Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

মৌসুমী প্রামাণিক (মৌসান) এর অণুগল্প

   রাজু'দির কথা




আমি খ্রীস্টান মিশনারী স্কুলে পড়াশুনা করেছি। ছোটবেলা মা'ই ব্যাগ কাঁধে
করে কিংবা সুটকেস হাতে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল
ছিল প্রায় ২০ মিনিটের হাঁটা পথ। মা'ই স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন। শুধু শনিবার
বাবা সেই দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিতেন। সেদিন তো আমাদের দুই বোনের আনন্দে
শেষ থাকত না। যখন ক্লাশ ফাইবে উঠলাম, তখন বাবাও খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন
অফিস নিয়ে, ওভার-টাইম, অডিট আর মা ছোট বোনকে নিয়ে। তখন থেকেই রাজু-দির
সঙ্গে যাতায়াত করতাম। বিভিন্ন বয়সে আরো পাঁচ ছ'জন যেত একসঙ্গে। রাজু-দির
চেহারা ছিল রোগাটে,কালো। বেশীর ভাগ সময়ে নীল পাড় সাদা শাড়ি পরতেন, পুরানো
দিনের মা, ঠাকুমার স্টাইলে। দুই কাঁধে চার, পাঁচটা ব্যাগ, দুই হাতে
সুটকেস নিয়ে গটগট করে এগিয়ে চলতেন; আর আমরা পিছন পিছন প্রায় ছুটতাম বলা
চলে। যেতে আসতে কয়েকটা বস্তি পড়ত। অসভ্য ছেলেদের দল টিপ্পনি করতে ছাড়ত
না..."রাজুদির পল্টন..." রাজুদি একবার কটমট করে একবার তাকালে সব সেঁধিয়ে
যেত ঘরের ভিতর। রাজুদির স্বামী পাশের একটি স্কুলের দারোয়ান ছিলেন আর ওনার
মেয়েরা আমাদের স্কুল থেকে পাশ করে গ্র্যাজুয়েশান করছিলেন।



এক একবার মনে হত রাজু আবার কোন মেয়ের নাম হয় নাকি? কিন্তু কোনদিন মনে এই
প্রশ্ন জাগে নি যে রাজুদি'র জাত কি? এমনকি সাদা পোষাকে আপাদমস্তক ঢাকা
সিস্টারদের দেখেও এমন প্রশ্ন মনে জাগে নি। রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েই
আমাদের প্রেয়ার হত। সেই পর্যন্ত্য রাজুদি অপেক্ষা করতেন গেটে দাঁড়িয়ে।
কেউ যদি আমরা টিফিন আনতে ভুলে যেতাম, তিনি বাড়ি ফিরে গিয়ে সেটাও এনে
দিতেন। ঈশ্বর কি মেটিরিয়াল দিয়ে যে তাঁকে বানিয়েছিলেন! কি এনার্জী তাঁর!
কোনদিন মনে হয়নি মাত্র ত্রিশ টাকার বেতনভোগী তিনি। রাস্তা পার হবার সময়
মায়ের মতই তাঁকে আঁকড়ে ধরতাম। ছুটির সময় মাঝেমধ্যেই কড়াকড়ি হত; গার্জেন
না এলে ছাড়া হত না। হেডমিস্ট্রেস জানতে চাইলেন একদিন, "তোমাদের নিতে কে
এসেছে..." রাজুদি এগিয়ে আসতেই সিস্টার বললেন, "ও রাজু, তুমি? যাও
সাবধানে নিয়ে যেও..." বলার জন্যে বললেন। তিনিও জানতেন যে রাজুদি কতটা
সাবধানী আর কতটা কেয়ারিং। ক্লাশ নাইনে যখন উঠলাম তখন বুঝলাম যে রাজুদি
হিন্দু নন, ক্রীস্টান। হ্যাঁ। বাগমারীতে একটা স্পোর্টস গ্রাউন্ডে আমাদের
অ্যানুয়াল স্পোর্টসের আয়োজন হয়েছিল। যে স্কুলের মাঠ ওটা, সেই স্কুলেই
রাজুদির স্বামী চাকরী করতেন। খেলা শেষে রাজুদি নিজের ঘরে আমাদের নিয়ে
গেলেন। দেখলাম মা মেরী আর যীশুখ্রীষ্টের ছবির নীচে ধুপ জ্বলছে। মা কালী
আর মসজিদের ছবিও দেওয়ালে টাঙানো ছিল। দেখে শ্রদ্ধায় মনটা ভরে গেল;
এমনিতেই ভীষন ভালবাসতাম তাঁকে; এখন থেকে সেই ভালবাসায় শ্রদ্ধা মিশ্রিত
হল।

রাজুদির আত্মসম্মান বোধও ছিল প্রখর। ঐ মাঠের একপাশে টালির ছাদের বাড়ি ছিল
তার। চারিদিকে দারিদ্রতার নিশান। পূজোর সময় বা অন্য কোন অকেশানে মা যদি
শাড়ি দিতে চাইতেন, উনি নিতেন না। এমনকি খাবার দিলেও মুখে তুলতেন না।
বৃহস্পতিবার এমনিতে আমাদের ছুটি থাকত; ওনারা ঐদিন উপোস করে খ্রীষ্ট
প্রসাদ গ্রহন করতেন। কিন্তু কোন বৃহস্পতিবার স্কুল খোলা থাকলেও রাজুদি
কিন্তু কামাই করতেন না। সবচাইতে বড়কথা পাঁচবছরে উনি একদিনও কামাই করেন
নি। যদিও কোনদিন না আসতে পেরেছেন তো নিজের মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেই
মেয়ে যে নাকি গ্রাজুয়েশান করছিলেন তখন; পরে আমাদের স্কুলেই টিচার হয়ে
জয়েন করেছিলেন, তিনিও আমাদের ব্যাগ বয়ে নিয়ে যেতে কোন লজ্জা বোধ করেন নি।
এটা বুঝেছিলাম যে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও নিজের মায়ের কাজটাকে কখনো ছোট মনে
করেন নি। আর সেই কারণেই বোধহয় আমরা যারা ক্লাশ এইট নাইন টেনে পড়তাম,
নিজেরাই নিজেদের ভারী ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে চলতে শিখলাম। রাজুদি সঙ্গে যেত
ঠিকই; কিন্তু তাঁর চওড়া কাঁধের ভার একটু হলেও আমরা লাঘব করতে পেরেছিলাম;
সময় সময় বইয়ের ভারে আমাদের কাঁধে লাল দাগ চেপে বসতো; উনিও কখনো আমাদের
জোর করেন নি। বলেন নি যে 'তোমাদের বোঝা তমরা নিজেরা বহন করো...' তাও ওনার
মত নিরাপদ সাথীকে কষ্ট দেব না বলেই হয়তো আমরা আমাদের বোঝা নিজেরাই বহন
করতে শিখেছিলাম। একজন প্রান্তিক মানুষ হয়েও উনি আমাদের ধৈর্য্য,
সহ্যক্ষমতা ইত্যাদির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলেন কোন মৌখিক উপদেশ ছাড়াই।

আজ স্মৃতিচারনা করতে গিয়ে এই উপলব্ধি হচ্ছে যে শিক্ষা রাজুদি আর তাঁর
স্বামীর মত প্রান্তিক দুটি মানুষ তার মেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে দিয়েছেন,
সেটাই আসল শিক্ষা। আর আমরা যে শিক্ষার বড়াই করি, অহঙ্কার করি, তা নকল,
মূল্যহীন। হয়তো তিনি তাঁর কাজটাকে শুধুমাত্র মাস মাইনের পরিবর্তে কাজ
হিসাবে দেখেন নি, সেবা হিসেবেও দেখেছেন। আর আমরা নিজেদের প্রফেশানাল বলি
বটে অথচ ছুতো নাতায় আমাদের এমপ্লয়ারকে, তিনি যদি সরকারও হন, তুলোধনা করতে
ছাড়ি না। আমরাও বাঙালী, ওঁরাও বাঙালী, তবুও মানসিকতার এত তফাৎ কেন? আমরা
হিন্দু আর ওঁরা খ্রীস্টান, তাই কি? জানিনা।।
********************************************************






মৌসুমী প্রামাণিক
কলকাতা-৭০০০১০

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক