নতুন শুরু
"মালবিকা না?"পিছন থেকে এক ঝলক দেখেই চমকে ওঠেন ড. অভিরূপ সরকার৷হু হু করে পেছন দিকে টানতে থাকে তাঁকে কিছু স্মৃতিরাশি৷
গ্রাম থেকে শহরে অাসা ইস্তক অস্বস্তিতে ছিল অভিরূপ৷এত বড় শহর,এত নামী কলেজ, গোপেশ স্যার না থাকলে তো আসাই হত না এখানে৷ ছোটবেলা থেকেই ডাক্তারি পড়ার শখ অভিরূপের৷ কিন্তু যত বড় হতে লাগলো,দারিদ্রের নিষ্পেষণে ততই স্বপ্নগুলো মলিন হতে থাকলো চোখের সামনে৷ একাদশ শ্র্রেণীতে পড়ার সময় বাবাও মারা গেলেন৷ অভিরূপ তখনই পড়ায় ইতি টেনে দিতে চেয়েছিল৷ কিন্তু গোপেশ স্যার তা করতে দেননি৷ যাবতীয় সাহায্য করে গেছেন অভিরূপদের৷ তারপর ভালো রেজাল্ট করে জয়েন্টে পাশ করে ডাক্তারি পড়ার জন্য কলকাতার নামী কলেজে ভর্তিও হয়েছে৷ থাকার জন্য ও হোস্টেল নয়, গোপেশবাবু ঠিক করে দিয়েছেন ওঁর বন্ধু ভবতোষ উকিলের বাড়ি৷ সেখানেই আলাপ মালবিকার সঙ্গে৷ ভববাবুরই মেয়ে৷ অভিরূপের থেকে বছর দু-তিনেকের ছোট৷ অবসর সময়ে তাকে পড়ানোর ভার পেল অভিরূপ৷ স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষিত, ভদ্র অভিরূপকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলে মালবিকা৷ যদিও বলছি-বলবো করেও বলা হয়ে ওঠে না কোনদিনই৷ শেষে যেদিন ও খবর পেল, ইন্টার্নশিপ পেয়ে অভিরূপ লন্ডনে যাচ্ছে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য, সেদিন সাহস করে বলেই ফেললো কথাটা৷ সব শুনে অভিরূপ শুধু বলেছিল—"তা হয় না, মালবিকা৷ তোমাদের কাছে আমি ঋণী৷কিন্তু সে ঋণ আমি আর বাড়াতে চাইনা৷" কোন কথা না বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল মালবিকা৷ দিন কয়েকের মধ্যে অভিরূপও উড়ে যান লন্ডনে৷
কিন্তু এর মধ্যেই প্রজাপতি অভিরূপের মনেও রং ছড়াতে শুরু করেছে৷ মালবিকার প্রতি একটা অদ্ভূত আকর্ষণ অনুভব করছে সে৷ আবার ওকে এক কথায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অপরাধবোধও কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে৷ এরই মধ্যে সে খবর পেল মালবিকা এখন পরিণীতা৷ টেলিগ্রামের কাগজটাকে দুমড়ে টেবিলে ছুঁড়ে ফেলেছিল অভিরূপ এক মুহূর্তেই৷
এরপর কেটে গেছে বেশ কিছু বছর৷ লন্ডনে কিছুকাল প্র্যাকটিস করে সে ফিরে এসেছে কলকাতায়৷ নিউরো-সার্জেন হিসেবে যথেষ্ট নাম-ডাক তার৷ কিন্তু তবু কীসের যেন যন্ত্রণা এখনও দগ্ধ করে অবিবাহিত ড. অভিরূপ সরকারকে৷ হঠাৎ একদিন খবর পেলেন পাভলভ মানসিক হাসপাতালের এক পেসেন্ট নাকি পড়ে গিয়ে ভয়ানক ব্রেন-ইনজুরি বাঁধিয়ে বসেছেন৷ তিনি একবার অবশ্যই যেন পেসেন্টটিকে অ্যাটেন্ড করেন৷ আর তাই আজ তিনি পাভলভে৷
—"কী হল,স্যার?"
—"হুম,না,কিছু না৷ চলো, পেসেন্টটাকে সুস্থ করতেই হবে"
ড. অভিরূপ সরকার নতুন উৎসাহে এগোলেন সামনের দিকে, যেন আবার এক নতুন শুরুর উদ্দেশ্যে৷
==================================================================================
নির্মলেন্দু কুণ্ডু
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন