আত্মকথন
...............
তুমি কাঁদছ!কেঁদোনা।
তুমিনা চাইতে আমি ভালো থাকি!
আজ আমি সত্যিই ভালো আছি।
এক্কেবারে স্বাধীন।
যেদিন ওরা দেখতে এলো সেদিনই
বাবাকে কিছু বলতে না পারলে ও
তোমাকে বলেছিলাম এত তাড়াতাড়ি
পর করে দেবে আমায়!
তুমি মৃদু ধমকে বলেছিলে
ও আবার কি কথার ছিরি।
ওরা আশীর্বাদ করতে আসবে শুনে
খুব কেঁদে বাবাকে বলেছিলাম
আমি পড়তে চাই।অন্তত কলেজটা...
সেদিন বাবার ধমকানি বন্ধ করে দিল
আমার কান্নার শব্দ।
বললো আরো পড়ে তুমি কি চাকরি করবে!
যার সাথে তোমার বিয়ে দিচ্ছি জান
তার বাবার কত টাকা!দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।সমস্ত সম্পত্তির মালিক একমাত্র ছেলে
তোমার বর।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর আগেই আমি ওদের বাড়ির বউ।
বিয়ের তিন রাত কাটাতে না কাটতেই বুজেছিলাম বাকী জীবন টা কেমন কাটবে।
তাই অষ্টমঙ্গলায় এসে আমি যখন বলছিলাম
আমার বর, শ্বশুর শ্বাশুড়ি ,ননদের কথা
চোখের জলে ভিজে যাচ্ছিল নতুন শাড়িটা।
বাবা আবার মেজাজ নিয়েই বললো
দুদিনেই তুমি মানুষ চিনে গেলে,
আর তুমি গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললে
মেয়েদের একটু মানিয়ে নিতে হয় মা।
আমার মধ্যে কি কোনো খুঁদ ছিল মা!
তবে কেন আমাকে না পড়িয়ে মোটা টাকা পণ দিয়ে পনের বছরের বড়ো একজনের সঙ্গে
আমার বিয়ে দিলে ! যার বাবার টাকা আছে
অথচ সে নিজে কিছু করে না।
মায়ের আঁচলের তলায় থাকে,মায়ের কথায় ওঠে বসে।
যেদিন প্রথম উনানে রান্না করি খুব কষ্ট হয়েছিল
ধীরে ধীরে ধান সেদ্ধ মুড়ি ভাজা থেকে শুরু করে
সংসারের সমস্ত কাজ, অথচ প্রতিনিয়ত
শাশুড়ির মুখ ঝামটা ।
ওরা আমায় কারোর সাথে কথা বলতে দিত না,
এমনকি খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনোও নিষেধ।
তোমার মনে আছে প্রথম জামাইষষ্টিতে এসে আমি আর যেতে চাইনি ।আমার বর আমায় রেখেই চলে গেল।
ও বাড়িতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার গল্প
শুনেও তোমরা বললে লোকে কি বলবে।
তুমি ই দিয়ে এসেছিলে ওখানে।
যেদিন রিপোর্ট টা দেখে জানতে পারলাম
মা হতে চলেছি, একটু খানি আনন্দ হয়েছিল।
ভাবলাম বাচ্ছা এলে বাড়িটা একটু বদলাবে!
শাশুড়ি মা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিতেন
নাতি যদি না হয়.......
জানো মা ওই রকম অবস্থায় কাজ করতে আমার ভীষণ কষ্ট হতো।
ওদের অনেক টাকা অথচ একটা কাজের লোক....
আমিই তো বিনা পয়সার ঝি....।
তোমার মনে আছে আমার মেয়ে হয়েছে শুনে
ওরা কেউ আসেনি নার্সিং হোমে।
শুধু ওর বাবা হয়ত রক্তের টানে।
আমি সেদিনই দেখেছিলাম ওর চোখ দুটো
যেখানে মেয়ের প্রতি ভালোবাসার খামতি।
মেয়তাকেও মনের মতো করে মানুষ করতে পারিনি মা।হাজার হোক ওই বংশের রক্ত।
এতো দিনে বুঝেগেছি আমার মেয়ে তোমাদের
কতো ভালোবাসে আর তোমরা ওকে।
আর সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো এই সাত বছর বয়সেই ও আমাকে ছেড়ে থাকতে শিখেগেছে।
একটা কথা রেখো মা,মেয়েটা যতদূর পড়তে চায় ওকে পড়াবে।
হয়তো স্বার্থপরের মতো তবু বলছি আজ এই মূহুর্তে আমি সত্যিই খুব ভালো আছি।
মা তুমি যেমন কাঁদছোআমিও কেঁদেছিলাম তখন, যখন বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করে জার থেকে কেরোসিন তেল ঢালছিলাম গায়ে,
বার বার শুধু একটাই মুখ ভাসছিল চোখের সামনে, তখনও আমি দ্বন্দ্বে, দেশলাইয়ের একটি কাঠি সরিয়ে দিল সব দ্বিধা।
আমার শরীরটা জ্বলে উঠলো দাউ দাউ করে।
এক হাত ধরে টানছে জীবন আর এক হাত মৃত্যু। আমার শরীরটা তখনও কাঁদছে প্রচন্ড যন্ত্রণায়,তারপর আমি হাসতে হাসতে পোড়া শরীরটা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম মৃত্যুর হাত ধরে।
ভালো আছি,ভালো আছি মা আমি ভালোই আছি।।
..............
Tuli Mondal,c/o - Sumit Modak, Sona jhuri ,Po - Dighirpar Bazar, Falta ,24 pgs s Pin. 743503