মৃত্যুর মাঝে
পাশের সিট টা ফাঁকায় পড়ে রইল।
আরো চারটি সিট এখনো আছে । প্রতিদিন সকাল- বিকাল এসে বসতো ৫বন্ধু ।গল্প করত। হাসি ঠাট্টা করত।চা বিস্কুটে মুচমুচে দিন কাটত।আজ বিকালে একটা সিট ফাঁকা হয়ে গেল ।
চলে গেল বহুদূরে । হসপিটালে ভর্তি করা হল।তবু বাঁচান গেল না কানাইবাবু কে।
হার্টএটার্ক, মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল । হাসি খুশির দিন গুলিতে একটা আতঙ্ক গ্রাস করল । মনগুলি সব নিস্তব্ধ ।
কিছু মাস যেতে না যেতেই আবার বিদায় নিল প্রফুল্ল মাস্টার । আরো একটা সিট খালি ।
চিন্তায় ভাবনায় ওনারা তিন জন আরো ঝিমিয়ে পড়ল ।
এক দিন কেউ না উপষ্থিত হলেই মনে আতঙ্ক আসে । তবে কি আর ফিরবে না ?
পিতৃহীন অহনা নতুন করে বাবা পেয়েছে।স্নেহ মায়া মমতায় ভরিয়ে দিয়েছে শ্বশুরমশাই । বাবার অভাব বুঝতেই পারে নি । কবিতা ও সকল সুখ দুঃখ ,সুবিধা -অসুবিধা গুলি বাবার সঙ্গে ভাগ করে নিত। অসুখ করলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেত ডাক্তার খানায়। শ্বশুর- বাবাকে কিছুতেই হারাতে দেবে না ।
হঠাৎ ই কেমন চুপচাপ হয়ে গেল শ্বশুরমশাই । জানতে পারল কবিতার শ্বশুর অসুস্থ ।ছোটবেলার পাঁচ বন্ধু আজও সমান বন্ধুত্ব ,সম্পর্ক । কিন্তু একে একে সবাই চলে যাচ্ছে শ্বশুরমশাই কে ছেড়ে। একমাস আগে আরো এক বন্ধুকে হারিয়েছে। আর মাত্র দুজন জীবিত সিটে।নদীর তীরে বসে ,উদাস ভাবে চেয়ে থাকে মিলিয়ে যাওয়া ঢেউ গুলিকে।
এমনি এক সকালে গিয়ে শুনল,সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার রথীনবাবুর প্রচন্ড জ্বর । হাতে পায়ে ব্যথা । লাঠি ধরেও আর আসতে পারবে না ।
অহনার শ্বশুর, সম্পূর্ণ একা হয়ে গেল ।
কিছু দিন আগে মাথার পিছনে একটা ছোট্ট ফুসকুঁড়ি দেখা দিয়েছিল । অনেক হোমিওপ্যাথি অষুধ খেয়ে ও ভালো হয় নি। ডাক্তার বলল ,অপারেশন ছাড়া উপায় নেই ।হসপিটালে ভর্তি করতে হল ।
বেঁচে থাকার ইচ্ছা টাই আর নেই । এই অবস্থায় অপারেশন করলে জীবনের ঝুঁকি হতে পারে । একে হার্টের রোগী ।
অহনা বাবার কাছে গেল। কিছু কথা বলল।
কথাগুলি শুনেই চোখমুখে তৃপ্তির নিশ্বাস ফুটে উঠল । হাসতে হাসতে অপারেশন রুমে চলে গেল । আর বলে গেল , আমার জ্ঞান ফিরলেই রথীনকে দেখতে চাই ।দরজা বন্ধ হয়ে গেল ।
অহনার বুকচাপা যন্ত্রনা চোখ দিয়ে অশ্রুধারায় বেরিয়ে এল। মনকে শক্ত করে মনে মনে বলল ,আমাকে ক্ষমা করো । আর যে কোনো উপায় ছিল না তোমাকে বাঁচানোর । ছোট্ট একটা মিথ্যা কথা , " রথীন বাবু সুষ্থ "। খবর এল
সবে মাত্র রথীনবাবুর দেহ দাহ করে থেকে ফিরেছে কবিতার স্বামী । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
=====================
নাম-অঞ্জনা গোড়িয়া
দিঘির পাড় বাজার
থানা- ফলতা
জেলা-২৪ পরগনা( দ)