শত আমিনার আত্মকথা
জীর্ন শাড়ির ভাঁজে শীর্ন শরীর। ইটভাটার সকালের দৃশ্য পটে ফুটে ওঠে ব্যস্ত
শত আমিনার চরিত্র। ওরা দিন মজুর। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষী। দিনের আলো
নিভে এলে মালিক শ্রেনী অস্বচ্ছ পর্দা সরিয়ে ঢুকে পড়ে জীর্ন শাড়ির ভাঁজ
খুলে শীর্ন শরীরের অভ্যন্তরে। কাল সাপের ছোবলের আতঙ্কে কেঁদে ওঠা শব্দ
প্রাচীর ভেদ করে ছড়াতে পারেনা উদার আকাশে। দেওয়ালের প্রতিটা ইটে তখন
শ্রমকন্যাদের অসতী হওয়ার ছাপ।
একমুঠো অন্নের জোগানের জন্য লুটে পুটে খায় মালিক শ্রেনী। তবু পূর্নতা
পায়না অভুক্ত পেট। হাড় সর্বস্ব শরীর গুলো সারাদিনের পরিশ্রমে বেদনার্ত
তবু মালিকের দালাল প্রান্তে জড়িয়ে নেয় তাদের। শীতল পানীয়ের বোতলে ঢেলে
দেয় শ্রমকন্যাদের থকথকে কালো রক্ত।
চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসে তার দুটি চোখ । ফুটপাতের এককোনে অসাড় দেহটাকে
মেলে দেয় আমিনা। ছায়াময় বাতিস্তম্ভের নীচে তার লজ্জাবনত শরীর । ভোরের আলো
ফুটতে তখনও কিছু ঘন্টা দেরি। তারপর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে বাবু আর বাবুর
বিবিদের চুমুক। আর আমিনা ? সে চলেছে তোমাদের সুখী ইমারতের ইট গড়তে।
সব কিছুর আড়ালে যে গল্পটা আছে তাই ফুটে ওঠে প্রতিটি কাঁচা ইটের অলিন্দে
অলিন্দে। শ্রমজীবী মানুষগুলোর প্রতিটি রক্তে বোনা হতে থাকে বাবুদের সুখের
ইমারত। অঘোরে আজ ঘুমিয়ে বিবেক। আসমাপিকা ক্রিয়ার মতো ব্যথা সারা শরীর
জুড়ে তাও গনগনে চুল্লির পাশে বসে একটা একটা করে সুখের ইট সাজাতে থাকে সে
বিনিময় কাঁকর মেশানো মোটা চাল , ভাবতে ভাবতে মাটি লাগা হাতের উল্টো পিঠে
চোখ মোছে আমিনা । তার চোখের অশ্রুকণা অন্যজনের চাহনিতে বলে যায় বিপ্লবের
গান - " নূতন প্রান দাও , ভাত রাঁধতে চাল দাও , ফিরোজা রংএর বিকেল দাও "।
খানিক ধুলো উড়ল। নারী শ্রমিকদের সাথে এখনও বৈষম্য। হাড় ভাংগা খাটুনির
পরেও দিনশেষে ১০০কি ২০০ টাকা। যেখানে পুরুষ শ্রমিক পায় ৪০০ টাকা। পটভূমি
বলে নারীর শ্রম এবং যৌনতাকে মুনাফার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে গন্য করা হয়।
শোষণ নির্যাতন যেন তাদের অঙ্গ ভূষণ। ইটভাটায় নারীরা কাঠ ফাটা রোদে হাড়
ভাংগা পরিশ্রম করে চলেছেন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা তবু মেলে না
ন্যায্য মজুরী।
পরিবারের মুখে দুবেলা খাওয়ার তুলে দিতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছে তারা। কখনও
মাটিকাটার কাজ, কখনও ইটভাটা, কখনও রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের। কথা বলার ফাঁকে
দুচোখের কোনে টল টল করে অশ্রু। শীর্ন দেহটা রোদ আর আগুনের তাপে বিবর্ন।
তাদের কষ্টের মূল্য কেউ দেয় না আর কষ্ট তাদের পিছু ছাড়ে না। একদিন কাজ না
করলে থাকতে হবে উপোসী পেটে। শুধু তাকে নয় সন্তানদের এবং পরিবারের অন্য
সদস্যদেরও।
এটাই হলো হাজার শ্রমিকের গল্প। শুধু একমুঠো অন্নের জন্য কেউ দেয় না তাদের
কষ্টের মূল্য। যাদের কষ্টের বিনিময় আমরা পরম সুখী।
===========০০০০০০============
চারু
কলকাতা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন