১..
চিচিংফাঁক
ছেলেবেলাগুলো হঠাৎ একটা বাক্স হয়ে যায়।
তারপর, কত ধুলো জমে জমে ইতিহাস...
হলুদ হাওয়া বাদামী ঘাস সবুজ শিশিরে ভেসে যায় চোখমুখ।
টিকালো নাকের পাশেই গজিয়ে ওঠা একটা তিল বড্ড ভালেবেসেছিল সেই ঠোঁটটাকেই।
দুরন্ত শহরের মারকুটে রাস্তায় ছোরা ঘুরিয়েছি কতবার বেদায়পের মত।
রাত দশটার ফিরতি ট্যাক্সিতে জাপটে কামড়ে খেয়েছি পরস্পরের ফুটন্ত শরীর। তারপর আচমকা বৃষ্টিতে শুয়ে শুয়ে ফুটপাতও দেখেছে সিনেম্যাটিক রোমান্স।
উল্কাপাতের মত কতকত রাত পৃথিবীর পিঠেপিঠ রেখে কবিতা লিখেছে তরতরিয়ে। তবুও বাক্স খুলে একবারও ঝুঁকে দেখিনি, ছেলেবেলা।
প্রতিবার নতুন ভোরের ওল্টানো পাতায় শুরু হয় আরও একটা নতুন প্লট। যেখানে নায়িকা আমিই, তবে নায়কের ইমেজ বদল হয়।
ডানপিটে লোফার প্রেমিকের বদলে স্টেবেল সার্ভিসম্যান। আবার দুরন্ত শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাইস্পিড তুলে বিদেশে যাত্রা করে নিখুঁত হানিমুন।
একটা নির্ভেজাল সাংসারিক মাছভাতসিনে চরম মোচড় দিয়ে টুক করে কখন ঢুকে পড়ে একটা দুষ্টুমিষ্টি প্রজাপতি। জোর করে আমার আঙুল ধরে নিয়ে যায় সেইই ধুলোজমা বাক্সটার সামনে। আদোআদো গলায় আমরা বলি, 'চিচিংফাঁক '...
কেমন করে যেন বাক্সটা খুলে যায় আবার.......।
২..
প্রথম প্রেমটা ভাঙার পর
প্রথম প্রেমটা ভাঙার পর মনে হয়েছিল পৃথিবীর পুরোটাই জল। ভাসার চেষ্টা করিনি একফোঁটাও। তাও ফুসফুসে বায়ু ভরে দিল মাবাবা। জোর করে সাঁতার শিখিয়ে বলল, 'চ্যাম্পিয়ন হতে হবে'।
তারপর বে-এ-শ কয়েকবার ডুব দিয়েছিলাম ডুবব বলেই। অজান্তেই বাটারফ্লাই স্টোক শিখে একেবারে সাগর। হাতের মুঠোয় দেখি হঠাৎ আইরিশ দ্বীপ। পা রাখতেই মনে হল, বাড়ির ছাদটাকে এরকমই কিছু গাছ আত্মীয়ের মত ঘিরে থাকত। কখনও গোছাগোছা ফুল এগিয়ে দিচ্ছে তো কখনও থালা থালা ফল। পূবের ফাটা থামটায় একটা ঘুড়ি আটকে থাকত বহুদিন যাবৎ। হাওয়ায় ঝাপটা খেলে মনে হত পাখি উড়ে গেল।
ওখানে বিছানো মাদুরে বহু ঘুম জড়ানো আছে আজও। অঙ্কের খাতার ওপর ছড়ানো ডালমুট।
মাধ্যমিকের কাছাকাছিই ছেলেটা একসাথে পড়তে এল দাদার কাছে। পাতার পর পাতা রচনা উড়িয়ে এঁকে দিতাম কান্ডের প্রস্থচ্ছেদ। বীজগণিতের সূত্রগুলো নামতা ভেবে গিলে খেত। ঠিক যেমন করে ওর চোখদুটো গিলে খেয়েছিল আমার দুর্বলতা।
ও বাড়ির বারান্দায় দুটো শালিক রোজ গল্প করত। মা একবার তাড়িয়েছিল বলে জায়গা বদল করল।
তারপর কতবার জল এসেছে রাস্তায়, ভেসে গেছে গোটা শহর। তখনও আমি সাঁতার শিখিনি। গলা ডুবে গেলে ভাবতাম ছেলেটা টেনে তুলবে ঠিক।
একবার ভীষণ মেঘ করেছিল। চারদিক ভেসে যাওয়ার আগে খবরে সতর্কবাণী চলছে। আমি যেন কানে তুলে গুঁজে ঝাঁপ দিলাম গঙ্গায়। ভরা জোয়ারে শরীরটা আছড়ে পড়ছে আবর্জনার মত। অথচ কেউ হাত বাড়াচ্ছে না। আমি চিৎকার করছি, ' বাঁচাওওওও…’
সেদিনের পর শালিকদুটোও আর এক হয়নি কোনোদিন। তবে বাবা-মা সাঁতার শিখিয়েছিলেন জোর করে। এখন আবার জল দেখলেই চ্যাম্পিয়ন হতে ইচ্ছে করে।
======০০০======
Sabarna Chatterjee
Shalbagan
Noapara
Barasat
Kol-125
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন