Featured Post
কাব্যনাট্য: শঙ্করী বিশ্বাস
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
নিয়তি—কেন বাধ্যতে
মহাভারতের এক অন্যতম চরিত্র কর্ণ । মহর্ষি ব্যাস তাঁকে বহুযুগ পূর্বে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কর্ণের জীবনেতিহাস আমরা সবাই জানি। আমরা জানি আজন্ম তাঁকে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে শুধুমাত্র তাঁর জন্ম ইতিহাসের কারণে । অথচ তিনি নিরপরাধ । জীবনে যা কিছুতে তাঁর ন্যায্য অধিকার ছিল তার কোনোটিই তিনি লাভ করেন নি। অন্যায় বঞ্চনা কেবল জুটেছে তাঁর প্রাপ্তির ভাড়ারে। তিনি কি সত্যিই কেবল বঞ্চনা অবহেলা পাওয়ার যোগ্য?জন্মরহস্যের জন্য তো কর্ণ দায়ী নন। অথচ এই জন্মরহস্যের জন্যই জননী তাঁকে জন্মলগ্নে পরিত্যাগ করেছেন। এবং সেইহেতু তাঁর জীবনে নেমে এসেছে বারবার নিয়তির অমোঘ আঘাত বা প্রতিবন্ধকতা । বলা ভাল জন্মলগ্ন থেকেই কর্ণের জীবন নিয়তিতাড়িত। নিয়তির নিষ্ঠুরতার জন্য জীবনে নারীর কোমল স্নেহ-প্রেম লাভে ব্যর্থ । জননী ও জায়া তাঁর জীবনে কোনোদিন তাদের ছায়াপাত করেনি। একজন নারীকে তিনি জীবনে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন প্রেয়সীরূপে,তার সহধর্মীনীরূপে। কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস!সেখানেও কর্ণ প্রত্যাখ্যাত হন কেবল জন্মবৃত্তান্তের জন্য। জন্মরহস্য কিভাবে একটা জীবনকে আমূল পরিবর্তিত করে দিতে পারে,কিভাবে শূন্যতার ভারে জীবনকে পরিপূর্ণ করে দিতে পারে তার অন্যতম নিদর্শন কর্ণের জীবন। কিন্ত যদি একজন নারী,যাকে কর্ণ তার হৃদয়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে মনে করতে পারেন তাঁর যৌবনে সে যদি কর্ণের পাশে এসে দাঁড়াতো,সহধর্মিনী ও সহমর্মিনী হত,তাহলে কর্ণের জীবনের বাঁক পরিবর্তিত হতে পারতো। কুরুসমরে তাঁর এমন মর্মন্তদ পরিণতি হত না। দ্রৌপদী যদি কর্ণের জীবনে আসতো তাঁর পত্নীরূপে তাহলে কর্ণের জীবন অন্যরূপ হতে পারতো। দ্রৌপদী ও কর্ণের সাক্ষাৎ বা কর্ণের অন্তর্নিহিত ক্ষোভ বা আক্ষেপ বা বেদনাজাত বক্তব্য দ্রৌপদীর কাছে উপস্থাপন ———এসব মূল মহাভারতে নেই। কর্ণ ও দ্রৌপদীর এই সাক্ষাৎকার সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আমার এই ব্যক্তিগত অনুভূতি ও মননজাত প্রয়াস যদি পাঠকের ভাল লাগে তবে এই প্রচেষ্টা সার্থক হবে। যাই হোক অনেকখানি ভূমিকার পর আসুন এবার মূল রচনায় প্রবেশ করি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আকাশের রঙ সিঁদুরের মত লাল । পৃথিবী শেষবারের মত শেষবেলার আলোটুকু মেখে নিয়েছে সারা গায়ে। আর কিছুক্ষণ পরেই সময় তার গা থেকে সমস্ত আলো শুষে নেবে। টেনে নিয়ে যাবে তাকে অন্ধকারের জঠরে। এমনই পরিস্থিতিতে কর্ণ তাঁর উদ্যানে নীরবে নির্জনে দাঁড়িয়ে আছেন। অদূরে বয়ে চলেছে স্রোতোস্বিনীর শান্ত ধারা। ক্লান্ত পাখিরা দ্রুত নীড়ে ফিরছে। কর্ণ ভাবনায় মগ্ন। রাত্রি শেষ হলেই শুরু হবে কুরুক্ষেত্রের মহাসমর। এই বিভীষিকাসম যুদ্ধের ভাবী ফলাফল কর্ণ অনবগত নন। তিনি প্রাজ্ঞ। তবুও তিনি প্রতিজ্ঞায় অনড়। জীবন তাঁকে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। আজীবন তিনি নিয়তিতাড়িত,লাঞ্ছিত জীবনযোদ্ধা। আজ বেলাশেষে নিভৃতে আত্মচারণায় তিনি মগ্ন। এমন সময় তাঁর সম্মুখে আচম্বিতে উপস্থিত হলেন পঞ্চস্বামী গর্বিতা দ্রুপদনন্দিনী দ্রৌপদী। অকস্মাৎ পাঞ্চালীর আবির্ভাবে কর্ণ বিস্মিত, বাকরুদ্ধ,কৌতূহলী চিন্তিত । আগুনের লাল শিখার মত উজ্জ্বল বস্ত্রপরিহিতা,আলুলায়িতা,উৎকন্ঠিতা পাঞ্চালী কর্ণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে । কর্ণ প্রশান্তভাবে প্রথমে দ্রৌপদীকে অভিবাদন করলেন। তারপর আসন গ্রহণ করতে বললেন। শুর হল তাঁদের আলাপ ।
কর্ণঃএসো দ্রৌপদী(ডান হাত দেখিয়ে )উপবেশন কর।
দ্রৌপদীঃতুমি এমন নিভৃতচারী জানতেম না।
কর্ণঃআমি চিরকালই নিঃসঙ্গ । নীরবতাই আমার একমাত্র সঙ্গী । যাক সে কথা। আমার জীবনেতিহাস তোমার কাছে নিষ্প্রয়োজন। তোমার আগমনের কারণ জানতে আমি উদ্গ্রীব ।
দ্রৌপদীঃআমার আগমনের হেতু অবশ্য আছে।অকারণ আলাপচারিতায় আমার কোনো উৎসাহ নেই।
কর্ণঃআমি জানি দ্রৌপদী। পঞ্চস্বামী গর্বিতা পাণ্ডব কূলবধূর কর্ণের কুটিরে আগমন অকস্মাৎ অপ্রত্যাশিত হলেও অহেতুক নয় কখনোই। তবে কারণ প্রদর্শনের পূর্বে আসন গ্রহণ কর।
দ্রৌপদীঃ(তবুও দাঁড়িয়ে আছেন)আমি আজ বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি। তাই কালবিলম্ব না করে---
কর্ণঃ(দ্রৌপদীকে বক্তব্য সম্পূর্ণ করার অবকাশ না দিয়ে)নিশ্চই। (বিদ্রূপের সঙ্গে) পাণ্ডবকূলবধূর অবসর না থাকাই স্বাভাবিক । তোমার সময়ের মূল্য আমি বুঝি। তবে সেকথা স্মৃতির বাইরে চলে গিয়েছিল। কিন্ত পঞ্চস্বামীর গর্বে গর্বান্বিতা যিনি,তিনি এমন পড়ন্তবেলায় অন্ত্যজ সমীপে কেন এসেছেন সেকথা বোধ হয় জানি।
দ্রৌপদীঃ(ঈষৎ রুষ্ট কন্ঠে)কর্ণ!বারবার পঞ্চস্বামী গর্বিতা বলে কেন বিদ্রূপ করছ আমাকে?
কর্ণঃ(বক্রহাসির রেখা ঠোঁটে)বিদ্রূপ ?সত্যকে তুমি বিদ্রুপ মনে কর?অর্জুন তোমার প্রিয়তম সেকথা সর্বাংশে সত্য। কিন্ত আরও চারজন স্বামী তোমার আছেন। একথা সত্য যে সেদিন অন্ত্যজবলে আমাকে নির্মমভাবে তোমার স্বয়ংবরসভা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। (কর্ণর কন্ঠস্বর জলভরা মেঘের মত)তাই তো অর্জুন তোমায় লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল
দ্রৌপদীঃ(শান্ত কন্ঠে)অর্জুন আমার প্রিয়তম স্বামী একথা সত্যি। আরো চারজন পুরুষ আমার স্বামী এও সত্যি। এবং আমার জীবনের এই সত্যের মূলে আমার ভাগ্য,আমার নিয়তি কর্ণ । (চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে আসে,গলার স্বর কান্নাজড়ানো)কর্ণ আজ আমি তোমার কাছে প্রয়োজনে এসেছি। তুমি আমার ভাগ্যকে পরিহাস করছ?তোমার ন্যায় একজন বিচক্ষণ পুরুষের কাছে এ আচরণ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত । তোমার এহেন আচরণ আমার কল্পনার অতীত।
কর্ণঃতোমার ভাগ্যকে আমি পরিহাস করছি?কি বলছ দ্রৌপদী?একজন অন্ত্যজের পক্ষে তোমাকে পরিহাস করা তো অক্ষমনীয় ধৃষ্টতা।
দ্রৌপদীঃ(ক্রোধোন্মত্ত ,তবুও শান্ত কন্ঠে )কর্ণ তুমি তোমার সীমা লঙ্ঘন করছ।
কর্ণঃ(স্বগোতোক্তি )আমি সীমা লঙ্ঘন করছি দ্রৌপদী?(মুহূর্তকাল উভয়েই নীরব)
দ্রৌপদীঃকর্ণ?
কর্ণঃনা দ্রৌপদী আমি আমার সীমা লঙ্ঘন করিনি। করতে পারিনি। যখনই এগিয়েছি দুষ্প্রাপ্যকে নিজের করে নিতে তখনইনিয়তির নিগড়ে আমি বন্দী হয়েছি নির্দিষ্ট সীমানায়। বাহুবলে,বুদ্ধিবলে বহুক্ষেত্রে জয়ী হয়েছি। কিন্ত সেসব মূল্যহীন । সেসব মিথ্যে হয়ে গেছে। আমি যা চেয়েছি তা চিরদিন অধরাই থেকে গেছে। আমার সমস্ত পৌরুষ সেখানে ব্যর্থ । হৃদয়ের দাবী প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি আকাঙ্ক্ষিতের কাছে। আজন্মকাল শুধু লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা পেয়েছি। নিয়তি আজ আমার জীবনকে তীরে টেনে এনেছে। নিয়তি আমার জীবনকে পরিপূর্ণতা দেয়নি। কালস্রোত আমায় প্রিয়প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছে,ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বারবার আমি নিয়তির নিষ্ঠুর চক্রান্তের শিকার হয়েছি। নিয়তিই আমাকে করেছে বন্ধনহীন নিঃসঙ্গ স্বাধীন ।
দ্রৌপদীঃসেই সঙ্গে নিষ্ঠুর (বক্রহাসির রেখা ঠোঁটে)যদিও সবাই তোমাকে দানবীর বলে জানে।
কর্ণঃহয়তো। তবে আমার জীবনের এক চরম সত্য তুমি জেনে রাখ। আমার নিষ্ঠুরতার জন্য দায়ী তুমিও।
দ্রৌপদীঃকর্ণ?
কর্ণঃসত্য বড় নির্মম দ্রৌপদী। আমার জীবনের সত্য তোমার কাছে একান্ত অপ্রিয় সেকথা স্বীকার করি।
দ্রৌপদীঃআমি আশ্চর্য হয়ে যাচিছ তোমার স্পর্ধা দেখে।
কর্ণঃকেন পঞ্চস্বামী গর্বিতা বলে?
দ্রৌপদীঃঅবান্তর প্রশ্ন।
কর্ণঃআমার অস্তিত্বই তো এক বিরাট জিজ্ঞাসা (দীর্ঘশ্বাস )আমার অস্তিত্বের কোনো প্রয়োজন তোমার নেই। তোমায় একটা প্রশ্ন করি আজ আমার জীবনের কতটুকু জান তুমি?
দ্রৌপদীঃআর সকলে যতটুকু জানে।
কর্ণঃআমি শুধু তোমার কথা জানতে চাই।
দ্রৌপদীঃ(নদীর বুকে আসন্ন অন্ধকারের দিকে মুখ ফেরালেন)সূর্য অস্তাচলে। আমাকে ফিরে যেতে হবে।
কর্ণঃজানি তোমাকে চলে যেতে হবে। অর্জুনের কাছে। তোমায় আমি বাধা দিতে পারি না। সে অধিকার আমার নেই।
দ্রৌপদীঃঅধিকার?তোমার অধিকারের প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে?
কর্ণঃ(ক্ষণকাল নীরব। নতমুখী। দ্রৌপদীর স্থির দৃষ্টি আবদ্ধ কর্ণের প্রতি। মৌনতা ভাঙলেন কর্ণ। ধীরে ধীরে মুখ তুললেন। শান্ত দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন দ্রৌপদীর দিকে। )আমাদের বর্তমান জীবনের গতিপথ তো অন্যরকম হতে পারতো পাঞ্চালী। একজন আমাকে জীবনের সেই আদিলগ্নে বঞ্চনা করেছে। জীবনের সমস্ত সুখানুভূতিকে সে বিনষ্ট করেছে। কিন্তু তুমি?
দ্রৌপদীঃবিধাতার বিধান নির্দিষ্ট কর্ণ। সত্যকে স্বীকার করে নেওয়াই বুদ্ধির প্রকাশ ও শ্রেয় । অসম্ভবের কল্পনায় কালযাপন বিচক্ষণতার লক্ষণ নয়। অবাস্তবকে মনে স্থান না দেওয়াই সমীচীন ।
কর্ণঃবিধাতার বিধান !তাই বটে!কিন্ত বিধাতা সত্যকে আড়াল করে ভাগ্য নির্ধারণ করেন কেন বলতে পার ?
দ্রৌপদীঃআবার সেই একই প্রসঙ্গ !
কর্ণঃএই একটি প্রসঙ্গ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার চেতনায় জাগ্রত থাকবে।
দ্রৌপদীঃঅসম্ভবকে মন থেকে মুছে ফেল। অলীক কল্পনাকে বিস্মৃতির অতলে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হও।
কর্ণঃএই প্রাণ যেদিন চিতায় পুড়বে সেদিন আমার সমস্ত চেতনা অনুভূতি কালের অতল গর্ভে আশ্রয় নেবে চিরতরে।
দ্রৌপদীঃতুমি কল্পনাবিলাসী কর্ণ । সংযত হও। পেছন ফিরে দেখা বীরের ধর্ম নয়।
কর্ণঃআমি কল্পনাবিলাসী !সত্য বটে!কিন্তু কল্পনাই তো বেঁচে থাকার রসদ যোগায় পাঞ্চালী। এই সত্যি তো তুমি অস্বীকার করতে পারবে না। আর ফেলে আসা জীবনকে না দেখলে জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার প্রেরণা কে দেবে আমায়?
দ্রৌপদীঃ প্রেরণা ?
কর্ণঃঅতীত আমাকে অনুপ্রাণিত করে। না পাওয়ার যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করে। আজন্মকালের বঞ্চনা লাঞ্ছনা প্রতিশোধস্পৃহায় উন্মত্ত করে তোলে। এত কিছুর মধ্যেও তোমার স্মৃতি আমার হৃদয়কে উত্তাল করে তোলে। আমি তোমাকে কি প্রচণ্ড ঘৃণা করি তুমি ভাবতে পারবে না। শুধুমাত্র বংশমর্যাদার মাপকাঠিতে যে নারী তার জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে শুধুমাত্র সেই নারী আমার যৌবনকে ব্যর্থ করেছে। একমাত্র সেই একজন নারীর জন্য আমি আমার যৌবন বিসর্জন দিয়েছি। শুধুমাত্র ঐ নারীর জন্যঅন্য কোনো নারীকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিই নি।
দ্রৌপদীঃস্তব্ধ হও। স্তব্ধ হও কর্ণ । শান্ত হও। আমার জীবনে তোমার অনুভূতির ইচ্ছের বিন্দুমাত্র মূল্য নেই। স্বামী -সন্তান -সংসার নিয়ে আমি আজ এক পরিপূর্ণ নারী। তোমার জীবনের ব্যর্থতার কাহিনীতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। সর্বোপরি এতদিন পর পুরনো কবর খুঁঁড়ে কি লাভ বল?যা সমাধিস্থ হয়েছে তাকে জাগাতে নেই।
কর্ণঃজানি সেকথা। এও জানি যে আমাকে দেবার মতো তোমার কিছু নেই। পাঞ্চালী তুমি একজন সম্পূর্ণ নারও। আর আমি?আমি এক অস্ম্পূর্ণ পুরুষ । আমার ঘর নেই সংসার নেই স্বজন নেই। সারাজীবন ধরে শুধু জেনেছি যুদ্ধ জয়ের কৌশল। আজ আমি বাহুবলে প্রতিষ্ঠিত । কিন্ত একজন অসম্পূর্ণ পুরুষ এই আমার সত্য পরিচয়। এক জীবনে আমার কর্মপ্রবাহ কিছুতেই সম্পূর্ণ হতে পারবে না। কে নেবে আমার অসমাপ্ত কর্মের ভার?বলতে পার দ্রৌপদী?বলতে পার কাকে উত্তরাধিকারী করে যেতে পারি।
দ্রৌপদীঃ(শান্ত সমব্যথী কন্ঠে)সংযত হও কর্ণ । আমি তোমার জওবন যন্ত্রণা অনুভব করতে পারি। কিন্তু তুমি তো বিচক্ষণ তাপস।
কর্ণঃআমি জানি তুমি কেন এসেছ?
দ্রৌপদীঃজান যদি তবে যে পথে অগ্রসর হয়েছ পার না সে পথ পরিত্যাগ করতে?
কর্ণঃহারানোর বেদনা আমি জানি।
দ্রৌপদীঃতবে কেন এ যুদ্ধের আয়োজন?
কর্ণঃবৃথা প্রশ্ন ।
দ্রৌপদীঃযুদ্ধের ফলাফল কি তুমি কল্পনা করতে পারছ না?কত নারী স্বামীহারা সন্থানহারা হবে একবার ভেবে দেখ কর্ণ । সেইসব হৃতসর্বস্ব নারীকন্ঠের মর্মান্তিক আর্তনাদ তুমি সইতে পারবে তো?
কর্ণঃএ যুদ্ধে আমার কোনো ভূমিকা নেই। আর তুমি যে হৃদয়বিদারক আর্তনাদের কথা বলছ সে কি শুধু নারীর? যে সব পুরুষেরা যুদ্ধে মিলিত হতে চলেছে তারা কি তাদের জীবনের প্রিয় সুখানুভূতি বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে না?তারা কি তাদের নিশ্চিন্ত নিরাপদ সুখাশ্রয় থেকে বিদায় নিচ্ছে না?যুদ্ধগামী পুরুষের আত্মা মৃত্যুর পূর্বেই বিদায় নেয় দ্রৌপদী। তাদের জন্য কি তোমার কোনো সহানুভূতি নেই?তুমি নারী বলে শুধু নারীর সমব্যথী ?তোমার কাছ থেকে পুরুষের জন্য সহানুভূতি প্রত্যাশা করা ভুল।
দ্রৌপদীঃপ্রগলভতা তোমার জন্য নয় কর্ণ। তোমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে তা নিয়তিনির্দিষ্ট। সেসব দুর্ঘটনা । তার জন্য দুঃখ করো না।
কর্ণঃ উঃ। আবার সেই নিয়তি। আমি জানি না নিয়তি ,মানি না নিয়তির শৃঙ্খল ।
দ্রৌপদীঃঅতিক্রম করতে পেরেছ কী?
কর্ণঃকেন?কেন ?কেন আমি এমন অসহায় ?কেন এ নিষ্ঠুর বঞ্চনা ?অসহ্য। অসহ্য এই জীবনের ভার।
দ্রৌপদীঃকিন্ত কর্ণ তুমি যে পথে মুক্তি চাইছ সেই পথে আরও অনেকে অনেক কিছু হারাবে। তুমি তাদের কথা ভাববে না?
কর্ণঃভেবেছি। কিন্তু আমি নিরুপায় । প্রতিজ্ঞাপাশে বদ্ধ ।
দ্রৌপদীঃপ্রাণের চেয়েও প্রতিজ্ঞা তোমার কাছে বড়?
কর্ণঃ না দুই সমান ।
দ্রৌপদীঃসিথির সিঁদুর আমার বড় প্রিয় ।
কর্ণঃশুধু তোমার নয়। প্রতিটি প্রণয়িনী স্ত্রীরই প্রিয়। যে গভীর প্রেমের সঙ্গে তুমি তোমার অর্জুনকে আবদ্ধ করেছ সেই পবিত্র প্রেমই পুরুষের রক্ষাকবচ,প্রেরণা ,প্রশান্তির কোমল শয্যা।
(দ্রৌপদী অশ্রুপূর্ণ নেত্রে কর্ণের দিকে তাকালেন। নীরব রইলেন ক্ষণকাল )
কর্ণঃবর্ণময় জীবনের বিচিত্র বর্ণ প্রশান্তভাবে গ্রহণ করো দ্রৌপদী। বিচলিত হয়ো না। আজীবন পুরুষকে রক্ষা করেছে একজন নারী। নারীশক্তিতেই পুরুষের বিকাশ -বৃদ্ধি।
দ্রৌপদীঃআমায় ক্ষমা করো কর্ণ । তোমাকে অনেক কটুকথা বলেছি।
কর্ণঃক্ষমা?!তোমার প্রতিটি বক্তব্য তোমার গভীর বিশ্বাস সঞ্জাত। তোমার যুক্তির সমর্থনে তোমার মন্তব্য । তার জন্য লজ্জা বা অনুতাপ নিষ্প্রয়োজন ।
দ্রৌপদীঃআমি আসি কর্ণ। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।
কর্ণঃযাও। প্রেমের যে প্রদীপ তোমার মনের গহন প্রদেশে প্রজ্বলিত তাকে চিরকাল জ্বেলে রেখো। তুমি সুখী হও।
দ্রৌপদীঃবিদায়কালে যাও বলতে নেই। বলো এসো।
কর্ণঃএ জন্মে তোমার আমার এই সাক্ষাৎ যেন শেষ সাক্ষাৎ হয়,এই প্রার্থনা করি। বিদায় দ্রৌপদী। আজকের সন্ধ্যার এই অন্ধকার হয়তো আমার এই জীবনের শেষ অন্ধকার । কালকের সূর্যোদয় হয়তো নতুন জীবনের ঠিকানা বলে দেবে। আমার অপেক্ষা এখন নতুন আলোর জন্য। বিদায় দ্রৌপদী,বিদায় ।
সমাপ্ত।
Sankari Biswas, Clo-Upendranath Dey, Netaji Road, Beside Jyanadadebi Girls High School, P.O- Dinhata, Dt- Coochbehar, PIN- 736135, Mobile- 8159914968.
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে