ সিংহ
২৭/এ, আলিপুর রোড,
কলকাতা ৭০০ ০২৭
ফোন: ২৪৩৯ ৯৯২৬
চলমান: ৯৮৩৬৮ ৫১৭
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে