চুইনগামটা থু করে ফেলে ঝন্টু বলে,- ধুসসালা, জীবনটা ছিবড়ে হয়ে গেল মাইরি । এটাও সালা কেমন তিতকুটে মেরে গেছে, এতক্ষণ চিবোচ্চিলাম বেশ মিস্টি লাগছিল । ঝন্টু এগিয়ে গেল ক্লাবের দিকে, হাক দিল - খোকা, গজা,ভোলা কোতায় গেলি সব । আয়রে কাজের পেলানটা ছকে নিই । সামনে ভোট, এবার একটু চাপ আছে, সালা এবার জিতিয়ে দিতেই হবে অমলবাবুকে, হিল্লে হয়ে যাবে রে। ভোলা বিড়িতে সুখটান দিয়ে দমটা একটু আটকে নিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে, -- চুপ করতো, কাজ ফুরালেই সালা বাঞ্চৎরা আর চিনতেই পারেনা । সেই আশায় আশায় বাল সরকারি চাকরি করার বয়েস পার হয়ে এসেছি । ঝন্টু বুক চিতিয়ে বলে- এবার আমি আচি,নো টেন্সান, সুদু কাজ কাজ করে যা, আমি যা যা বলচি । খোকা মাঝখান থেকে বলে - মালপত্তর কি এসেচে, ওপাড়ার দুলুর দল খুব লপচপাচ্চে , গরম গরম ভাব, আমাদেরও রেডি থাকতে হবে । গজা হায়নার মত হেসে বললো - তুই মাইরি সেই কেলানেই থেকে গেলি, কেমন মাসিমা মাসিমা ভাব । খোকা গুটিয়ে গিয়ে বলে, --না এমনি বলচিলাম , আসার কতা ছিল তাই। ঝন্টু বলে- এসব বালের কতা রাক তো , কাজের কতা সোন, আজ আমরা রাস্তার মোরে মোরে ব্যানার গুলো খাটিয়ে নেবো , কাল চাল বিলি করা আচে । গজা বলে -- ইসকুল থেকে চালের বস্তা কি এসেচে ? ঝন্টু বলে - না, কাল ছুটি থাকবে ইসকুল, পদা মাস্টার সন্দে বেলা রিসকা করে কেলাবে পৌচে দিয়ে যাবে ।
খোকা মাঝখান থেকে বলে ওঠে, -- ইসকুলের চাল লোকেদের বিলোবে তো ইসকুলের ছেলেপুলেরা কি খাবে ? গজা বিশ্রী আওয়াজ হেসে ওঠে, বলে -- কেনরে ওগুলো কি তোর বাপের পয়দা করা ছেলেপুলে? খোকা খুব রেগে গিয়ে বলে-- আই মুক সামলে কতা বলিস। ওইটুকুই বলে চুপ করে যায় খোকা, নিরীহ টাইপের ছেলে, তাও কি করে যেন জুটে যায় ওই দলে । মুখটা দুঃখে পাংশুটে হয়ে যায় ।
ঝন্টু সেটা লক্ষ্য করে বলে,- সোন গজা, এমনিতেই মাতা খারাব হয়ে আচে, তুই আর ফিচেল বাদাস না ।
খোকার দিকে চেয়ে বলে - সোন, কতা তো একি, সেই ঘুরে ফিরে গরীবলোকের ঘরেইতো যাচ্চে চাল গুলো । খোকা মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে বলে - তা ঠিক কতা, এরাম ভাবে ভেবে দেকিনি ।
ঝন্টু বিজ্ঞের মত মুখ করে বলে -- তব্যে !??
এমন সময় দোলনচাঁপা এসে বলে -- দাদা, বাবার হাপের টান বেড়েছে, মা ডাক্তার ডেকে আনতে বললো । ভোলা তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলে -- ডাক্তার লাগবে না, আরো দুবান্ডিল বিড়ি নিয়ে দে, একেবারে টান চলে যাবে ।
দোলনচাঁপা বলে -- এরকম বলিসনা তো দাদা !! তুইও তো বিড়ি খাস বাবার থেকে চুরি করে, তখন বলতে পারিস না বাবা কে ? চ তাতারি, মা ডাকচে ।
দোলনচাঁপা চলে যায়, পিছনে বিরক্তমুখে ভোলাও উঠে চলে যায় । দোলনচাঁপাকে দেখে লোভে চোখ দুটো চক্ চক্ করে ওঠে গজার, বলে-- শালা দোলার ফিগারটা দেকেচিস মাইরি? কি ঠমক, দেবো সালা একদিন দোল খাইয়ে ।
ঝন্টু খুব রেগে গিয়ে বলে -- সালা সুয়োরের বাচ্চা, ভোলার বোন আমাদেরও বোন, আর একদিন বলবিতো সালা জিব উপরে নেব।
গজা কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায় ক্লাব ঘর থেকে, যাওয়ার সময় বলে যায় -- দেকে নেব।
বেশ কিছুদিন গেল,ভোট আসন্ন, ঝন্টুর কোনো পাত্তাই নেই, সকাল থেকে খোঁজ চলছে, খোকা বললো -- হ্যাগো ভোলাদা , কাল সন্দে বেলাতো তোমার সাতেই ছিল ঝন্টুদা ।
ভোলা খেঁকিয়ে বলে,-- তাতেকি? সেতো সন্দেবেলা ছিল, তাপ্পর কোতায় গেচে আমি জানবো কি করে, আমি কি কোমরের ঘুন্সিতে ভরে রেকেছি ?খোকা মুখ কাচুমাচু করে বলে-- তোমরা তো একসাতেই থাকো সবসময়, তাই বলা ।
ভোলা বলে-- দেখ খরচের খাতায় নাম উটে গেচে হয়তো, খুব বেড়েচে ঝন্টেটা । অনেকবার বলেচি দুলুদের সাতে মেলা কেচালে জড়াসনি, তা কে সোনে কার কতা । ওদের অনেক পাওয়ার, একটু থেমে ফিসফিস করে বলে --ঝন্টে থাকতে আমাদের কোনো হিল্লে হবে না । ও সালা একাই আম খাবে, আমরা আঁটি চুসবো, ভালই হয়েচে বুঝলি ?
এমন সময় বিলে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, -- ও খোকাদা, ও ভোলাদা খপর সুনেচ ? ঝন্টেদা কে পুলিশে ধরে নিয়ে গেচে ?
খোকা চোখ কপালে তুলে বলে -- কেন রে? কি হল?
বিলে বলে-- পদা মাস্টার ইসকুলের চাল পাচার কচ্চিলো, ঝন্টে হাতেনাতে ধরে বহুত কেলিয়েচে পদা মাস্টার কে, মাতা ফাতা ফাটিয়ে দিয়েছে, ব্যস!!! অমনি পদা মাষ্টার পুলিশে কমপেলান করেচে , বলেচে ঝন্টেই নাকি চাল পাচার করচিলো । সে নিজে বাদা দিতে গিয়েচিল, তাই নাকি ঝন্টে মেরেচে ।
ভোলা বলে-- ভালোই হয়েচে, থাক শ্বশুরবাড়ি কদিন, বড্ড বেড়েচিল।
খোকা বলে-- এমন কেন বোলচো গো ? ঝন্টেদা সবাইকে কত্ত ভালোবাসে, চলোনা একবার অমলবাবুকে বলে,জামিনটা করিয়ে নিই ।
ভোলা দাঁত খিচিয়ে বলে-- ওই হারামী করাবে জামিন? সালা ওতো পদা মাস্টারের বন্দু, ওই করিয়েচে সব, না হলে পুলিশের কি হিম্মত আচে এত, যে পাটির লোক ধরে নিয়ে যাবে ?
খোকা খুব করুন গলায় বলে-- আমরা সব পাটির লোকের হাতের পুতুলগো ভোলাদা, তেনারা করায় আর সাজা হয় আমাদের ।
আচ্চা চলিগো ভোলাদা, দেকি ঝন্টেদার জন্নো কিচু কত্তে পারি কিনা ।
ভালই হয়েছে।গালিগালাজ গুলো ঠিকঠাক।সারাদিন কি এইসব করেন?
উত্তরমুছুন