গুচ্ছ কবিতাঃ জ্যোতির্ময় মুখার্জি
বারাঙ্গনা
এঁদো গলির দুপাশে
পসরা
দামদর হাঁকাহাঁকি
ভিড় ঠেলে রেষারেষি
রসালো টকটকে ডাঁসা
ঠিকঠাক দাম লড়তে
হবে
নইলে ঠকিয়ে দেবে
এমনই বদমাইশ ওরা
হঠাৎ নজরে
খাসা একটা
দাম দর….
এখন সে আমার
পূণ্যে নিয়োজিত
অনাবৃত দেহে ক্ষুধা
চোখে আদিম তৃষ্ণা
নিঃশ্বাসে কামনা
আর প্রশ্বাসে..........
চেনা গন্ধ?
জীবনের প্রথম প্রভাতের
!
(২৫/০৩/২০০৫)
আগন্তুক
মধ্যরাতে তোমার শহরে
হঠাৎ আগন্তুক আমি
আঁচড়ে কিংবা খামচে
কিংবা
হঠাৎ জাপটে তোমার
শরীরে
দাঁত বসিয়েছি আমি
ভালোবাসা আজ পথ-শিশু
তোমার বুকের আঁচল
খসানো রাতে
ভূমিষ্ঠ হলো সে
(২০/০৫/২০১০)
বিবাহিতা
নারীর প্রেমে
বিবাহিতা নারীর প্রেমে
অদ্ভুত এক নিঃসঙ্গতা
থাকে
সমুদ্রের মতো গভীর
নীল রহস্যময়তা
আমাকে কাছে টানে
শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে
নামতে
সাপের কুণ্ডলীটা নেমে
যায়
গভীরে আরও অনেক
গভীরে
যেখানে হলুদ নিঃস্বতা
আছে
(১৬/০৭/২০১৬)
শ্বাপদ
কোন এক মধুপুর
ঝড়ে ভেজা রাত
জেগে ওঠা ভোর
ক্লান্ত পথের মোড়
সে আসছে
সে হেঁটে আসছে
উলঙ্গ রাতের
কালো পথ বেয়ে
সে হেঁটে আসছে
একাকিনী কালো মেয়ে
কাঁটা ঝোপ
ঝোপের আড়ালে ওত
পেতে...
থাবা চাটছে
লালা ঝড়ছে কামনার
সে হেঁটে আসছে
কালো মেয়ে
একাকিনী
চিরন্তনী
(২১/০৫/২০১৬)
অশরীরি - ১
পৃথিবীকে ফুটবল ভ্রমে
খেলছিল চারটে ছেলে
সৌরমন্ডল থেকে ছিনিয়ে
নিয়ে.....
পায়ের জঙ্গলে হাঁপাতে
হাঁপাতে
গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছিল
পৃথিবী
কিন্তু এ কি ?!
চারটে কোণ নেই
তো !
তাহলে ? ভ্রম নয়
বুঝি !
আট কোণের এক
বিরাট গর্ত শুয়ে
আছে
গর্ত বেয়ে গড়িয়ে
গেছে একটা সিঁড়ি
ঠেকেছে আকাশে
আকাশকে পাটাতন করে
হেলে আছে সিঁড়িটা
কালো ছেলেগুলোর পিছনে
সৌরমন্ডলের গায়ে ঠেস
দিয়ে
না না একটু
দূরে
না অনেকটা
ইস্টার দ্বীপের সেই
প্রাগৈতিহাসিক দৈত্যটা হাসছে,
মাথায় বসে একটা
কালো কাক
এ কি ? তুমি
হাসছো ?
ভাবছো পাগল হয়ে
গেছি ?
না না
আচ্ছা,যদি পাগল
হয়ে যাই ? ক্ষতি
কি ?
ক্ষতি আছে
ক্ষতি আছে ?!
হম্ । পাগলের
সাথে
ঘর-সংসার, চাষ-আবাদ
ফসলে যদি পোকা
ধরে ?
হাটে তো বিক্রি
হবে না
তাও ঠিক, কিন্তু
তোমার চোখ দুটো
এত উজ্জ্বল কেন ? আমি তো
তুলি দিয়ে খুঁচিয়ে
খুঁচিয়ে,রঙে রঙে
মুছে ফেলেছিলাম তোমাকে
লাল রঙ আর
কালো
এখনও তুমি হাসছো
?
জলে শরীরটা ডুবিয়ে
নাও একটা ঘূর্ণি
না না অনেক
ঘূর্ণি
জলের ঘূর্ণি
একটার সাথে মিশে
গেছে আরেকটা, আমাকে
টানছে আমার পায়ের
নিচের বালি সরে
যাচ্ছে
মুখ তোলো, উপরে,
না হয় নাই
আর একটু উপরে
হাত বাড়াও -
এ কি ?
কাপড় খুলছো কেন ?
ভিজে গেছে
তাহলে খুলে ফেলো
শরীরের শেষ সুতোটুকু
আমি তো রঙে
রঙে ঢেকে দিয়েছি
তোমার বুক
তোমার যৌনাঙ্গ
তোমার নিরাবরণ শরীরটা
ঢেকে থাকুক আমার
রঙে তারপর আঙুলে
আঙুল ঠেকবে যখন
তীব্র তাপে গলে
গলে পড়বে মাটিতে
সেই আগুনে আলোয়
হেসে উঠলো এক
শিশু
একটা হাত তুলে
আছে উপরে,আঙুল
বাড়িয়ে
আঙুলে আঙুল মেশাবে
বলে
(০৩/০৬/২০১৭)
অশরীরি - ২
দুই মেরু বরাবর
একটা লম্বা দড়ি
টাঙানো
দড়ির উপর আমি
মাথায় কালো হ্যাট্
কালো ঝুল কোট্
কালো শ্যূ
দড়ির নিচেটা কেমন
ঘোলাটে আবছা ধোঁয়া
ধোঁয়া
ভারসাম্য নষ্ট না
করে আমি হেঁটে
যাচ্ছি
আমার হাতে পাল্লা
পাল্লার দুই দাঁড়িতে
ঝুলে আছ খুবলে
নেওয়া একটা হৃৎপিণ্ড
আর ছিঁড়ে ফেলা
একটা ঘিলু
তুমি কি আমার
পিছনে আসবে?
না আমি তোমার
পিছনে হাঁটবো?
না না
তার চেয়ে ভালো
দুজনে
হাঁটি একসাথে
একসাথে?
হ্যাঁ, কেন?
অসুবিধা আছে?
না, তা ঠিক
নয়
আসলে একসাথে চলতে
চলতে যদি পায়ে
পায়ে জড়াজড়ি লেগে
যায়?
তাও ঠিক,
আচ্ছা
পথ শেষ হয়ে
গেলে কি হবে?
তখন তো চারটে
পা পাশাপাশি.... তখন?
তখন শরীরে শরীর
জড়িয়ে শুয়ে থাকবো
ভিজে বালিতে শান্তিতে
ও শ্রান্তিতে
তুমি তোমার নিরাবরণ
শরীরটা একটু হেলিয়ে
পা দুটো তুলে
দাও
তৃতীয়ার চাঁদের ফালিতে
হাত দুটো থাকবে
ঠিক ঘাড়ের উপর
মাথার পিছনে উত্তুঙ্গ
বুকে হাওয়া খেলুক
আমি ভিজে বালিতে
শরীর ডুবিয়ে
পুরো শরীরটা নয়
ডুবতে ডুবতে থেমে
গেছে ঠিক নাকের
একটু আগে বালি
খুঁড়ে আমার হৃৎপিণ্ডের
ধুকপুকানি তুমি শুনতে
পাবে কিনা আমি
জানিনা
তবে আমার মাথায়
লাগানো লোহার আংটা
ঘিলু ফুঁড়ে ঢুকে
গেছে যেটা অনেক
ভিতরে
আংটায় তিনটে শিকল
শিকলে আটকে তিনটে
সাদা পায়রা ছটফট
করছে
তাদের ছটফটানি তুমি
ঠিক শুনতে পাবে
বাতাসে ভর করে
তোমার বুক ছুঁয়ে
গলে গলে পড়বে
তোমার নাভিতে
আচ্ছা, বাতাসের কি
কান আছে?
দেওয়ালের মতো !
জানিনা তো
জানো না ?!
কি অদ্ভুত ! তাই
না ?
দেওয়ালেরও কান আছে
বাতাসেরও
তবু তোমার আর
আমার মাঝের দেওয়াল
ফুঁড়ে পৌঁছায়না কোনও
শব্দ
আচ্ছা, তোমার আর
আমার মাঝে কি
কোনও
বাতাস নেই?
অ্যারিজোনার সেই দৈত্যাকার
ক্যাকটাসগুলোর সাথেও নাকি
ভিন গ্রহের যোগাযোগ
ছিল একদিন
আজও কি আছে ?
না কার্বনে ঢাকা
পড়ে গেছে ?
(০৫/০৬/২০১৭)
অশরীরি - ৩
একটা সাদা মেয়ে
সাদা নয় একটু
হলদেটে সাদা গাউন
গাউন থেকে টকটকে
লাল কাপড় গড়িয়ে
পড়ছে নিচে অনেক
নিচে
বুদবুদ, কালো জল
ফুটছে
কুচকুচে কালো নয়
লালচে কালো
রক্ত জমাট বেঁধে
শুকিয়ে গেলে
বা গলে গেলে
যেমন রং হয়
আর এক তীব্র
গা ঘিনঘিনে গন্ধ
মর্গের কাঁচের দরজাটা
খুললে
যে গন্ধটা আছড়ে
পড়ে
গা গুলিয়ে ওঠে
ঠিক তেমন
কিছু মানুষ গলা
পর্যন্ত ডুবিয়ে হাসছে
চুল নাই তাদের
ভ্রু নাই
কি আশ্চর্য্য!
চামড়া মাংস কিছুই
নাই
একসারি সাদা দাঁত
আর জ্বলজ্বলে দুই
চোখ
একটা ঘূর্ণি
একটা হলদে আলোর
ঘূর্ণি
ঘামে ভেজা হিলহিলে
শরীরটা নাচছে
অনবরত ঘুরে ঘুরে
অন্ধকার স্টেজ
শুধু হলুদ আলোর
ঘূর্ণিটার উপর
সার্চলাইটের আলো
চিকচিক করছে ঘামে
ভেজা মুখ
ভেজা গাউন ফুঁড়ে
ফুটে উঠছে
পিথাগেরাসের উপপাদ্য
পিছনে অন্ধকারে চিকচিক
করছে দুটো চোখ
কার চোখ?
আচ্ছা
তুমি কি নাচছিলে
সেদিন?
হম্
ইস্ দেখেছো
আমি চিনতেই পারিনি
জানি পারবে না
কেন? আমরা এতো.............
তবু তুমি পারবে
না
দূর্, ছাড়ো ওসব
কথা
আচ্ছা বলো তো
তুমি ওভাবে নাচছিলে
কেন?
আমার দর্শকদের জন্য
দর্শক! ধ্যুস্,
ওগুলো দর্শক?
নামানুষ কিছু কাটা
মাথা
সেজন্যই তো..........
শরীর থাকলে হয়তো
চায়তো অনেক শরীর
শরীরে পেতাম অন্য
নারী মাংসের গন্ধ
গা গুলিয়ে উঠতো
নাচ থেমে যেতো
আমার
এ কি!?
তোমার শরীরটা নীল
হয়ে যাচ্ছে কেন?
স্প্রিংয়ের মতো পেঁচিয়ে
পেঁচিয়ে
বৃত্তগুলো ক্রমাগত ছোট
হয়ে আসছে
নীল আকাশ চুঁয়ে
চুঁয়ে পড়ছে তোমার
হলদে গাউন থেকে
আর কিছু সাদা
মেঘ হেঁটে যাচ্ছে
তোমার গাউনের চড়াই-উৎড়াই ভেঙ্গে
গাউনের শেষে ভাসমান
একটা মাঠ
সবুজ ঘাসের উপর
কয়েকটা ঘোড়া ঘাস
খাচ্ছে আর ঘাড়
ঘুড়িয়ে দেখছে আমাকে
ওদের ঘোলাটে চোখে
জলের টান
ওরা ঘুরে ঘুরে
কথা কয়
ওদের জলের ভাষায়
কার ঘোড়া ওগুলো?
মহীনের?
(০৬/০৬/২০১৭)
---------------০০০০০০-----------
জ্যোতির্ময় মুখার্জি
কবিতার মতো বাস্তব সুরের লেখা...দারুণ !
উত্তরমুছুন