নারীমর্যাদা ও অধিকার
হিমাদ্রি শেখর দাস
নারীর মর্যাদা বলতে বোঝায় নারীর সম্মান, অধিকার, এবং তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এটি সমাজে নারীর অবস্থান এবং তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। নারীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং তাদের অধিকার গুলি সুরক্ষিত থাকে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই শ্রেণি সংগ্রাম শুরু হয়েছিল অনেক আগে। একদিকে শ্রেণী বৈষম্য অপরদিকে নারী পুরুষের বৈষম্য এই দুটি ছিল শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অন্যতম দুটি মূল ভিত। নারীর অধিকারহীনতা বা দাসত্ব শুরু হয় পরিবার ও সম্পত্তির উদ্ভাবনের ফলে। বহু যুগ ধরে নারী সমাজকে পারিবারিক ও সামাজিক দাসত্বের বোঝা বহন করতে হয়েছে বিনা প্রতিবাদে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে - দাস সমাজব্যবস্থা এবং সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষ ও পরিবারের অধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। সামাজিক উৎপাদনের কাজে নারীদের বঞ্চিত রেখেই তাদের পরাধীন জীবন যাপনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
নারীর অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা হয় ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে। নতুন করে নারীদের সামাজিক উৎপাদনের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পারিবারিক সামাজিক নিষেধের গণ্ডী উপেক্ষা করে নারী সমাজকে বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। যদিও নারীদের শ্রমের বাজারে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য ছিল সস্তা শ্রম। এ সত্ত্বেও পরিবারের দাসত্ব থেকে অনেক নারীই নিজেকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। সামন্ততান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন নারী পুরুষের উন্নততর সম্পর্কের সূচনা করেছিল।
নারীদের অধিকার অর্জনের দাবীতে ১৬৬২ সালে মার্গারেট লুকাস নামে একজন ওলন্দাজ মহিলা 'ফিমেল ওরেশনস' নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এটি নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়ে প্রথম লিখিত তথ্য হিসাবে স্বীকৃত। বিশ্বের নারী জাগরণের ইতিহাসে নারীর অধিকারের এই দলিলে শুধুমাত্র সামাজিক অবর্ণনীয় দুর্দশা বা বৈষম্যের কথাই উচ্চারিত হয়েছিল।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে জনগণের অংশগ্রহণের বিশেষ করে নারীদের কোন সুযোগ তখন ছিল না।
অষ্টাদশ শতকের শেষলগ্নে ইউরোপে নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলি আলোচনায় ক্রমশ উঠে আসতে থাকে। এ বিষয়ে ফরাসী বিপ্লবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৭৮৯ সালের অক্টোবর মাসেই নারীরা জাতীয় পরিষদ (National Assembly) এর কাছে আবেদন করে, "নারী পুরুষের সমান অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য, নারীদের শ্রম ও কাজের জন্য, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মে নিয়োগের জন্য। কিন্তু ১৭৮৯ সালে 'সংবিধান সভা' যখন মানুষের অধিকার (Declartion of the Right of Men and Citizen) ঘোষণা করেছিল, নারীদের মধ্যে যাদের জ্ঞান বুদ্ধি ছিল তারা বুঝল যে ওর মধ্যে নারীর অধিকারের কথা নেই। তাই মাদাম অলিম্বে ডিগিজো (Olymbe Degouges) দাবী করলেন, 'নারীদের ফাঁসিকাঠে উঠবার অধিকার যদি থাকে তবে মঞ্চে উঠবার অধিকার নিশ্চয়ই আছে।' এই প্রতিবাদী নারী মাদাম ডিগিজোকে পরবর্তীকালে ফরাসী সরকার গিলেটিনে মৃত্যুদণ্ড দেয়। একইভাবে সম্রাট নেপোলিয়ন যখন ম্যাডাম কলডোর সেটকে বলেছিলেন, "নারীরা রাজনীতির সাথে যুক্ত হোক আমি তো মোটেই চাই না।" প্রত্যুত্তরে মাদাম বলেছিলেন, "সেনাপতি, আপনি ঠিক, কিন্তু যে দেশে নারীদের শিরোচ্ছেদ করার প্রথা প্রচলিত আছে, স্বাভাবিকভাবেই নারীরা এর কারণ জানতে চাইতে পারেন, জিজ্ঞাসার অধিকার তাদের আছে।" এই জিজ্ঞাসার সূত্র ধরেই নারীরা তাদের অধিকার বিস্তারের আন্দোলনে সামিল হয়েছে। সমাজ পরিবর্তনের পথে নিজেদের সংগ্রামকে ব্যাপ্ত করেছে। ফরাসী বিপ্লবের পর সম-স্বাধীনতা প্রত্যাশী নারীসমাজ ১৭৯১ খ্রীঃ Declaration of the Right of Women and Citizen সনদটি প্রকাশ করে। এর মধ্য দিয়েই সমাজে তাদের সম অবস্থানের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে। এই বিকল্প সনদটি পেশ করতে হয়েছিল তার কারণ ১৭৮৯ সালের Declaration of Rights of Men and Citizen এ নারীদের অধিকার কার্যাতঃ স্বীকৃত হয়নি। আর এই দাবি তোলার ফলে মাদাম ডিগিজো, এলাপাম প্রমুখ নারীকে অকথ্য অত্যাচার, এমনকি মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল।
১৭৯২ সালে ব্রিটেনের মেয়ে মেরী ওলস্টোনক্রাফট মেয়েদের অধিকারের সমর্থনে একটি বই লেখেন- যার নাম A Vindication of the Rights of Women। মেরি নারীশিক্ষার বিষয়ে সোচ্চার হলেন। একই সঙ্গে মেয়েদের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাও বললেন। ইংল্যান্ডের চার্টিস্ট আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণী তাদের দাবি নিয়ে সংগ্রাম করলেও নেতৃত্ব মূলতঃ থেকে যায় পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর হাতে। তার ফলে নারী-শ্রমিকদের মজুরী, কাজের ঘন্টা স্থায়ীকরণ, কর্মসংকোচন রদ প্রভৃতি বিষয়গুলি উপেক্ষিতই থেকে যায়। ১৮৫১ সালে হ্যারিয়েট টেইলর মিল (Harriet Taylor Mill) লিখলেন On the Enfracisement of Women, এতে তিনি নারী
মহিলাদের প্রতি যে কোনোরূপে যে- কোনো ধরনের বৈষম্য নির্মূল করা, মহিলাদের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহিলাদের সমান অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান, নাগরিক ও রাজনৈতিক জীবনে মহিলাদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সামাজিক জীবনে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, জাতীয়তা পরিবর্তন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য নিরোধ, বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য নির্মূর্ল ও গ্রামীণ মহিলাদের সমস্যা দূরীকরণের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনগতভাবে মহিলাদের সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ, বিবাহসহ পারিবারিক জীবনে মহিলাদের সমান অধিকার প্রদান।
প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলনে গৃহীত বিশ্বকর্ম পরিকল্পনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার লক্ষ্যে 1980 সালে কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কোপেনহেগেন সম্মেলনের মূল প্রস্তাবসমূহ নিম্নরূপঃ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নারী দশকের লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ে সকল উন্নয়ন, কর্মসূচী ও প্রকল্পে নারীর স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।
উন্নয়নে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথার্থ প্রশাসন যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নারীর স্বার্থ রক্ষার জন্য দাতা এবং গ্রহীতা, দেশগুলো যাতে সতর্ক দৃষ্টি রাখে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে অর্থসাহায্য বৃদ্ধিসহ সমস্ত সুবিধা দিয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সমতা আনতে হবে।
তথ্য, শিক্ষা এবং আত্ম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় উপায় যোগানের মাধ্যমে পরিবারকে আয়তন নির্ধারণ করার অধিকার দিতে হবে।
নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নারীদশকের শেষ প্রান্তে তৃতীয় নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নাইরোবিতে (১৯৮৫)। এই সম্মেলনে ২০০০ সাল নাগাদ নারী উন্নয়নের জন্য নাইরোবি অগ্রমুখী কৌশলসমূহ গৃহীত হয়। এতে লিঙ্গীয় সমতা, নারীর ক্ষমতা, মজুরি বিহীন কাজের স্বীকৃতি, মজুরিযুক্ত কাজের অগ্রগতি, নারীর জন্য স্বাস্থসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা, উন্নত শিক্ষার সুযোগ
এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। এই সম্মেলনে বিশেষ বিবেচ্য বিষয়ের মধ্যে ১৪টি অবহেলিত গ্রুপ চিহ্নিত করা হয়েছিল যেমন (১) খরায় আক্রান্ত নারী, (২) শহরের দরিদ্র নারী, (৩) বৃদ্ধ নারী, (৪) যুবতী নারী, (৫) অপমানিত (Abused) নারী, (৬) দুঃস্থ নারী, (৭) পাচার এবং অনিচ্ছাকৃত পতিতাবৃত্তির শিকার নারী, (৮) জীবিকা অর্জনের সনাতন উপায় থেকে বঞ্চিত নারী, (৯) পরিবারের একক উপার্জনশীল নারী, (১০) শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম নারী, (১১) বিনা বিচারে আটক নারী, (১২) অভিবাসী নারী (১৩)শরণার্থী এবং স্থানচ্যুত নারী ও শিশু এবং (১৪) সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নারী।
নারীর অগ্রগতির পথে বাধাসমূহ দূর করার সুস্পষ্ট পক্ষযোগের কথা নাইরোবি অগ্রমুখী কৌশলে বর্ণিত আছে যার সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৮৬-২০০০ সাল পর্যন্ত।
নারী-অধিকার নিয়ে আলোচনা ও অধিকার বাস্তবায়ন পর্যালোচনাকে ভিত্তি করে এমাবৎ অনুষ্ঠিত বিশ্ব ফোরামের মধ্যে বেজিং-এ অনুষ্ঠিত (সেপ্টেম্বর ১৯৯৫) চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন (Fourth World Conference of Women) সর্ববৃহৎ ও সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রায় ৩০ হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন এ সম্মেলনে। মোট ৩৬২ টি আলোচ্যসূচির ওপর গ্রহণ করা হয় পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত।
বেজিং বিশ্ব-নারী সম্মেলনে বর্তমান বিশ্বে নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে শনাক্তকৃত 'উদ্বেগের আশঙ্কাজনক ক্ষেত্রসমূহ' (Critical areas of concern) নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। এই পটভূমি ও পরিপ্রেক্ষিতে আগামী শতাব্দীর নারীর অগ্রগতির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে করণীয় সমূহও নির্ধারণ করা হয়।
বেজিং চতুর্থ নারী সম্মেলনের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় হলো:
বর্তমান সময়ে নারী-অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান ১২ টি প্রতিবন্ধকতা বা সংকটের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ।
এর প্রতিকারে কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশমালা প্রণয়ন।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন (International Women's Day 2025) এর মূল সিদ্ধান্ত হলো, "ত্বরান্বিত কর্ম" (Accelerate Action)। এই থিমটি বিশ্বব্যাপী নারীদের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল, সম্পদ এবং উদ্যোগগুলিকে চিহ্নিত করে এবং তাদের এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করে। এটি নারী অধিকার ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ.
উদ্বেগের আশঙ্কাজনক ক্ষেত্র হিসেবে যে ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, তা ঘিরেই আবর্তিত বর্তমান বিশ্বের নারীজীবনের সংকট।যেমন
দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,অর্থনৈতিক বৈষম্য, সন্ত্রাস/ নির্যাতন,ক্ষমতা বণ্টন, যুদ্ধ ও অন্যান্য সংঘর্ষ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান,মানবাধিকার , গণমাধ্যম, পরিবেশ ও উন্নয়ন এবং কন্যা-শিশু।
নারী অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় কিছু কর্মসূচি -
২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এমন জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ হ্রাস করতে হবে- এ লক্ষ্যে নারীদের জন্য উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করতে হবে;
দরিদ্র নারীদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
সম্পত্তির আইনগত মালিকানা, ঋণ গ্রহণ ও অন্যান্য সেবার ব্যাপারে নারীকে সমান
সুযোগ দিতে হবে;
শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য রদ করতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রবেশে বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে:
পাঠ্যক্রম ও পাঠ গ্রন্থ থেকে নারীবিদ্বেষী উপাদান বাদ দিতে হবে:
শিশুমৃত্যু ও গর্ভধারণ-সম্পর্কিত মৃত্যু অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে;
প্রজনন-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করতে হবে;
মহিলাদের মধ্যে এইডস ও এইচ.আই.ভি. সংক্রমণ রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে:
নারী-নির্যাতনের মূল উৎস সন্ধান (ব্যাপক গবেষণাসহ) করতে হবে ব্যাপকতর ভিত্তিতে এবং নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এর মূল উৎপাটন করতে হবে;
নারী-নির্যাতন বন্ধে আইনগত ও সামাজিক ব্যবস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে:
নারী-পাচার বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে;
সমান কাজের জন্য নারী-পুরুষের সমান মজুরির ব্যবস্থা করতে হবে;
কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যে- কোনো অপমানজনক আচরণ রোধ করতে হবে;
নারীদের জন্য ঋণদানের বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ এবং তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে:
নারীদেরকে প্রযুক্তি, বাজার ও বাণিজ্যে সমান সুযোগ দিতে হবে:
নারীদের জন্য অস্থায়ী সময় ভিত্তিক কাজের ব্যবস্থা করতে হবে;
তথ্য গণমাধ্যম ক্ষেত্রে নারীরা যাতে প্রবেশের সমান সুযোগ ও অধিকার পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে;
পণ দেওয়া দেওয়া একটা পারিবারিক সামাজিক ব্যাপারই থেকে যাচ্ছে। একমাত্র মেয়েটির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তবেই পথের জেরে তা হল কিনা তা দেখার দায় প্রশাসনের ওপর বর্তাচ্ছে। ৪৯৯ (ক) ধারাটিও একটা চূড়ান্ত অবস্থাকেই ধার নেয়, মেয়েটি যখন অভিযোগ করতে আসে তখন থানার আধিকারিকরা বারবার এটাই যাচাই করার চেষ্টা করেন যে সে অবস্থা এসেছে কিনা। কারণ অভিযুক্তকে গ্রেন্তার করা মানেই পরিবারের একান্তে প্রশাসনের অনুপ্রবেশ। একবার তা করলে মেয়েটির আশ্রয়ের প্রশ্নও এসে যায়। সে দায় প্রশাসনও নিতে চায় না, তার সাধ্যও নেই। মূল সমস্যায় পৌঁছতে পারছে না বলেই এবং পরিবারের মধ্যে মেয়েদের অবমূল্যায়ণকে একটা ভাবগত্য বলে মেনে নিতে হচ্ছে বলেই এই আইনগুলির প্রয়োগও খুবই সীমিত।
আমাদের পারিবারিক আইনগুলির মধ্যে একজন নারীকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে। তা তিনি একজন ব্যক্তি এই ধারণার ভিত্তিতে নয়, পরিবারের প্রধানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভিত্তিতে। অর্থাৎ তিনি একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন কন্যা এই হিসেবেই পারিবারিক কতকগুলি অধিকার তিনি পেয়ে থাকেন। আইনের যে ধারাগুলির কথা বলা হল, তাই এই মূল চিন্তাটিকে অদ্ভুত রেখে ঐ কাঠামোর মধ্যে অত্যাচারের বাড়াবাড়িকে একটা সীমানায় বেঁধে দিতে চায়। সঠিকভাবেই বলা যায় যে, সমাজের একপেশেমির প্রতিফলন ঘটে এই আইনগুলিতে। নারীর অস্মিতা (Sabjovavity) আইনের মধ্যে তখনই রূপ নিতে পারে, যখন তা পরিবারে বা সমাজে স্বীকৃত সত্য। যখন শুধু সে মাতা, স্ত্রী বা কন্যা হিসাবে চিহ্নিত হবে না, পরিবারের অন্যদের সে তার পিতা, স্বামী বা পুত্র বলে পরিচয় দিতে পারতে, কেবল তখনই পরিবারের বৃত্তে তার অস্মিতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী:-
১। ডা চিত্ত মন্ডল, নারী নির্যাতন নারী আন্দোলন, নবজাতক প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬
২। নারী ও মানবাধিকার- রিনা পাল
৩. তোফাজ্জল হোসেন, জাতিসংঘ, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা,২০০৭।
৪. শ্যামলী গুপ্ত ও অনুশীলা দাশগুপ্ত রাজনীতি ও সাহিত্য শিল্পের অঙ্গনে নারী, এন.ই. পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০০৭।
৫. কান্তি বিশ্বাস, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভারতের নারীসমাজ অতীত ও বর্তমান, দেশহিতৈষী, শারদ সংখ্যা, ২০১১।
৬. শেফালী মৈত্র, নৈতিকতা ও নারীবাদ, নিউ এজ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০১।
৭. শ্যামলী গুপ্ত, নারী আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৭।
-----o-----------
No comments:
Post a Comment