Featured Post
অরুণ চট্টোপাধ্যায়ঃ প্রবন্ধ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর
দয়ার সাগর, করুণা সাগর, বিদ্যাসাগর – যে নামেই ডাকা হোক তিনি ঈশ্বরের মতই এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি হলেন আমাদের চির প্রণম্য ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর অবশ্যই সরকারী খেতাব। ইংরেজ সরকার এই অবিতর্কিত পন্ডিতের পান্ডিত্যের স্বীকৃতিতে এই খেতাব দিয়েছিলেন।
পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মা মাতা ভগবতী দেবী যে খুব বিখ্যাত কোনও ব্যক্তি ছিলেন তাও নয়। বা মেদিনীপুরের বীরসিংহ নামের গ্রামটিও যে খুব বিখ্যাত ছিল তা নয়। কিন্তু গাছের পরিচয় যেমন ফলে তেমনি এই মানুষকে আমরা চিনি ঈশ্বরচন্দ্রের পুত্রগর্বী দুই জনক-জননী হিসেবে। সেদিনের সেই অখ্যাত শহর বীরসিংহকে চিনি এই মহান মানুষটির পবিত্র জন্মস্থান হিসেবে।
আজ অতিক্রান্ত প্রায় দুশটি বছর। ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর (বাংলা ১২ই আশ্বিন, ১২২৭) বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক অতি দরিদ্র ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র প্রথম মুক্ত পৃথিবীর আলো দেখলেন। আমাদের এই ভারতবর্ষ তখন কিন্তু মুক্ত ছিল না। সে ছিল তৎকালীন মহাশক্তিশালী বৃটিশ শাসকের শাসনাধীন অর্থাৎ পরাধীন।
প্রাথমিক শিক্ষাঃ
বাবা ঠাকুরদাস দরিদ্র ছিলেন বটে কিন্তু ছেলের শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর কোনও কার্পণ্য ছিল না। শিক্ষার প্রতি ভালবাসা, কৌতূহল, আগ্রহ আর নিষ্ঠা ঈশ্বরের এত বেশী ছিল যে প্রাথমিক পাঠ বাবা নিজে দিয়ে তিনি বালক বয়েসেই নিয়ে চললেন কোলকাতায় আরও বেশী শিক্ষার জন্যে।
এই প্রখর বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছেলেটি মাত্র আট বছর বয়েসে অর্থাৎ ইংরাজী ১৮২৮ সালে বাবার হাত ধরে সুদূর সেই মেদিনীপুর থেকে কোলকাতায় এসেছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্যে। এই সময়েই একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছিল যা আমাদের প্রত্যেকেরই অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখা উচিৎ। সেই দীর্ঘ পথের প্রতি মাইল হিসেবে একটি করে স্তম্ভ বসান থাকত যাকে বলা হত মাইলফলক বা মাইলস্টোন। এই মাইল ফলকগুলিতে ইংরেজিতে এক, দুই, তিন ইত্যাদি সংখ্যাগুলি লেখা থাকত। এগুলি এখনও থাকে তবে সচরাচর সেগুলিতে মাইলের জায়গায় কিলোমিটারের অংক লেখা থাকে। এগুলি দেখে দেখে ঈশ্বরচন্দ্র সংখ্যাগুলি খুব সহজেই আয়ত্ত করে নেন। আজ মানুষের আই কিউ বা ইন্টেলিজেন্স কোশিয়েন্ট অনেক বেড়েছে। তাই আজ মানুষ বা শিশুরা হয়ত অনেক বেশী চমকপ্রদ জিনিস চট করে আয়ত্ত করে নিতে পারে। কিন্তু দুশ বছর আগেই সেই পরাধীন শিক্ষার আলোক বঞ্চিত অজ এই গ্রামের একটি আট বছরের একটি শিশুর পক্ষে এই কাজ বিস্ময়ের তো বটেই।
কোলকাতার জীবনঃ
ছেলেকে কোলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ঠাকুরদাস শুধু তার ভাল মত শিক্ষার জন্যে। এই প্রচন্ড মেধাবী, স্মৃতিধর আর জেদি ছেলেটির পড়াশোনা ঠিকভাবে গ্রামের বিদ্যালয়ে হবে না বলেই তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে তাকে নিয়ে এসেছিলেন কোলকাতায়। কিন্তু গ্রামের মত সহজ সরল ছিল না শহরের জীবন। ছিল বেশ ব্যায়-বহুলও। ঠাকুরদাস কোলকাতায় তাঁর আর এক ছেলেকেও নিয়ে এসেছিলেন। এতগুলি মানুষ যদিও আশ্রয় পেয়েছিল এক দয়ালু অর্থবান ব্যক্তি জগদ্দুর্লভ সিংহের বাড়িতে। কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদনের দায়িত্ব তাঁরই ওপর ন্যস্ত ছিল। সেজন্য বাবার সঙ্গে ঈশ্বরকেও অনেক কাজ করতে হয়েছে এমন কী কঠোর পরিশ্রমও। এমন কী রান্নাবান্না আর গৃহস্থালীর অন্য সব কাজও। অনেক সময় আধপেটা খেয়েও থাকতে হত তাঁদের। কিন্তু এসব কাজে ঈশ্বরের কোনও অনীহা তো নয়ই বরং উৎসাহই ছিল। কোনও কাজকেই তিনি ছোট মনে করতেন না। দারিদ্রের কারণে অনেক সময় প্রদীপের তেল জুটত না তাঁর। তিনি পড়তেন রাস্তায় কর্পোরেশনের গ্যাসের আলোয়। পাছে সারাদিনের কাজকর্মের ক্লান্তি তাঁর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায় তাই পড়ার সময় মাথার চুলে দড়ি বেঁধে রাখতেন ঘরের চালের সঙ্গে। তন্দ্রায় মাথা ঢুলে পড়লেই সে দড়িতে টান পড়ত আর তিনি ফিরতেন চেতনায়।
পরবর্তী শিক্ষাঃ
১৮২৯ সালে তিনি ভর্তি হন কলকাতার গভর্ণমেন্ট সংস্কৃত কলেজ যা এখন সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত। ১৮৩১ সালে বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্যে তিনি মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি পান। তখনকার দিনে পাঁচ টাকার মূল্য কিন্তু খুব একটা কম ছিল না। এখানে সংস্কৃত কাব্য, ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং ইংরেজীতে তিনি প্রবল পান্ডিত্ব অর্জন করেন। ১৮৩৩ সালে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র হয়েও তিনি যে জ্ঞান সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন তা ভাবতেই অবাক লাগে। এই বছরই মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই অঞ্চলের শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের মেয়ে দীনময়ী দেবীর সঙ্গে মাত্র তের বছর বয়েসে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৩৬ সালে সাহিত্য দর্পণ, কাব্য প্রকাশ ও অন্যান্য কঠিন অলংকার শাস্ত্র শেষ করেন। পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করার জন্যে তাঁকে রঘুবংশম, সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, মৃচ্ছকটিক প্রভৃতি পুস্তক পারিতোষিক হিসেবে দেওয়া হয়।
বিদ্যাসাগর উপাধি লাভঃ
এত অল্প বয়েসে এত পান্ডিত্ব অর্জন সেকালে কেন একালেও আমাদের কল্পনার বাইরে। অনন্যসাধারণ এই স্মৃতিধর আর বিদ্যাধর বালকটিকে তৎকালীন ইংরেজরাও কিন্তু চিনতে ভুল করে নি। ১৮৩৯ সালে মাত্র ঊনিশ বছর বয়েসে হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এবং বিরাট কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণও হন। এবং ল কমিটি তাঁকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করেন।
কর্মজীবনঃ
ঈশ্বরচন্দ্রের কর্মজীবন কর্মকান্ডে পরিপূর্ণ। ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর মাত্র একুশ বছর বয়েসে ঈশ্বরচন্দ্র ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে নিযুক্ত হন। ১৮৪৬ সালে ফোর্ট উইলিয়াম ছেড়ে সংস্কৃত কলেজে সহকারী সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যে তিনি পাঠ্যসূচীতে বেশ কিছু দীর্ঘকালীন পরিবর্তন আনেন। সেজন্যে সচিব রসময় দত্তের সঙ্গে তাঁর প্রবল মতভেদ হলে তিনি সংস্কৃত কলেজ পরিত্যাগ করেন। এর আগে সংস্কৃত কলেজে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদেরই প্রবেশাধিকার দেওয়া হত। তিনি ছিলেন এই মতের বিরুদ্ধে। তিনি বলতেন, শিক্ষার অধিকার উঁচুজাত, নীচুজাত, মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে সকলের থাকা উচিৎ। শিক্ষায় অধিকার প্রত্যেকেরই আছে।
তিন বছর পর ১৮৪৯ সালে এই কলেজেই ফিরে আসেন সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে আর আরও দু বছর পর ১৮৫১ সালে তিনি এই কলেজেই অধ্যক্ষের আসন অলংকৃত করেন আমাদের এই গর্বের মানুষটি। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
১৮৫৫ সালে নিযুক্ত হলেন বিশেষ শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে তাঁর পূর্বপদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। শুধু শিক্ষাগ্রহণ ও পান্ডিত্য অর্জনেই তাঁর কর্মজীবন আবদ্ধ ছিল না। যে বিদ্যা তিনি অর্জন করেছিলেন তা সমগ্র সমাজের বুকে ছড়িয়ে দেওয়াই মূল লক্ষ ছিল তাঁর। শিক্ষাবিস্তারে তাঁর ভূমিকা মনে রাখবে সমগ্র বাঙালী সমাজ।
নারীশিক্ষার বিস্তারঃ
তখনকার দিনে নারী ছিল পর্দানসীন। নারীদের মধ্যে এই ধারণাই প্রচলন ও বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছিল যে নারী কেবলমাত্র অন্দরমহলে আবদ্ধ থেকে সংসারের পরিচর্যা করে যাবে। পুরুষের হাতে থাকবে রুজি-রোজগার ও ভরণপোষণের ভার এবং সর্বময় কর্তৃত্ব। তাই শিক্ষায় অধিকাংশ নারীরা ছিল ব্রাত্য। মুষ্ঠিমেয় খুব অভিজাত সম্প্রদায় ছাড়া আর কোনও নারীর ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনও স্থান ছিল না। সাধারণ মধ্যবিত্ত সমাজে এই ধারণাটাই পৌঁছে দেওয়া হত যে লেখাপড়াটা পুরুষদের একচেটিয়া বিষয়। নারীদের প্রয়োজন কেবল সংসার ও সন্তান পালন আর পুরুষের সেবা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, নারীরাও মানুষ। সুতরাং অন্য সব মানুষের মত নারীদেরও শিক্ষার অধিকার থাকা দরকার। নারীরা যত অধিক মাত্রায় শিক্ষিত হতে পারবে তত উন্নত ভাবে তারা সংসারের সেবা করতে পারবে। সন্তান ও সংসার পালনে সুচারু দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে। নারীদের উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে সমাজের উন্নয়ন। সমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতির ভূমিকা আছে আর সংস্কৃতির উন্নয়নে শিক্ষার। নারীকে শিক্ষায় ব্রাত্য করে রাখলে সমাজ পুরোপুরি শিক্ষিত হতে পারবে না কোনোদিন।
এরপর তাঁর প্রচেষ্টায় ইংরেজদের সহায়তায় কোলকাতায় স্থাপিত হল 'হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়'। আর বাঙালী হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি এই ভেবে যে এই বিদ্যালয় শুধু বাংলার বুকে নয় সারা ভারতের বুকে সর্বপ্রথম স্থাপিত বালিকা বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় যা বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত তার প্রথম সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
এরপর তিনি গ্রামাঞ্চলে নারীশিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট হন। ১৮৫৭ সালে বর্ধমানে একটি মেয়েদের স্কুল স্থাপন করেন। তাঁর অনলস প্রচেষ্টায় ১৯৫৮ সালে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তখনকার দিনে এ বড় কম কথা ছিল না। আজ যেখানে একটা মাত্র স্কুল খুলতেই বছরের পর বছর লেগে যায়, উত্থাপিত হয় কত কুটকাচালি, কত মতান্তর, কত মনান্তর আর কত বাধা বিপত্তি, সেখানে একটি মাত্র বছরে এতগুলি স্কুল তাও সব মেয়েদের। ভাবা যায়? তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে অত্যন্ত কম চেতনা ছিল নারীশিক্ষায়। তাই তারা নিজেদের সংসারের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে শুধু চাইতই না তাই নয়, বরং বাধাই দিত বেশী করে। বিদ্যাসাগর জানতেন গ্রাম ডুবে রয়েছে অশিক্ষার অন্ধকারে। আর তার চেয়েও অন্ধকারে ডুবে আছে গ্রামের মেয়েরা। শুধুমাত্র অজ্ঞতাই নয়, নারীরা নানা কুসংস্কারের বশীভূত হয়েও শিক্ষায় অনাগ্রহী ছিল। গ্রামে মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের আগে তাদের মনের এই অজ্ঞতা দূর করে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাই তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেন নিজের মায়ের নামে নিজের গ্রামেও মেয়েদের জন্যে তিনি স্থাপন করলেন 'ভগবতী বিদ্যালয়'। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মেয়েদের বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টি। এত দ্রুত বিস্তার ভাবা যায় আজকের এই উন্নত দিনেও?
শিক্ষা সংস্কারঃ
বিদ্যাসাগর অন্তর দিয়ে বুঝেছিলেন সমাজের উন্নতি ঘটাতে গেলে শিক্ষাকে পৌঁছে দিতে হবে সকলের মধ্যে। আর শিক্ষা সর্বজনগ্রাহ্য একমাত্র তখনই হবে যখন শিক্ষা হবে সহজবোধ্য। তিনি এও বুঝেছিলেন কঠিন সংস্কৃত ভাষা সাধারণের পক্ষে দুরূহ। আর তাই শিক্ষা একটি বিশেষ উচ্চ মেধা ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমিত হয়ে থাকছে। তিনি শিক্ষাকে সংস্কৃতের কঠিন জটাজাল থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনায় মাতলেন। সহজ ভাষায় লিখলেন বর্ণপরিচয়। সংস্কৃতের কঠিন খোলস ছেড়ে সহজ এক লিপিতে আবির্ভূত হল বাংলা হরফ। আজ আমরা যে লিপিতে সব কাজ করছি তা বিদ্যাসাগরের প্রবর্তিত লিপি।
শিক্ষাকে সহজবোধ্য আর সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার লক্ষে আর যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি তিনি করলেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পাঠ্যপুস্তক লেখা। তখন পাঠ্যপুস্তক বেশীর ভাগ ছিল সংস্কৃত এবং অন্যান্য বিদেশী ভাষায় লেখা। প্রচুর পরিশ্রম করে তিনি এগুলি সহজ ভাষায় বাংলায় অনুবাদ করলেন আর নিজেও লিখলেন বেশ কিছু। এইভাবে কাজ করায় ছাত্রদের মধ্যেও পড়ায় উৎসাহ এসে গেল। অনেকেই বিশেষভাবে উচ্চশিক্ষায় উন্মুখ হত না শুধু এই ভাষামাধ্যমের গুরুগাম্ভীর্যের জন্যে। এখন সেই বাধা দূর হল বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায়।
ভাষা ও সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদানঃ
আজকের আধুনিক বাংলা গদ্যসাহিত্যও প্রকৃতপক্ষে এই মহামানবের অবদান। সারা ভারতের সঙ্গে তখন বাংলাতেও সংস্কৃতের আধিপত্য। যাঁরা সংস্কৃত শিখতেন তাঁদেরই কেবল পান্ডিত্যের স্বীকৃতি দেওয়া হত। সমাজ তাঁদের এক উচ্চ মর্যাদার চোখে দেখত। ইংরেজী আর অন্যান্য বিদেশী ভাষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরাও সমাজে মর্যাদা পেতেন। বিশেষভাবে ইংরেজ শাসকের কাছে। বড় বড় সরকারী পদে তারা উপযুক্ত বলে বিবেচিত হত। আর সাধারণ সমাজে সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিতরা পেতেন আদর ও কদর।
সেকালে সংস্কৃত ভাষার আদিপত্য ছিল কিন্তু সাধারণের তা নাগালের বাইরে ছিল। একথা ঠিক যে সংস্কৃত ভাষা অত্যন্ত উন্নত, সনাতন, সাবলীল এবং শ্রুতিমধুর। কিন্তু তবু তা সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে পারছিল না। বেশীর ভাগ মানুষ এই জটিল ভাষাটি আয়ত্ত করতে অসমর্থ হত। তাই তাদের পক্ষে অনেক মূল্যবান আমাদের ঐতিহ্যপূর্ণ বইও পড়ে আয়ত্ত করা সম্ভব হত না। আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে এলেন বিদ্যাসাগর। সংস্কৃতর পরিবর্তে সূচনা করলেন এক সহজ সরল বাংলা ভাষার। খটমট সংস্কৃত হরফের বদলে আনলেন সহজ বাংলা হরফ ও বর্ণমালা। লিখলেন 'বর্ণ পরিচয়'। বারটি স্বরবর্ণ আর চল্লিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে গঠিত হল এই নতুন বাংলা বর্ণমালা।
সংস্কৃতের সেই জটিল স্রোতঃস্বিনী থেকে বাংলা গদ্যকে সহজ, সরল আর মর্মস্পর্শী করে এক নতুন ধারায় প্রবাহিত করলেন ঈশ্বরচন্দ্র। সেইজন্যে তাঁকে অভিহিত করা হয় আধুনিক বাংলা গদ্যের প্রকৃত জনক হিসেবে। আজ বাংলা ভাষা এক স্বাধীন ও স্বাবলম্বী ভাষা। দিনে দিনে তা হচ্ছে আরও বেশী উন্নতই নয় হচ্ছে সর্বজনগ্রাহ্য। এমন এক সময় ছিল যখন আমরা যে ভাষায় লিখতাম তার চেয়ে একটু অন্য ভাষায় কথা বলতাম। প্রথমটি ছিল লেখ্য ভাষা আর দ্বিতীয়টি হল কথ্য ভাষা। কথ্য ভাষার তুলনায় লেখ্য ভাষা ছিল একটু কঠিন। ক্রম বিবর্তনের পথ ধরে ভাষা কিন্তু আজ একটাই। এই লেখ্য ভাষার ঘটছে অবলুপ্তি আর সমস্ত স্থানটি দখল করে নিয়েছে এই কথ্য ভাষা। আজ যে ভাষায় আমরা চিন্তা করি, সেই ভাষাতেই কথা বলি আর এমন কী লিখিও। তাই জ্ঞানের পথে ভাষা এখন আর অন্তরায় নয়। শিক্ষার জগতে ভাষাই হল মূল মাধ্যম। তাই শিক্ষাসংস্কারের ব্রতী হয়ে প্রথমেই ভাষাসংস্কারের উদ্যোগী হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে মর্তে প্রবাহিত করে ধরণীকে শস্যশ্যামলা করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ হয়েছিলেন সকল মর্তবাসীর। আর ঈশ্বরচন্দ্র ভাষার স্বর্গ সংস্কৃতের জটাজাল থেকে আধুনিক বাংলা ভাষাকে বাংলার মাটিতে এনে বাংলার সাহিত্যকে করলেন উর্বর শস্যশ্যামলা।
বিদ্যাসাগর বিশ্বাস করতেন ভাষার উন্নতিতে সাহিত্যের অবদান অনস্বীকার্য। তাই সংস্কৃত ছেড়ে বাংলায় সাহিত্য রচনায় তিনি প্রয়াসী হন। এর মধ্যে বেশ কিছু ছিল সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ। 'বেতাল পঞ্চবিংশতি' তাঁর অনন্য কীর্তি। এ ছাড়াও শকুন্তলা, সীতার বনবাস, রামের রাজ্যাভিষেক প্রভৃতি বহু গ্রন্থ সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করে সংস্কৃত বুঝতে অক্ষম সাধারণ মানুষকে এই মূল্যবান কাহিনীগুলির রসাস্বাদন করিয়ে ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। তাছাড়া রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ইত্যাদি পুস্তকগুলির সংস্কৃত থেকে বাঙ্গলায় অনুবাদ করে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন হয়েছেন। সবাই স্বীকার করবেন সমাজের উন্নতিতে এই সমস্ত কাব্যগুলি অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিৎ।
শুধু সংস্কৃত থেকে বাংলায় নয়, ইংরেজী থেকেও মূল্যবান বইগুলি তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল ইংল্যান্ডের মহাকবি সেক্সপিয়ারের 'কমেডি অফ এরর্স' অবলম্বনে 'ভ্রান্তিবিলাস' রচনা। এটি পরে চলচ্চিত্রায়িত হয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে।
বহুবিবাহ রোধ আর বিধবাবিবাহ প্রবর্তন বিদ্যাসাগরের এক মহান বৈপ্লবিক কাজ। কৌলিন্য আর বহুবিবাহের জাঁতাকলে পড়ে বহু মেয়ে বাল্য বয়েসেই সব শখ-আহ্লাদ আর সুখ-সুবিধা খুইয়ে বিধবার জীবন যাপন করতে বাধ্য হত। বহু মেয়ের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হয়ে যেত। মানব দরদী বিদ্যাসাগর এর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগলেন আর সফল হলেন। ইংরেজদের সহায়তায় বহুবিবাহ রোধ আর বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়। এর জন্যে সমাজের উচ্চ মহলের কত যে কটূক্তি তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু একগুঁয়ে বিদ্যাসাগর থেমে থাকেন নি। চালিয়ে গেছেন তাঁর সংগ্রাম। অবশেষে আইন পাশ হয় আর অসংখ্য বালিকার জীবন রক্ষা পায়।
বিদ্যাসাগর ছিলেন করুণার সাগরও বটে। কত দীন-দরিদ্রকে খাবার জুটিয়ে তিনি সাহায্য করেছেন। কত গরিব ছেলের পড়ার খরচ আর বইপত্র জুগিয়েছেন তা হিসেব করে বলা সম্ভব নয়। আজকাল অনেক ছেলেমেয়ে বাবা মায়ের ভরণ পোষণ পর্যন্ত করে না। কিন্তু মাতৃভক্ত ঈশ্বরচন্দ্র মাকে দেওয়া কথা রাখতে যেমন ঝাঁপিয়ে পড়তেন বর্ষার দামাল দামোদরে তেমনি মায়ের ঈচ্ছা পালন করে লেপ-কম্বল দান করেছেন কত দরিদ্রের মধ্যে।
রোগকে তিনি ঘৃণা করতেন কিন্তু রোগীকে নয়। নিজের হাতে ফুটপাথে পড়ে থাকা কলেরা রোগীকে সেবা করেছেন পরম যত্নে। যথার্থ নিঃস্বার্থ মানবতাবাদী না হলে কেউ এমন করতে পারে?
একরোখা বিদ্যাসাগর ছিলেন প্রচন্ড স্পষ্টবক্তা। খুন্তিকে তিনি খুন্তিই বলতেন। কারও মন রাখার জন্যে চামচ বলেন নি কখনও। নিজের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে, মানবতার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্যায়ের সঙ্গে রফা করেন নি কখনও। শিক্ষানুরাগী আর বিদ্যানিষ্ঠ এই মানুষটিকে সংস্কৃত কলেজ একদিন 'বিদ্যাসাগর' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। সঠিক মানুষটিকে সঠিক উপাধিতে ভূষিত আর সম্মানিত করার জন্যে সমগ্র বাঙালী সমাজ আজ গর্বিত আর কৃতজ্ঞ।
২৯শে জুলাই ১৮৯০ এই মহামানব মহাপ্রয়াণের পথে পাড়ি দেন। শুধু জন্মমৃত্যুর দিনটাই নয়, আমাদের সারা জীবনকালে আমরা যেন এই মহামানবকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখি।
===================================
(Dr.) ARUN CHATTOPADHYAY
181/44 G.T.Road (Gantir Bagan)
P.O.Baidyabati
Dist. Hooghly(PIN 712222)
Mobile 8017413028
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে