আমরা জানি ৭ নয় ৫ থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে শ্রমিক জীবন l বর্ণপরিচয় সহজপাঠ নয়, ওদের শিক্ষা শুরু হয় সেই ভোর হতে, আর শেষ হয় দিনাবসানে বা অনেক রাতে l ওদের গুরুকুল চায়ের দোকান, পাইস হোটেল, ধাবা, ইটভাটা, মোটর গ্যারাজ, পাথর খাদান, ফ্ল্যাট বাড়ি, রাজ মিস্ত্রি কাজ— বিস্তৃত সে পরিমণ্ডল l ব্যাপক আকাশ l তবে সে আকাশে আলো নেই, শুধুই মেঘলা আবছায়া আর স্তিমিত অন্ধকার l
অথচ কত আলো, কত আয়োজন চারপাশে l গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে ভোট আসে, সর্বজনীন শিক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা অধিকার আইন, শিশুশ্রম বিরোধী আইন,কত বিন্যস্ত সুচারু কারুকার্যময় বাহারি বিলাপ !
তবু গোটা ভারতবর্ষে ৬ থেকে ১২ কোটি শিশু শ্রমিক l এটা সরকারী হিসেব, তাই রাজনীতি ঢুকে আছে, বাস্তব নিদারুণ এক ভয়াবহ চিত্র দেয় l
দারিদ্র্য আর সামাজিক সুরক্ষার অভাব এই শিশুশ্রমের মূলে l উন্নত দেশগুলিতে সামাজিক সুরক্ষা বলয় থাকে, কিন্তু ভারতবর্ষের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়শীল দেশে সামাজিক সুরক্ষা না থাকায় আর উদার অর্থনীতির ধাক্কায় বেকার সমস্য ভয়াবহ, স্বাস্থ্য শিক্ষার পরিকাঠামো
নেই l তাই দারিদ্র্য এখানে শিশুশ্রমের উৎস l কম পয়সা দিয়ে, অনেক ক্ষেত্রে শুধু সামান্য খাদ্যের বিনিময়ে আট থেকে তের চোদ্দ ঘন্টা খাটিয়ে নেওয়া হয় l শৈশব চুরির এই সওদা এখানে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যে চলছে l
শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মানুষ শিশুশ্রম বিরোধী মিছিলে হাঁটছেন, আবার বাড়িতে বাচ্চা সব সময়ের কাজের লোক রাখছেন l শিশুদের দিয়ে গাড়ি ধোয়ানো, অফিসে ঝাড়পোঁচ, দোকানে খাটানো সবই চলছে l আমাদের দেশের অনুন্নত প্রান্তিক মানুষজন, তপশিলী জাতি উপজাতি আদিবাসীরা কর্মহীন হওয়ায় রোজগার নেই l তাই অভাবের জ্বালায় সন্তানকে সামান্য পয়সা বা খাদ্যের বিনিময়ে বেচে দিতে বাধ্য হয় l আর মহান ভারতের ভদ্রজন তাদের নিয়ে শিশুশ্রমে লাগায় l সরকার নির্লিপ্ত ! ভোটের স্লোগান হয় 'বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও' l শিশুরা আর বাঁচে না l
***********************************************************************
।।কবিতা।।
যন্ত্র ও মানুষ
যন্ত্র কি এতই কাম্য মানুষের চেয়ে
প্রসাধন প্রয়োজন ক্ষুধা ক্লেশ থেকে?
সাম্রাজ্যবাদের থাবা বিশ্বায়নের পথে
সর্বত্র বসেছে গেড়ে উন্নয়নের নামে l
মুখের আড়ালে মুখ, হয়তো মুখোশ
তাকে আজ ছিঁড়ে ফেল, কর্মহীন শ্রম
উদ্বৃত্ত বেকার কারা? তারা তো মানুষ,
শ্রমিকহীন কারখানা, মানষহীন দেশ
কারা চাইছে আজ? পাতছে ফাঁদ—
ফাঁদের উপরে পালিশ, সুচারু ভান l
যতই ভনিতা থাক সজাগ শ্রমিক
শ্রমের মর্যাদা চায় বাঁচার আশ্বাস !
রঙিন ফানুস নয়, কর্মময় দেশ
তারাই গড়তে চায় সংগ্রামের রেশ !
**********************************************************************
রবীন বসু
১৮৯/৯, কসবা রোড, কলকাতা-৭০০ ০৪২
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন