আকস্মিক
গ্রামের আকাশ দেখিনি বহুদিন । শৈশবে তার ছিঁড়ে যেতে পাড়ি জমিয়েছি শহরের পথে। নিজেকে যান্ত্রিক করে তুলতে মুঠো মুঠো রক্ত তুলেছি হাতে। আজ ফিরে আসার ইচ্ছে জাপটে ধরল। নববর্ষের সকালে পা তুলে পাড়ি দিলাম আমার আজন্ম মৃত্যুঋণ যে গ্রামে, সেই গ্রামের পথে। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ বহুদিন হাতছানি দিয়েছে।সেই ডাকে আজ সাড়া দেওয়ার পালা।
গ্রামে প্রবেশ করতেই এক অদ্ভুত মাদকতা আমায় ঘিরে ধরল। অন্যান্য দিনগুলোর মতোই নববর্ষের দিন ও নিরুদ্বিগ্ন ভাবে পান করছে গ্রামবাসীরা। এ আর কী এমন দিন? সেই তো কর্ম করলে ফল পাব। কাজে না বেরোলে নববর্ষ কী আর বেঁচে থাকাটাই বা কী? পুরোনো পাড়ায় একবার পাড়ি লাগাই।
গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে তৃষা। কোলে একটি ছোট্ট শিশু । তৃষা শিশুটিকে আদর করে করে খাওয়াচ্ছে ।
বুকের ভেতরটা ছলাৎ করে উঠল। কোথাও যেন একটা চাপা কষ্ট আমার গলায় বসে রইল। তৃষা আমায় দেখতে পেয়েও দেখল না। ওরও কী মনের ভেতর এতটাই কষ্ট হচ্ছে । হলেও হতে পারতো এ আমার সন্তান । কিন্তু সবই কি আমার দোষ ছিল? তৃষাও তো নিজের জেদ বজায় রাখতে আমার সাথে আর দেখা করেনি।
আচ্ছা তৃষা কী সুখী হয়েছে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে ।
এই আমি কি সুখী হয়েছি? যদি সুখী হই তাহলে মানালিকে জড়িয়ে ধরলে একটা চেনা গন্ধ এসে আমায় কেন আছাড় মারে? কেন ওর ঠোঁটে ডুবে যাওয়ার আগে তৃষার ভালোবাসা মনে পড়ে।
তৃষাও কি আমায় ভুলতে পেরেছে? জানতে ইচ্ছে করছে খুব । কিন্তু আর কোনদিনও জানা হবে না হয়তো...
আজও আমি স্বপ্ন-সন্ধানী...
=====০০০=====
মৌলিমা প্রামাণিক
ঝাড়গ্রাম ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন